Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
শ্যামপুর থেকে গ্রেফতার চার জন

এক ফোনে রাস্তায় লুটপাট, ঘটনার মূল চক্র এই ছাপোষা যুবতী!

১৮ এপ্রিল ওই গ্রাম থেকেই সঞ্জয় মাজি নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ধৃত মঙ্গলা। — নিজস্ব চিত্র

ধৃত মঙ্গলা। — নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৯ ০১:১৬
Share: Save:

থ হয়ে গিয়েছেন শ্যামপুর থানায় অনেক বাঘা পুলিশ অফিসার!

গত মাসের ৪ তারিখে শ্যামপুরের হোগলকুড়িয়া গ্রাম থেকে ঋণের কিস্তির ২ লক্ষ ৭০ হাজার ৩৩২ টাকা আদায় করে মোটরবাইকে ফেরার সময়ে দুষ্কৃতীদের কবলে পড়েছিলেন একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের নাউল শাখার এক কর্মী। তিন দুষ্কৃতী মোটরবাইকে এসে ধাক্কা মেরে তাঁকে ফেলে দেয়। তারপরে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে, শূন্যে গুলি চালিয়ে তাঁর কাছ থেকে ওই টাকা লুট করে চম্পট দেয়। দুষ্কৃতীদের ধরতে গিয়েই চমকে গিয়েছেন তদন্তকারীরা। ঘটনার মূল চক্রী কিনা ওই গ্রামেরই বছর ঊনত্রিশের এক ছাপোষা যুবতী!

১৮ এপ্রিল ওই গ্রাম থেকেই সঞ্জয় মাজি নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জেরা করেই পুলিশ মঙ্গলা মাজি নামে ওই যুবতীর কথা পুলিশ জানতে পারে। তাকেও সে দিন ধরা হয়। ক’দিন আগে গ্রেফতার করা হয় সরিফুল ইলসাম এবং দেবাশিস মাল নামে আরও দুই দুষ্কৃতীকে। সরিফুলের বাড়ি শসাটিতে। দেবাশিস পাঁচলার বাসিন্দা। পুলিশ জানায়, ধৃতদের কাছ থেকে লুটের প্রায় ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে মঙ্গলার কাছে ছিল পাঁচ হাজার টাকা। সরিফুলের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্রটিও উদ্ধার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে মঙ্গলা ছাড়া বাকিদের বিরুদ্ধে নানা অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘সে দিনের ঘটনার পুরো পরিকল্পনা করেছিল মঙ্গলাই। ওই ব্যাঙ্ককর্মী কী পরিমাণ টাকা নিয়ে যাচ্ছেন, সে কথা ফোন করে ওই যুবতীই দুষ্কৃতীদের জানিয়েছিল। লুটের পরে তারা টাকা ভাগ করে নেয়। বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ধৃতেরা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।’’ কিন্তু মঙ্গলা কেন লুটের পরিকল্পনা করেছিল? কারণ খুঁজতে গিয়ে তদন্তকারীরা সেই বহুচর্চিত বিষয়কেই তুলে ধরেছেন, ‘অভাবে স্বভাব নষ্ট’।

পুলিশ ও ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের গরিব পরিবারের মহিলাদের স্বনির্ভর হতে ব্যাঙ্ক ঋণ দেয়। এ জন্য মহিলাদের দল গড়া হয়। মঙ্গলার স্বামী ভোলনাথ গরু বিক্রি করেন।

দম্পতির স্কুলপড়ুয়া একটি ছেলে রয়েছে। খড়ের চালের বাড়ি মেরামতের জন্য ঋণের প্রয়োজনে মঙ্গলা ঘটনার এক মাস আগে ওই দলে যুক্ত হয়। তাকে প্রথমে ১০ হাজার টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছিল। পরে অনেক অনুরোধে আরও ১০ হাজার টাকা বাড়ানো হয়। সপ্তাহে তাকে শোধ করতে হত ৪২৩ টাকা করে।

প্রতি সোমবার ব্যাঙ্ককর্মী প্রসেনজিৎ রায় ওই গ্রামে গিয়ে দলের সব মহিলাকে নিয়ে বৈঠক করে ঋণের কিস্তির টাকা আদায় করতেন। লুটের ঘটনাটিও ঘটেছিল সোমবার। সে দিন ৬০ জন মহিলার সঙ্গে মঙ্গলাও কিস্তির টাকা জমা দেয়। প্রসেনজিৎ ব্যাগে এবং নিজের জামা-প্যান্টের পকেটে ওই টাকা রাখেন। তারপরে তিনি নিজের মোটরবাইকে স্টার্ট দেওয়ার পরেই মঙ্গলা সঞ্জয়দের খবর দেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘আমাদের নিয়ম হল কত টাকা আদায় হয়েছে তা দলের সকলের সামনে শোনাতে হয় এবং তিন জন মহিলাকে দিয়ে সই করিয়ে নিতে হয়। আমি যখন টাকার কথা শোনাচ্ছিলাম তখন মঙ্গলা সেখানে ছিল। তারপরেই সে বাইরে চলে যায়। দেখলাম, সে কাকে ফোন করছে। কিন্তু আমি সন্দেহ করিনি।’’ প্রসেনজিৎ পুলিশকে জানিয়েছিলেন, দূষ্কৃতীরা লুটপাটের সময়ে পুরো টাকার কথা উল্লেখ করে তা তাঁর কাছ থেকে বুঝে নেয়। সব টাকা যে ব্যাগে নেই সেটাও জানত দুষ্কৃতীরা। এ থেকেই পুলিশের সন্দেহ গিয়ে পড়ে ঋণগ্রহীতাদের উপরে। জালে পড়ে মঙ্গলা।

টাকা লুট হলেও সে দিন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে ওই ব্যাঙ্কেরই এক কর্মী ডোমজুড়ে ঋণ আদায় করতে গিয়ে খুন হন। ঝণগ্রহীতা একটি পরিবারের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল উঠেছিল। কয়েক মাসের ব্যবধানে এই দু’টি ঘটনায় ওই ব্যাঙ্ককর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন (গ্রামীণ) জেলা পু‌লিশের কর্তারা। তাঁদের উপযুক্ত নিরাপত্তার জন্য ব্যাঙ্কের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Shyampur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE