রাজ্যের অন্যত্র গোলমাল হলেও মনোনয়ন পর্বে হাওড়া জেলা কার্যত শান্তিপূর্ণ ছিল। দু’একটি ছাড়া তেমন কোনও রাজনৈতিক অশান্তির ঘটনা সামনে আসেনি। মনোনয়ন পর্বের শেষে দেখা যাচ্ছে, জেলায় ১৫৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২৩টিই কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। তার মধ্যে শুধু উদয়নারায়ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রেই ৯টি পঞ্চায়েত বিরোধীশূন্য!
উদয়নারায়ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে উদয়নারায়ণপুর ব্লকে ১১টি এবং আমতা-১ ব্লকের ৫টি— মোট ১৬টি পঞ্চায়েত রয়েছে। এর মধ্যে উদয়নারায়ণপুর ব্লকের যে চারটি পঞ্চায়েত তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে, সেগুলি হল— সিংটি, দেবীপুর, ভবানীপুর-বিধিচন্দ্রপুর এবং সোনাতলা-গড়ভবানীপুর। আমতা-১ ব্লকের বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েতগুলি হল— কানপুর, আনুলিয়া, খোসালপুর, বসন্তপুর এবং বালিচক। দুই ব্লক মিলিয়ে ওই ন’টি পঞ্চায়েতে বিরোধীরা একটি আসনেও প্রার্থী দিতে পারেনি।
বিরোধীরা অবশ্য এ জন্য তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’কেই দুষেছে। সিপিএম এবং বিজেপির অভিযোগ, তাদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য ব্লক অফিসের ধারে-কাছে ঘেঁষতে পারেননি। তাদের প্রার্থীদের বাড়ি গিয়ে ভয় দেখানো হয়েছিল। এমনকী, মহকুমাশাসকের অফিসে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরিণতি খারাপ হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘উদয়নারায়ণপুরে সন্ত্রাসের জন্য আমাদের অনেক দলীয় কার্যালয় বন্ধ করে দিতে হয়েছে। আমরা কাউকে প্রার্থী হিসেবে ঠিক করলেও তাঁকে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হলেও কোনও ফল হয়নি।’’ একই অভিযোগ বিজেপির হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা সভাপতি অনুপম মল্লিকেরও, ‘‘উদয়নারায়ণপুরে শাসকদলের সন্ত্রাসের সামনে আমাদের কিছু করার ছিল না।’’
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা। তিনি পাল্টা বলেন, ‘‘বিজেপির এখানে কোনও সংগঠন নেই, লোকও নেই। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত সিপিএমের স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনেককে আমি নির্বাচনে দাঁড়াতে বলেছি। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখলাম মাঠে কেউ নেই। আমরা যদি বাধা দিতাম, তা হলে জেলা পরিষদের সবগুলি এবং পঞ্চায়েত সমিতির অধিকাংশ আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিল কী ভাবে? আসলে নিচুতলায় ওদের কর্মী নেই।’’
বাগনান বিধানসভা কেন্দ্রের অধীনে বাগনান-১ ব্লকের ১০টি এবং বাগনান-২ ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েত রয়েছে। তার মধ্যে বাগনান-২ ব্লকের ৫টি এবং বাগনান-১ ব্লকের মোট ৬টি পঞ্চায়েত কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসেছে তৃণমূলের দখলে। এর মধ্যে একমাত্র বাগা-২ এর চন্দ্রভাগ পঞ্চায়েতটি বিরোধীশূন্য। এখানে ১৫টি আসনে কোনও বিরোধী দলের মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি। ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়া ডোমজুড় ব্লকের বাঁকড়া ১, ২ এবং ৩ এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত, উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের ভাণ্ডারগাছা এবং চন্দ্রপুর পঞ্চায়েতে কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছে তৃণমূল। এর মধ্যে চন্দ্রপুর বিরোধীশূন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy