Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
এসডিপিও-র অপসারণ দাবি বিজেপির
TMC

গণেশের বাড়িতে দিনভর তালা, অপহরণের নালিশ

এ দিন খানাটি গ্রামে গণেশের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিলেন বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব। কিন্তু ভোর থেকেই দেখা যায়, ওই বাড়িতে তালা ঝুলছে।

মৃত গণেশ রায়ের তালাবন্ধ বাড়ি (উপরে)। আরামবাগের এসডিপিও অফিসের সামনে বিজেপি নেতাদের বিক্ষোভ (নীচে)। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

মৃত গণেশ রায়ের তালাবন্ধ বাড়ি (উপরে)। আরামবাগের এসডিপিও অফিসের সামনে বিজেপি নেতাদের বিক্ষোভ (নীচে)। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোঘাট শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৫৫
Share: Save:

গোঘাটের দলীয় কর্মী গণেশ রায়কে খুনের পর এ বার তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাঁর পরিবারের সদস্যদের অপহরণের অভিযোগও তুলল বিজেপি। তাতে নাম জড়াল এসডিপিও (আরামবাগ) নির্মলকুমার দাসের। তাঁর অপসারণের দাবিতে সোমবার দুপুরে তাঁরই অফিসের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভও করে গেরুয়া-শিবির।

এ দিন খানাটি গ্রামে গণেশের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিলেন বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব। কিন্তু ভোর থেকেই দেখা যায়, ওই বাড়িতে তালা ঝুলছে। পড়শিরা জানান, আলো ফোটার আগেই একটি গাড়ি আসে। তাতে ওই পরিবারের লোকজন চলে যান। ফলে, বিজেপি নেতৃত্ব তাঁদের ওই কর্মসূচি বাতিল করে। দিনভর ওই পরিবারের কাউকে ফোনেও পাওয়া যায়নি। বিকেলে মৃতের বড় ছেলে ধর্মদাস অবশ্য ফোনে বলেন, ‘‘আমরা বাড়ি ফিরেছি। আমাদের কেউ অপহরণ করেননি। নিজেরাই বিধায়কের অফিসে গিয়েছিলাম। ১০০ দিনের জবকার্ড পাইনি। ঘরবাড়ি ভাঙা। সে সব কথাই জানাতে গিয়েছিলাম। আমরা চাইছি না বাবার মৃত্যুর কারণে এলাকায় কোনও অশান্তি হোক।”

তবে, তার আগেই অপহরণের অভিযোগকে ঘিরে বিজেপি সরব হয়। এসডিপিও (আরামবাগ)-র নেতৃত্বে গণেশের পরিবারের লোককে তৃণমূল অপহরণ করেছে, এই অভিযোগ তুলে দুপুর পৌনে ১টা থেকে এসডিপিও অফিসের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু, সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। দাবি ওঠে, পুলিশ সুপারকে এসে তাঁদের স্মারকলিপি নিতে হবে। বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ অবস্থান–বিক্ষোভ কর্মসূচি তুলে নেওয়া হয়।

সায়ন্তন বলেন, “আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস গণেশবাবুকে খুন করা হয়েছে। তৃণমূল এবং পুলিশের ষড়যন্ত্রেই এই খুন। রবিবার রাতেই ওই বাড়ির সকলকে বন্দুক দেখিয়ে তুলে আনে পুলিশ। খুনের যথাযথ তদন্ত তো বটেই, ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসডিপিও-কে সরাতে হবে। না হলে দলের যুব মোর্চার তরফে ওই দিন থেকে সব থানার সামনে লাগাতার বিক্ষোভ চলবে।”

এ প্রসঙ্গে এসডিপিও(আরামবাগ) কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। ঘটনাচক্রে, এ দিনই তাঁর এবং জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার তথাগত বসুর বদলির নির্দেশ এসেছে। এসডিপিও(আরামবাগ) নির্মলবাবু বলেন, “এটা রুটিন বদলি।”

অপহরণের অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, “অপহরণের রাজনীতি বিজেপি করে। আমাদের দল ওই অপসংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না।” গণেশের পরিবারের লোকেরা অভাব অভিযোগ জানাতে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন গোঘাটের বিধায়ক মানস মজুমদার।

রবিবার সকাল ৬টা নাগাদ গোঘাট রেলস্টেশন সংলগ্ন একটি গাছের ডাল থেকে গলায় গামছার ফাঁস দেওয়া অবস্থায় গণেশের ঝুলন্ত দেহ মিলেছিল। ঘটনাকে ঘিরে দফায় দফায় অশান্ত হয় আশপাশের এলাকা। তৃণমূলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তোলে বিজেপি। তৃণমূল পাল্টা দাবি করে, মৃত্যুর পিছনে রয়েছে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।

তারপরে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। এ দিন ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, রিপোর্টে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছে। বিজেপির দাবি, রিপোর্ট ভুয়ো।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর রবিবার সন্ধ্যায় গণেশের মৃতদেহ গ্রামে ফেরে। পুলিশের উপস্থিতিতে রাতে গ্রামবাসীরাই মৃতদেহ সৎকার করেন। সে সময়েই বিধায়ক এবং তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃতের পরিবারে গিয়ে তাঁর দুই ছেলে এবং স্ত্রীকে সমবেদনা জানান এবং তাঁদের অভাব-অভিযোগ শুনতে চান বলে গ্রামবাসীদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC BJP CONFLICT
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE