Advertisement
২১ মে ২০২৪

সাত মাসেই কিসান মান্ডি প্রায় সুনসান

মাত্র সাত মাসেই ছবিটা পাল্টে গেল!শুরুতে আসছিলেন প্রায় ৪০০ জন। এখন আসেন তিন জন!শুরুতে এই চত্বরে নিয়মিত ধান কেনা হতো। এখন গরু চরে।গত ১৬ ফেব্রুয়ারি চালু হওয়া উলুবেড়িয়া-১ ব্লক কিসান মান্ডির এখন এমনই হাল।

বাজারে একমাত্র মাছ বিক্রেতা।ছবি: সুব্রত জানা।

বাজারে একমাত্র মাছ বিক্রেতা।ছবি: সুব্রত জানা।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫১
Share: Save:

মাত্র সাত মাসেই ছবিটা পাল্টে গেল!

শুরুতে আসছিলেন প্রায় ৪০০ জন। এখন আসেন তিন জন!

শুরুতে এই চত্বরে নিয়মিত ধান কেনা হতো। এখন গরু চরে।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি চালু হওয়া উলুবেড়িয়া-১ ব্লক কিসান মান্ডির এখন এমনই হাল।

ফড়েদের হাত এড়িয়ে ছোট চাষিরা যাতে সরাসরি কৃষিজ পণ্য ক্রেতাদের বিক্রি করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই তৈরি হচ্ছে কিসান মান্ডি। ২০টি স্টলের উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের মান্ডিটি তৈরিতে খরচ হয় ৫ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা। নিলাম ঘর, ছাউনি দেওয়া বাজার চত্বর, ওজন করার কাঁটাঘর, প্রশাসনিক ভবন, গুদাম সবই রয়েছে।

আগে থেকেই অবশ্য এখানে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান কেনা হচ্ছিল। মান্ডি চালু হওয়ার পরে আশপাশের সব্জি এবং মাছ ব্যবসায়ীদের এখানে ডাকা হয়। খোলা জায়গায় তাঁদের বসতে দেওয়া হয়। তৈরি হয় কিছু খাবারের দোকান। স্থায়ী ভাবে ব্যবসার জন্য ২০টি স্টলও বিলি করা হয়। প্রথমে মান্ডিটি জমে উঠলেও পরে তা ধুঁকতে শুরু করে।

স্টলগুলি বন্ধই। এখনও সেখানে ব্যবসা চালু হয়নি। ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীর সংখ্যা কমেছে খোলা জায়গাতেও। বর্তমানে এক সব্জি এবং দু’জন মাছ বিক্রেতা রয়েছেন। এ ছাড়াও একজন চা বিক্রেতা রয়েছেন। বন্ধ হয়েছে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা।

কিসান মান্ডির এই হালের জন্য মূলত পরিকাঠামোর অভাবকেই দুষছেন ব্যবসায়ীরা। এখানে যাঁরা প্রতিদিন বসেন, তাঁদের অভিযোগ, খোলা জায়গায় বসে সব্জি বিক্রি করতে হয় বলে দুপুরের মধ্যে বেশিরভাগ শুকিয়ে যায়। ছাউনি না থাকায় প্রায় সকলেই পাততাড়ি গুটিয়েছেন। মান্ডিটি রয়েছে রাজ্য কৃষি বিপণন দফতরের অধীনে হাওড়া জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির হাতে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সমিতিকে বার বার ছাউনির কথা বলা হলেও কাজ হয়নি। এখানে যাঁরা বসতেন, সেই সব ব্যবসায়ীদের দৈনন্দিন সমস্যা শোনার জন্য নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির কাউকে এখানে পাওয়া যায় না। যদিও সমিতির আধিকারিকদের বসার জন্য প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। এমনকী স্থায়ী স্টলগুলিও চালু করা হয়নি।

মান্ডির এই চত্বরে ধান কেনা হতো। এখন গরু চরে।

সব্জি বিক্রেতা নিমাই জানার অভিযোগ, ‘‘খোলা জায়গায় অস্থায়ী ছাউনি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা আর হয়নি। কাঁচা আনাজের ব্যবসায়ীরা সব শর্ত পূরণ করে ব্যবসা করতে রাজি ছিলেন। কিন্তু সরকারের তরফে কিছু বলা হচ্ছে না।’’

বাজার না-জমে ওঠায় বিপাকে পড়েছেন চায়ের দোকানদার অচেতন ভৈামিক। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে টেবিল, বেঞ্চ-সহ অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে। কিন্তু দিনে মাত্র পাঁচ কাপ চা বিক্রি করি। যদি কোনও দিন বাজার চালু হয় সেই আশায় বসে আছি।’’

গাফিলতি মেনে নিয়েছেন হাওড়া জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির কর্তারা। তাঁরা সমস্যা মেটানোর আশ্বাসও দিয়েছেন। কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপ‌ন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘খুচরো আনাজ বিক্রেতাদের বসার জন্য ছাউনি তৈরি হবে। এর জন্য ১৪ লক্ষ টাকার টেন্ডার ডাকা হয়েছে। স্থায়ী স্টলগুলিও চালু করা হবে।’’

বাজার চালু না হলেও এখানে পাহারার জন্য রাখা হয়েছে ৯ জন সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁদের বেতন বাবদ মাসে খরচ হয় অন্তত ৫৪ হাজার টাকা। অথচ, বাজার ঠিকমতো চালু থাকলে সরকারের রোজগার হওয়ার কথা। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় সব্জি ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kisan mandi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE