Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
হুগলির লগন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বন্ধ কাজ

ভোটের মুখে ফের শিল্পে পড়ল তালা

বন্ধ জুটমিলগুলি খোলেনি। দু’টি বিস্কুট কারখানা খোলারও লক্ষণ নেই। লোকসভা ভোটের মুখে হুগলি শিল্পাঞ্চলে এ বার তালা ঝুলল একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানার তিনটি ইউনিটেও। 

সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস দেখছেন শ্রমিকেরা। ছবি: তাপস ঘোষ

সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস দেখছেন শ্রমিকেরা। ছবি: তাপস ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৯ ০৯:৩৫
Share: Save:

বন্ধ জুটমিলগুলি খোলেনি। দু’টি বিস্কুট কারখানা খোলারও লক্ষণ নেই। লোকসভা ভোটের মুখে হুগলি শিল্পাঞ্চলে এ বার তালা ঝুলল একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানার তিনটি ইউনিটেও।

সোমবার সকালে ‘লগন ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে ওই সংস্থার ভদ্রেশ্বর, সপ্তগ্রাম এবং রিষড়ায় তিন ইউনিটেই ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস পড়ে। ‘ন্যায্য’ পাওনার দাবিতে ওই তিন ইউনিটেই শ্রমিকদের আন্দোলন চলছিলই। এক সপ্তাহ ধরে কাজ বন্ধ রেখেছিলেন

তাঁরা। এ বার কর্তৃপক্ষ ওই নোটিস জারি করায় বিপাকে পড়লেন প্রায় ৩০০ শ্রমিক। পরিস্থিতির জন্য তাঁরা মালিকপক্ষকেই দুষছেন। শ্রমিকদের দাবি, মালিকপক্ষ একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ওই কারখানায় চটকলের যন্ত্রাংশ তৈরি হয়। এ দিন সকালে ওই নোটিস জারি হওয়ার খবর ছড়াতেই শ্রমিকেরা ভদ্রেশ্বরের ইউনিটের গেটে জড়ো হতে থাকেন। শুরু হয় বিক্ষোভ। নবীন মণ্ডল নামে এক শ্রমিকের অভিযোগ, ‘‘কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনায় কারখানাটা শেষ হতে বসেছে। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি না-মিটিয়ে অনৈতিক ভাবে কারখানা বন্ধ করা হল।’’ অভিযোগ উড়িয়ে কারখানার পার্সোনেল ম্যানেজার মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘শ্রমিকদের অসন্তোষের জেরে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছিল। ব্যাধ্য হয়েই কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত।’’ চন্দননগর শ্রম দফতরের এক আধিকারিক জানান, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে কারখানা খোলার চেষ্টা করা হবে।

২০১৪ সাল থেকে টানা তিন বছর কারখানাটি বন্ধ ছিল। ২০১৭ সালে খোলার পরে শ্রমিকদের পাওনা নিয়ে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়। শ্রমিকদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ চুক্তি অনুযায়ী পদক্ষেপ করছিলেন না। তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছিল। গত ১৫ জানুয়ারি কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে না। মাসে ১৮ থেকে ২২ দিনের বেশি কাজ হচ্ছিল না। বর্ধিত মহার্ঘ-ভাতা মিলছিল না। এক শ্রমিক বলেন, ‘‘আগে যেখানে মাসে ১৬ থেকে ১৮টি মেশিন তৈরি হত, এখন সাত-আটটির বেশি হয় না।’’

এ সব নিয়ে শ্রমিকদের ক্ষোভ বাড়ে। আন্দোলনও চলছিল। সমস্যা সমাধানের দাবিতে শ্রম দফতরেরও দ্বারস্থ হন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু কোনও কিছুতেই মালিকপক্ষের টনক নড়েনি ব‌লে অভিযোগ। সমস্যা সমাধানে শাসক থেকে

বিরোধী—সব দলই রাজ্য সরকারের মধ্যস্থতা চাইছে। যদিও কোনও দলের নেতাকেই এ দিন কারখানার সামনে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে

দেখা যায়নি।

বিজেপির ওবিসি মোর্চার রাজ্য সভাপতি স্বপন পাল ব‌লেন, ‘‘রাজ্যে শিল্পের অবস্থা এখন তৃণমূলের মতোই লঝ্‌ঝড়ে। একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। শ্রমিকদের দুর্দশা বাড়ছে। রাজ্য সরকার অবিলম্বে কারখানা খোলার ব্যবস্থা করুক।’’ হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের বাম প্রার্থী প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষের জন্যই কারখানার এই অবস্থা। শ্রম দফতর মীমাংসা করে দ্রুত কারখানা খুলতে উদ্যোগী হোক।’’ পরিস্থিতির জন্য

মালিকপক্ষকেই দায়ী করে রাজ্যের মন্ত্রী তথা হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তের বক্তব্য, ‘‘সব শ্রমিক সংগঠনই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। শ্রম দফতরের মধ্যস্থতায় আলোচনার মাধ্যমে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর চেষ্টা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jute Mill Strike Politics Labour Union
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE