Advertisement
E-Paper

দরাদরি চলছে তৃণমূলের অন্দরে

যে সব পঞ্চায়েতে আদালতের স্থগিতাদেশ সংক্রান্ত সমস্যা নেই সেখানে বোর্ড গঠন পর্ব সেরে ফেলতে চেয়েছে তৃণমূল। চলতি মাসেই বহু সাবেক পঞ্চায়েতের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। হুগলির তৃণমূল নেতৃত্ব ঠিক করেন, কোন্দল এড়াতে ব্লক স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সব কিছু চূড়ান্ত হবে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন শাসক দলের যে সব প্রার্থী তাঁদের ভাগ্য এখন সুপ্রিম কোর্টের হাতে। কারণ তাঁদের জয়েই রয়েছে স্থগিতাদেশ। তারই ফলে আটকে রয়েছে বহু পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন। কিন্তু তার বাইরে যে পঞ্চায়েতগুলি রয়েছে, তাদের নিয়েও ফের ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ শুরু হয়েছে শাসকদলে ভিতরেই।

আর তা নিয়েই কোথাও দলের জেতা প্রার্থী রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক মার খেয়েছেন বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতার হাতে, কোথাও দোকানে আগুন ধরানোর অভিযোগ উঠেছে। কোথাও আবার ঝগড়া মিটিয়ে আড়াই বছর-আড়াই বছর করে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে প্রধান বা উপ-প্রধানের পদ।

যে সব পঞ্চায়েতে আদালতের স্থগিতাদেশ সংক্রান্ত সমস্যা নেই সেখানে বোর্ড গঠন পর্ব সেরে ফেলতে চেয়েছে তৃণমূল। চলতি মাসেই বহু সাবেক পঞ্চায়েতের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। হুগলির তৃণমূল নেতৃত্ব ঠিক করেন, কোন্দল এড়াতে ব্লক স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সব কিছু চূড়ান্ত হবে।

সেই মতো মঙ্গলবারই ধনেখালির বেলমুড়ির অডিটরিয়ামে বৈঠকে বসেন জেলা নেতারা। উপস্থিত ছিলেন ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র ও উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। মন্ত্রী ও দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত-সহ জেলার অন্য নেতারা। সেখানেও নেতারা বার বার বলেছেন, ঝামেলা এড়ানোর কথা। কিন্তু ঝামেলার কথা উঠে এসেছে উপস্থিত নেতা কর্মীদের বক্তব্যেই। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না দলের অন্যতম কার্যকারী সভাপতি দিলীপ যাদব।

দলের এক ব্লক স্তরের নেতা বৈঠক থেকে বেরিয়ে বলেছেন, ‘‘তৃণমূল আছে তৃণমূলেই।’’

জানা গিয়েছে, বৈঠকের মধ্যেই সিঙ্গুর, হরিপাল, বলাগড়, পুরশুড়া, গোঘাট অঞ্চল নিয়ে বিবাদ হয়েছে। দলের এক বিধায়ক বলেন, ‘‘নেতারা দলের হুইপ বলে যে তালিকা আমাদের ধরাচ্ছিলেন তা আসলে ওঁদের মর্জি মাফিক। তাই তালিকার সব নাম আমাদের পক্ষে মানা সম্ভব হয়নি। আমরা খেটে দলটা করি।’’

তৃণমূলের সন্ত্রাসের অভিযোগ বিরোধীরা আগেই করেছেন। যেমন হরিপালের চন্দনপুরের ঘটনা। সেখানে মোট ১২টি আসনের মধ্যে সিপিএম ছ’টি, তৃণমূল পাঁচটি এবং নির্দল প্রার্থী একটি আসন পেয়েছিল।

সিপিএম জেলা নেতৃত্বের দাবি, নির্দল হিসাবে সদস্য তাঁদের সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ফলে বোর্ড গঠন করতেই পারত সিপিএম। অভিযোগ, তারপরেই মাঠে নেমে শাসকদল সন্ত্রাস শুরু করেছে। সিপিএমের এক এরিয়া নেতা বলেন, ‘‘আমাদের জয়ী পঞ্চায়েত সদস্য মামনি হেমব্রমের বাবা বীরসিংহ হেমব্রমের কাঁচা আনাজের ব্যবসা আছে। চন্দনপুর স্টেশনে তাঁর অস্থায়ী দোকানে রাতের অন্ধকারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘বিরোধীদের মারধর করে একেবারে মাঠের বাইরে বের করে দেওয়ার শাসকদলের কৌশল এখনও অব্যাহত আছে।’’

মঙ্গলবারের বৈঠকে অবশ্য একই অভিযোগ করেছেন পাণ্ডুয়ায় দলের জয়ী সদস্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্বাস আলিও। তিনি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তৃণমূলের ব্লক নেতা সঞ্জয় ঘোষের বিরুদ্ধেই। আব্বাস বলেন, ‘‘আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। সোমবার এলাকায় আলোচনা করার নাম করে আমাকে মারধর করে সঞ্জয় ও তার দলবল। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে মার খেয়েছেন আমার জামাইও।’’

চণ্ডীতলার হরিপুর পঞ্চায়েতটি আবার মারামারির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে পঞ্চাশ শতাংশের হিসাবে। সেখানে দলের দুই জয়ী প্রার্থী অর্চনা বেলেল এবং মদন পাত্র উপ-প্রধান হতে চান। প্রধানের পরের পদটি ছাড়তে নারাজ দু’জনেই। তখন দলেরই এক নেতা সমাধান করে দিয়েছেন বিনা রক্তপাতে— আড়াই বছর করে ভাগ করে উপ-প্রধান পদ সামলাবেন অর্চনা ও মদন।

কে প্রথমে উপ-প্রধান হবেন? তা নাকি ঠিক হয়েছে এক টাকার মুদ্রা ‘টস’ করে। জিতেছেন অর্চনা। তিনিই আপাতত উপ-প্রধান হচ্ছেন, আড়াই বছরের জন্য। কোন্নগরের কানাইপুরে অবশ্য গোপন ব্যালটের রফায় আচ্ছালাল যাদব অনায়াসে হারিয়ে দেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের।

TMC Panchayat Bargaining
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy