Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Accidents

জাতীয় সড়কে প্রাণহানি চলছেই

রাস্তার ধারে যেখানে-সেখানে ট্রাক দাঁড় করানোর নিয়ম নেই। কিন্তু সেই ‘বেনিয়ম’ হয়েই চলেছে। দেখার কেউ নেই!

মর্মান্তিক: ট্রাকের তলায় ঢুকে গিয়েছিল গাড়ি। শুক্রবার দাদপুরে। ছবি: তাপস ঘোষ

মর্মান্তিক: ট্রাকের তলায় ঢুকে গিয়েছিল গাড়ি। শুক্রবার দাদপুরে। ছবি: তাপস ঘোষ

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:২৮
Share: Save:

ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটার গতিবেগ নির্ধারিত দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে। কিন্তু বেশির ভাগই গাড়িই চলে তার বেশি গতিতে। দে্খার কেউ নেই! মোটা টাকা ‘টোল’ দিয়ে এ রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এই বর্ষায় রাস্তা জুড়ে কয়েক হাত অন্তর বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। দেখার কেউ নেই!

রাস্তার ধারে যেখানে-সেখানে ট্রাক দাঁড় করানোর নিয়ম নেই। কিন্তু সেই ‘বেনিয়ম’ হয়েই চলেছে। দেখার কেউ নেই! দীর্ঘদিন ধরেই ওই জাতীয় সড়ক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বহু মানুষ হতাহত হচ্ছেন। শুক্রবার ভোরেই দাদপুরের কাছে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার দেবশ্রী চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর গাড়ির চালক ও দেহরক্ষীর। গাড়ির রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বালিবোঝাই ট্রাকে ধাক্কা মারে। এরপরেও ‘বেনিয়ম’ রুখতে পুলিশ প্রশাসনের টনক নড়বে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। স্থানীয় বাসিন্দারা তো বটেই, বহু গাড়ি-চালকেরও অভিজ্ঞতা বলছে, বড় দুর্ঘটনার পরে কিছুদিন পথ নিরপত্তায় পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা চোখে পড়ে। তারপরে যে কে সেই! উত্তরপাড়া কোতরংয়ের বাসিন্দা বিজন দাস ব্যবসার কাজে প্রায়ই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে পানাগড়ে যান। তিনি বলেন, ‘‘এখন রাস্তা ভরেছে গর্তে। অন্যদিকে পাশে ট্রাকের সারি। আমরা কেন টাকা দিয়েও যাতায়াতের সময় ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকু পাব না?’’

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, গর্ত মেরামতির কাজ চলছে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প অধিকর্তা স্বপনকুমার মল্লিক বলেন, ‘‘যখন এই রাস্তায় গাড়ি চলাচল শুরু হয়, তার চেয়ে এখন অনেক গুণ গাড়ি বেড়েছে। সেই কারণে আমরা পানাগড় পর্যন্ত আরও ১৯টি লে-বাই (ট্রাক দাঁড় করানোর জায়গা) তৈরি করার ভাবনাচিন্তা করেছি। আমাদের আশা তা হলে আর এই পরিস্থিতি তৈরি হবে না। পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠকে আমরা পথ নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বলি। এ নিয়ে কর্মশালা জরুরি।’’

দাদপুরে এ দিনের দুর্ঘটনার পরেও সিঙ্গুর ও ডানকুনিতে রাস্তার পাশে সার সার ট্রাক চোখে পড়েছে। ডানকুনিতেই যানজট ও রাস্তা জুড়ে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকার সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘কলকাতায় ট্রাক ঢোকার নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। ভিন্ রাজ্যের বহু ট্রাক সেই সময়ের আগে চলে আসে ডানকুনিতে। চণ্ডীতলার কাপাসহাড়িয়ার লে-বাইয়ে অত ট্রাক ঢোকে না। বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়। পুলিশ সতর্ক থাকলেও অপরিসর জায়গায় সেই চেষ্টা খুব একটা কাজে আসে না।’’ ওই রাস্তায় নজরদারি চালাতে একসময় কিছুদূর অন্তর একটি করে ওয়াচ-টাওয়ার করেছিল পুলিশ। এখন টাওয়ারগুলিতে পুলিশের উপস্থিতি সে ভাবে মেলে না বলে অভিযোগ। ফলে, বাড়তি গতিতে চলা গাড়িকে কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সে প্রশ্নেরও উত্তর মিলছে না। এ দিন দুর্ঘটনাগ্রস্ত দেবশ্রীর গাড়িটিও প্রবল গতিতে আসছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। বিজেপির অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকদের সেলের আহ্বায়ক দেবকুমার মুখোপাধ্যায় এ দিনের দুর্ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘দেবশ্রীকে অন্যায় ভাবে বদলি করা হয়েছিল। এটি দুর্ঘটনা, নাকি পিছনে কোনও রহস্য রয়েছে, তা জানতে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accidents Durgapur Expressway
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE