Advertisement
০৩ মে ২০২৪

নার্সিংহোম নয়, যেন হোটেল বলছেন রোগীরা

আচমকা রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল বছর তেইশের এক যুবকের। উলুবেড়িয়া শহরের এক চিকিৎসকের কাছে যেতেই তাঁকে ভর্তি করিয়ে দিলেন এলাকার নার্সিংহোমে। ভালো বিছানা, মিলত দু’বেলা খাওয়ার।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৩
Share: Save:

চিত্র ১: আচমকা রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল বছর তেইশের এক যুবকের। উলুবেড়িয়া শহরের এক চিকিৎসকের কাছে যেতেই তাঁকে ভর্তি করিয়ে দিলেন এলাকার নার্সিংহোমে। ভালো বিছানা, মিলত দু’বেলা খাওয়ার।

কিন্তু চিকিৎসা? এক বার ইসিজি হয়েছিল। তবে তার রিপোর্ট মে‌লেনি। ওই নার্সিংহোমে তাঁকে দু’দিন থাকতে হয়েছিল। কিন্তু কোনও চিকিৎসক তাঁকে দেখেননি। কারণ, যে চিকিসক তাঁকে ভর্তি করিয়েছিলেন তিনি ছুটিতে চলে গিয়েছিলেন। ফিরলেন দু’দিন পরে। ততক্ষণে বিরক্ত হয়ে যুবকটি নার্সিংহোম থেকে বাড়ি চলে এসেছেন। আসার সময় নার্সিংহোমের তরফে তাঁর কাছ থেকে নেওয়া হল থাকা, খাওয়ার ভাড়া।

চিত্র ২: বেশ কিছুদিন আগে শৌচাগারে পড়ে কোমরে আঘাত পেয়েছিলেন এক ব্যক্তি। উলুবেড়িয়ার একটি নার্সিংহোমে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। তিনদিন পরে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু বাড়ি ফেরার দু’দিনের মধ্যে তাঁর শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। ওই নার্সিংহোমের প্রতি আর ভরসা রাখতে না পেরে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে এনে ওই ব্যক্তিকে ভর্তি করালেন তাঁর আত্মীয়রা। প্রায় এক সপ্তাহ আইসিসিইউ-তে রেখে ওই ব্যক্তির চিকিৎসা হয়। মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের বক্তব্য, অস্ত্রোপচারের পরে যে ধরণের ব্যবস্থা নেওয়ার প্রযোজন ছিল, তা নার্সিংহোমের তরফে না করেই ওই ব্যক্তিকে ছুটি দেওয়া হয়েছিল। ফলেই এই বিপত্তি।

উপরে যে দু’টি উদাহরণ দেওয়া হল তা ঘটেছে শহরের নামিদামী বলে পরিচিত দু’টি নার্সিংহোমে। ওটি রোড এবং স্টেশন রোডের দুই দিকে চোখ রাখলেই দেখা যাবে, গত কুড়ি বছরে উলুবেড়িয়া শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বহু নার্সিংহোম। দু’একটি বাদ দিলে বেশিরভাগ নার্সিংহোমেই চিকিৎসার নামে রোগীদের পকেট কাটা চলে বলে অভিযোগ। তাঁদের ক্ষোভ, এমনিতেই নার্সিংহোমের পরিবেশ ঘিঞ্জি। খাতায় কলমে একজন রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা। বাস্তবে অস্তিত্ব মেলে না বেশিরভাগ নার্সিংহোমে। লিফ্‌ট থাকলেও রোগীর পরিবারের লোকজনকে তা ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। অধিকাংশ নার্সিংহোমে নেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স। রোগী এবং তাঁদের পরিজনদের অভিযোগ, এই সব নার্সিংহোমে রোগী আনার জন্য দালালচক্র তো রয়েছে, শহরের চিকিৎসকদের একটি অংশও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

প্রশ্ন উঠছে, ওই নার্সিংহোমগুলি কি স্বাস্থ্য দফতরের শর্ত মেনে চলছে? মালিকদের দাবি, প্রতিটি নার্সিংহোম লাইসেন্সপ্রাপ্ত। স্বাস্থ্য দফতরের শর্ত মেনেই পরিষেবা দেওয়া হয়। কী বলছে স্বাস্থ্য দফতর?

হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘আমরা যখন পরিদর্শন করতে যাই তখন সব ঠিকঠাক থাকে। পরে ফের চিকিৎসা পরিষেবা, পরিকাঠামো নিয়ে নানা অভিযোগ আসে আমাদের কাছে। তাই মাঝেমধ্যে আচমকা হানাও দেওয়া হয়। তাতে একাধিক নার্সিংহোমকে নানা গাফিলতির জন্য শো-কজও করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nursing Home Hotel Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE