Advertisement
E-Paper

পাটুলির ভাসমান বাজারে বলাগড়ের নৌকা

পাটুলির ডোবায় তৈরি হচ্ছে ওই বাজার। ডোবার স্বচ্ছ জলে শালখুঁটির উপর তৈরি ‘ওয়াক-ওয়ে’ দিয়ে বিভিন্ন নৌকায় পৌঁছে যাবেন ক্রেতা।

প্রকাশ পাল ও সুশান্ত সরকার

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৪১
অপেক্ষা: পাটুলির এই ভাসমান বাজারে নৌকার সারি। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

অপেক্ষা: পাটুলির এই ভাসমান বাজারে নৌকার সারি। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

কলকাতার বুকে এ যেন এক টুকরো ভেনিস, ব্যাঙ্কক বা কাশ্মীরের ডাল লেক!

পাটুলিতে ভাসমান বাজার তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেই বাজারে নৌকা যাচ্ছে বলাগড় থেকে। আর তাই হুগলির প্রত্যন্ত এই জনপদে নৌকাশিল্পের মরা গাঙে কিছুটা জোয়ার এসেছে। নৌকা কারিগররা মনে করছেন, এমন প্রকল্প আরও হলে হাল ফিরবে শিল্পের।

পাটুলির ডোবায় তৈরি হচ্ছে ওই বাজার। ডোবার স্বচ্ছ জলে শালখুঁটির উপর তৈরি ‘ওয়াক-ওয়ে’ দিয়ে বিভিন্ন নৌকায় পৌঁছে যাবেন ক্রেতা। আনাজ থেকে মাছ, ফলমূল— সবই মিলবে নৌকা-বিপণিতে। যেমন মেলে ডাল লেকে বা ভেনিসে বা ব্যাঙ্ককে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, পাটুলির ওই বাজারের চৌহদ্দি ঝাঁ-চকচকে করে সাজানো হবে। প্রকল্পে ১১৪টি নৌকা থাকবে। বলাগড়ের নৌকা কারিগররা ওই নৌকা তৈরির বরাত পান। জনা পঞ্চাশ কারিগর কয়েক মাস ধরে নৌকা তৈরির কাজ করেছেন। নৌকাগুলি লম্বায় ১৮-২০ ফুট। চওড়ায় ৭-৭.৫ ফুট। নৌকার নীচের অংশে থাকছে ফাইবারের আস্তরণ। যাতে জলে থেকে নষ্ট না হয়। হাতে গোনা আর কয়েকটি নৌকার এখন পাটুলি পাড়ি দেওয়া বাকি।

বলাগড়ের নৌকাশিল্পের ভালই নামডাক রয়েছে। এখানকার শ্রীপুর, তেঁতুলিয়া, রাজবংশীপাড়া, চাঁদরার মতো এলাকায় তিনশোরও বেশি পরিবার এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এখানে তৈরি নৌকা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তো বটেই, এক সময়ে ভিন্‌ রাজ্যেও সরবরাহ হতো। কিন্তু নানা কারণে এই শিল্পে মন্দা দেখা যায়। তা ছাড়া, বর্তমানে ফাইবারের নৌকা বাজারে আসায় কাঠের নৌকার চল কমেছে। সে ভাবে লাভের মুখ না-দেখায় বলাগড়ের নতুন প্রজন্ম এই কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বর্ষার সময় বরাত এলেও বছরের বাকি সময় কার্যত বসে থাকতে হয় কারিগরদের। এখানে কাজ কমে যাওয়ায় অনেক শিল্পী দিঘা, শঙ্করপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় ট্রলার তৈরির কাজ করেন।

শিল্পীদের আক্ষেপ, ঋণের ব্যবস্থা না-থাকা, কাঁচামালের অভাব-সহ বিভিন্ন কারণে বেশ কিছু জায়গায় নৌকা সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই শিল্প ধুঁকছে। কিন্তু পাটুলির বরাত পাওয়ার পরে কারিগরদের অনেকেই মনে করছেন, সরকারের এমন উদ্যোগ আরও হলে এখানকার নৌকাশিল্প ফের আগের জায়গায় ফিরতে পারে। নৌকাশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ইমদাদুল হকের কথায়, ‘‘একটি প্রকল্পের মাধ্যমে একটি শিল্পের আমূল বদল সম্ভব নয়! তবে, এই ধরনের প্রকল্প আরও হলে বা পর্যটনের প্রসারে সুদৃশ্য নৌকা তৈরির বরাত পেলে এখানকার নৌকাশিল্প ঘুরে দাঁড়াতেই পারে।’’

তেঁতুলিয়া গ্রামের নৌকা কারিগর চন্দন কুণ্ডু, রবিয়াল গাজিদের বক্তব্য, পাটুলির নৌকার বরাত আসায় কয়েক মাস ধরে তাঁদের নিয়মিত কাজ মিলেছে। দু’পয়সা রোজগার হয়েছে। চন্দনবাবু বলেন, ‘‘ষোলো-সতেরো বছর ধরে নৌকা তৈরি করি। কিন্তু এই শিল্পে বড়ই দুর্দিন চলছিল। এই ধরনের প্রকল্প আরও হলে বলাগড়ের নৌকাশিল্প ফের স্বমহিমায় ফিরতে পারে।’’

Balagarh Boat বলাগড় নৌকা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy