Advertisement
E-Paper

সন্তান-সহ চার শিশু খুনের আসামীর ফাঁসির আদেশ

মঙ্গলবার বেলা ১২টা। কোর্ট লকআপ থেকে কড়া প্রহরায় তাকে যখন উলুবেড়িয়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারকের এজলাসে আনা হয় তখনও তার মুখে আত্মবিশ্বাসের ছাপ। পরনে লাল সবুজ রঙের টি শার্ট, জিনসের প্যান্ট। পায়ে বাহারি জুতো।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৬ ০১:৫৭
সাজাপ্রাপ্ত হাজি কুরেশি। ছবি: সুব্রত জানা।

সাজাপ্রাপ্ত হাজি কুরেশি। ছবি: সুব্রত জানা।

মঙ্গলবার বেলা ১২টা। কোর্ট লকআপ থেকে কড়া প্রহরায় তাকে যখন উলুবেড়িয়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারকের এজলাসে আনা হয় তখনও তার মুখে আত্মবিশ্বাসের ছাপ। পরনে লাল সবুজ রঙের টি শার্ট, জিনসের প্যান্ট। পায়ে বাহারি জুতো। বেলা দেড়টা নাগাদ বিচারক দণ্ডাদেশ ঘোষণার আগে তার কিছু বলার আছে কি না জানতে চাইলেন। এতক্ষণ মুখে যে আত্মবিশ্বাসের ছাপ ছিল এক লহমাতেই তা উবে গেল।

বোধহয় সাজার কঠোরতা আঁচ করেই কাঠগড়ায় দাঁড়ানো হাদি কুরেশি হাত দুটো বুকের মাঝখানে রাখল। তারপরেই বিচারককে বলল, ‘‘হুজুর ঘরে বুড়ো বাবা মা। তাদের দেখভাল করতে হবে। আমাকে শোধরানোর সুযোগ দিন।’’ তার কথা শেষ হতে না হতেই উঠে দাঁড়ালেন সরকারি আইনজীবী হারু দোয়ারি ও অভিযোগকারীদের পক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম হাদিকে বলেন, ‘‘ঘরে তোমার আরও চার ভাই আছেন। তাঁরা তোমার বাবা-মাকে দেখবেন।’’

এরপরেই রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারক শুভাশিস ঘোষ বলেন, ‘‘ছেলেমেয়ের কাছে তাদের বাবা হল শেষ আশ্রয়। অথচ দোষী ব্যক্তি তার ছেলেমেয়েকেই নিজের হাতে মেরেছে। এটা শুধু আমাকেই নয়, গোটা সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। বিচারক হিসাবে ফাঁসি ছাড়া এই অপরাধের শাস্তির আর কোনও বিকল্প বিধান আমি দেখতে পাচ্ছি না।’’ নিজের তিন ছেলেমেয়ে এবং শালীর এক শিশুপুত্রকে খুন করার দায়ে হাদি কুরেশির ফাঁসির আদেশ দেন তিনি।

এ দিন দাদার ফাঁসির আদেশ হয়েছে শুনে হাদির ভাই মুজাহিদ কুরেশি বলেন, ‘‘দাদা খুন করেছে ঠিকই। তবে সেই সময় দাদার মাথার ঠিক ছিল না। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।’’

হাওড়ার টিকিয়াপা়ড়ার মুন্সী লেন-এর বাসিন্দা হাদি ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর দুপুরে দুই মেয়ে আনিসা খাতুন (২) ও রৌনক খাতুন (৪), ছেলে শাহিদ হোসেন কুরেশি (৬) এবং শ্যালিকার আট বছরের ছেলে আব্দুল কাদিরকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণে যাচ্ছি বলে বাড়ি থেকে বেরোয়। কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার পর বাড়ি না ফিরে সে চারজনকে নিয়ে চলে যায় কুলগাছিয়ার মহিষরেখায় দামোদর নদের ধারে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে ঘোরার পর অন্ধকার হলে সে একে একে চারজনকেই দামোদরে ছুড়ে ফেলে দেয়। তারপর রাতের ট্রেন ধরে উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড়ে পালায়। ছেলেমেয়ে ও হাদির খোঁজে কুরেশি পরিবার পুলিশে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরদিন দামোদর থেকে চার শিশুর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দেহ উদ্ধারের খবর সংবাদমাধ্যমে দেখে পরিবারের লোকজন বাগনান থানায় যোগাযোগ করে দেহগুলি শনাক্ত করেন। ২১ নভেম্বর মহিষরেখাতেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে হাদি।

রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে খবর, কুরেশির সন্দেহ ছিল ওই তিন সন্তান তার ঔরসজাত নয়। সেই রাগেই নিজের তিন সন্তানকে সে খুনের পরিকল্পনা করে। শ্যালিকার ছেলেকে খুন করে কারণ কোনও সাক্ষী রাখতে চায়নি সে।

এ দিন রায়দানের জন্য নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল আদালত চত্বর। মোতায়েন করা হয়েছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র‌্যাফ। প্রসঙ্গত, এই প্রথম উলবেড়িয়া আদালতে কোনও দোষী ব্যক্তির ফাঁসির আদেশ দিলেন বিচারক।

Murder accused death penalty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy