ছবি: দীপঙ্কর দে।
দিন কুড়ি পার। এখনও শ্রীরামপুর শহরে ডেঙ্গি এখনও পুরোপুরি বাগে আসেনি। প্রতিদিনই হাসপাতালে জ্বর নিয়ে রোগী আসছেন। এই পরিস্থিতিতে রবিবার স্বাস্থ্য দফতরের অফিসার এবং পুরসভার কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করে ডেঙ্গি প্রতিরোধে একগুচ্ছ নির্দেশ দিলেন জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল। হাসপাতাল ছাড়াও শহরের তিন জায়গায় ‘ফিভার ক্লিনিক’ খোলার সিদ্ধান্তও নেওয়া হল।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ফিভার-ক্লিনিক’গুলিতে সকাল-বিকেল দু’ঘণ্টা করে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে চিকিৎসক বসবেন। নিখরচায় চিকিৎসা মিলবে। প্রয়োজনে রোগীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠানো হবে পরীক্ষার জন্য। ৮ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট মিলবে। পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিন এলাকায় ঘুরবেন। ডেঙ্গি প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হবে। ব্লিচিং এবং মশা মারার তেল ছড়ানো হবে। এ ছাড়াও, নির্মীয়মাণ আবাসনে জমা জল দেখলে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে বলে জেলাশাসক জানিয়ে দেন। কেননা, শহরের বিভিন্ন জায়গায় নির্মীয়মাণ আবাসনে জমে থাকা জলে ডেঙ্গির জীবাণু বহণকারী এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা মিলেছে।
স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী এডিস ইজিপ্টাই মশা পরিষ্কার জমা জলে বংশবৃদ্ধি করে। ফলে জল যাতে না জমে, তা নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এ ব্যাপারে পুর-এলাকায় বাড়ি বাড়ি লিফলেট দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কোনও নির্মাণে যেন জল জমে না থাকে, সে ব্যাপারেও পুরসভার তরফে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।
জেলাশাসক বলেন, ‘‘শ্রীরামপুরের বেশ কিছু জায়গা থেকে ডেঙ্গির খবর আসছে। এর মেকাবিলায় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’
শহরের ২, ৩, ৭, ৮, ৯ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডে এই জ্বর থাবা বসিয়েছে। নেতাজি সুভাষ অ্যাভেনিউ, মুখার্জিপাড়া, মুসলমানপাড়া, আড্ডি লেন, লাইব্রেরি লেন, ঠাকুরদাসবাবু লেন, রাজা কে এল গোস্বামী স্ট্রিট, এমসি লাহিড়ী বাহাদুর স্ট্রিটের মতো এলাকায় জ্বরের প্রকোপ বেশি। জ্বরের সঙ্গে গায়ে ব্যথা, খাবারে অরুচি, বমি ভাবের মতো উপসর্গ নিয়ে স্থানীয় চিকিৎসকদের ক্নিনিকে প্রতিদিন প্রচুর রোগী আসছেন। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্ত পরীক্ষার ভিড় বাড়ছে। অনেকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছেন।
শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে বর্তমানে প্রায় পঁচিশ জন জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন। তাঁদের কয়েক জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে অনেকে ভর্তি রয়েছেন।।
সম্প্রতি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা ওই সব এলাকায় গিয়ে মশার লার্ভা পরীক্ষা করেন। ‘ফিভার-ক্লিনিক’ খোলা হয় ওয়ালশ হাসপাতালে। তাতেও অবশ্য পরিস্থিতি বাগে আসেনি। ওয়ালশে ভর্তি অনেকের অভিযোগ, বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে আনতে বলা হচ্ছে। এতে অনেক বেশি খরচ হচ্ছে। সরকারি জায়গায় রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে ২-৩ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। অবশ্য নতুন সিদ্ধান্তের পরে পরিস্থিতি মোকাবিলা সহজ হবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
এ দিন সকালে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী শশী পাঁজা এবং জেলাশাসকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই ওয়ালশ হাসপাতালে চলে আসেন জেলাশাসক এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী। হাসপাতাল সুপার কমলকিশোর সিংহের ঘরে বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক রজত নন্দা এবং উপ-পুরপ্রধান উত্তম নাগ-সহ পুরসভার বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy