নজরে: বনভোজন করতে আসা পর্যটকদের প্লাস্টিক ব্যবহারের অপকারিতা বোঝাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র
গড়চুমুকে চড়ুইভাতি করতে এসে সপরিার কাগজের থালায় প্রাতরাশ সারছিলেন হাওড়ার বালির জয়দেব সাধুখাঁ। হঠাৎ সেখানে হাজির শ্যামপুর ১ বিডিও সঞ্চয়ন পান, যুগ্ম বিডিও শমিত মণ্ডল। সঙ্গে আরও লোকজন।
বিডিও জয়দেবকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘দুপুরের কী খাবেন, কিসে খাবেন?’’ উত্তর মেলে, ‘‘থার্মোকলের থালা-বাটি এনেছি স্যার।’’ বিডিও জানিয়ে দেন, ও সব ব্যবহার চলবে না। দুপুরের খাওয়া সারতে হবে হয় কাগজের থালায়, নয় তো শালপাতায়। কিন্তু তা মিলবে কোথায়! বিডিও জানালেন, শালপাতা বিক্রির ব্যবস্থা হয়েছে পিকনিক স্পটেই। জয়দেব ছুটলেন শালপাতার সন্ধানে। পেয়েও গেলেন। পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে গড়চুমুক পর্যটনকেন্দ্রেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে শালপাতা বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে পিকনিকের মরসুমে।
সপ্তাহখানেক আগে গড়চুমুক পর্যকেন্দ্রে প্লাস্টিক ও থার্মোকল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতি বছর এখানে চড়ুইভাতি করতে আসা লোকজন থার্মোকল, প্লাস্টিকের গ্লাস ও কাপ ব্যবহার করেন। পরে সে সব ভাসতে দেখা যায় গঙ্গা ও দামোদরে। পরিবেশ বাঁচাতে তাই উদ্যোগী জেলা প্রশাসন। পর্যটন কেন্দ্রের সামনে এই মর্মে প্রচার শুরু হয়েছে। ঝোলানো হয়েছে ফ্লেক্স।
তেমনটা অবশ্য হয় সর্বত্রই, কিন্তু মানছে ক’জন!
তাই সরেজমিন পরিদর্শনে নেমেছেন খোদ বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা। চড়ুইভাতির মরসুমে প্রায় প্রতিদিনই নিয়ম করে তাঁরা গড়চুমুকে অভিযান চালাচ্ছেন। পর্যটকদের বোঝাচ্ছেন, কেন প্লাস্টিক ও থার্মোকল ব্যবহার করা উচিত নয়। সঙ্গে থাকছেন বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের ‘ভিলেজ রিসোর্স পার্সন’, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। তাঁরা শালপাতার থালা সঙ্গে নিয়েই ঘুরছেন।
বিডিও বলেন, ‘‘অনেকেই এই পর্যটন কেন্দ্রে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে, তা জানেন না। ফলে সঙ্গে করে থার্মোকলের থালা-বাটি এনেছেন। তাঁদের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে তো? সে কারণেই আমরা মেদিনীপুর থেকে শালপাতা এনেছি। সেগুলি পর্যটকদের মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে।’’
আরামবাগ থেকে দলবল নিয়ে চড়ুইভাতি করতে এসেছিলেন সুমন ঘড়াই। বললেন, ‘‘আমরাও সঙ্গে থার্মোকলের থালা-বাটি এনেছিলাম। কিন্তু ব্যবহার করিনি। শালপাতার থালাবাটি কিনে নিয়েছি।’’ পরের বছর থেকে পিকনিকে শালপাতার থালাবাটিই ব্যবহার করবেন বলে জানালেন সুমন।
তবে আগেভাগে প্রচারের কথা জেনে অনেকেই কাগজের থালাবাটি নিয়ে আসছেন। উলুবেড়িয়া থেকে চড়ুইভাতি করতে এসেছিলেন মলয় পাল। তাঁদের দলটি কাগজের থালাবাটিই এনেছে। মলয় বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, এখানে থার্মোকল ও প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই কাগজের থালাবাটি এনেছি।’’ প্লাস্টিক, থার্মোকল বর্জনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন তাঁরা।
বিডিও বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত যা হিসেব, তাতে কুড়ি শতাংশের মতো মানুষকে আমরা সচেতন করতে পেরেছি, যাঁরা আগে থেকেই থার্মোকল বর্জন করেছেন। আশা করি সংখ্যাটা বাড়বে। সেটা না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই মরসুমে নিয়মিত অভিযান চালাব।’’ শুধু যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি শালপাতার থালাবাটি বিক্রি করছেন তা নয়, স্থানীয় দোকানগুলিতেও শালপাতা রাখা হয়েছে প্রশাসনের অনুরোধ মেনে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শ্যামপুরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কাগজের থালা ও বাটি তৈরির যন্ত্র দেওয়া হবে। থালাবাটি তৈরি করে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি চড়ুইভাতির মরসুমে গড়চমুক, গাদিয়াড়া প্রভৃতি পর্যটন কেন্দ্রে বিক্রি করতে পারবেন। এ সবের পরেও যদি দেখা যায় কেউ থার্মোকল ব্যবহার করছেন, তাঁকে জরিমানা করা হবে। বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নাসরিন শেখের দাবি, নিয়মিত প্রচার ও অভিযান চালিয়ে আগামী বছরের মধ্যে গড়চুমুক ও গাদিয়াড়া পর্যটন কেন্দ্রে থার্মোকলের ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy