Advertisement
E-Paper

পিএফে টাকা জমছে? চিন্তায় ভাটা-শ্রমিকেরা

কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শ্যামপুরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রায় দেড়শো ইটভাটার কয়েক হাজর শ্রমিকের বেশিরভাগেরই আশঙ্কা একই রকম। কারণ, প্রভিডেন্ড ফান্ড (পিএফ) অ্যাকাউন্টে তাঁদের টাকা জমা পড়ে না।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:১৬

প্রায় তিরিশ বছর ধরে শ্যামপুরের একটি ইটভাটায় কাজ করছেন নরেশ জানা। আর কয়েক বছর পরে অবসর নেবেন। তখন হয়তো তাঁকে ফিরতে হবে খালি হাতে!

কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শ্যামপুরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রায় দেড়শো ইটভাটার কয়েক হাজর শ্রমিকের বেশিরভাগেরই আশঙ্কা একই রকম। কারণ, প্রভিডেন্ড ফান্ড (পিএফ) অ্যাকাউন্টে তাঁদের টাকা জমা পড়ে না। এ জন্য ভাটা-মালিকদেরই দুষছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন অজুহাতে মালিক-পক্ষ বিষয়টি এড়িয়ে যান। ভাটা-মালিকদের সংগঠন অবশ্য অভিযোগ মানেনি।

প্রভিডেন্ট ফান্ড কমিশনারের কলকাতা আঞ্চলিক দফতর সূত্রের খবর, স্থায়ী, অস্থায়ী, মরসুমি সব ধরনের ভাটা-শ্রমিকের পিএফ প্রাপ্য। বছর দশেক আগে সেই আইন চালু হয়। নিয়মানুযায়ী শ্রমিকদের মজুরি থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা কেটে নেওয়ার কথা ভাটা-মালিকদের। সেই পরিমাণ টাকা দেবেন মালিকেরাও। মিলিত এই টাকা জমা পড়বে শ্রমিকদের প্রভিডেন্ড ফান্ডে। ৬০ বছর বয়স হয়ে গেলে শ্রমিকেরা সেই টাকা সুদ-সহ ফেরত পাবেন সরকারের কাছ থেকে। দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, প্রভিডেন্ড ফান্ড তহবিলে যদি শ্রমিকদের টাকা জমা না-দেওয়া হয়, তা হলে ভাটা-মালিকেরা বেআইনি কাজ করছেন।

শ্যামপুরে রূপনারায়ণ, দামোদর এবং হুগলি নদীর চরে ভাটাগুলি অবস্থিত। এক-একটি ভাটায় গড়ে ১৫০ শ্রমিক কাজ করেন। ভাটা চলে অক্টোবর থেকে জুন মাস পর্যন্ত। সেই সময়ের জন্যই বেশিরভাগ শ্রমিক কাজ করেন। অল্প কিছু শ্রমিক আছেন, যাঁরা বছরভর কাজ করেন। প্রতিটি ভাটায় গড়ে পাঁচ জন করে করণিকও আছেন। প্রতি বছর ভাটা চালু হওয়ার আগে মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক ও করণিকদের বেতন বৃদ্ধি সংক্রান্ত চুক্তি হয়। কিন্তু বহু শ্রমিকই অবসরের সময়ে খালি হাতে ফেরেন বলে অভিযোগ। অবসরে চরম আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যে পড়েন তাঁরা।

ভাটা-শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনের অভিযোগ, যেহেতু ভাটাগুলি একটি নির্দিষ্ট মরসুমে চালু থাকে, তাই তার সুযোগ নেন মালিকেরা। শ্রমিক-করণিকদের পিএফে টাকা জমা দেওয়া হয় না। প্রভিডেন্ট ফান্ড দফতরের একাংশের সঙ্গে ভাটা-মালিকদের যোগসাজশের অভিযোগও তুলেছে সংগঠনগুলি। তাদের অভিযোগ, পিএফ অফিস থেকে লোকজন তদন্তে এলে নিজেদের আত্মীয়-স্বজনকে শ্রমিক-করণিক সাজিয়ে তাঁদের নামে মালিকেরা প্রভিডেন্ড ফান্ডের অ্যাকাউন্ট খুলে প্রকৃত শ্রমিকদের বঞ্চিত করেন।

শ্যামপুরের ইটভাটার প্রভাবশালী সংগঠন ফরওয়ার্ড ব্লক অনুমোদিত টিইউসিসি-র সভাপতি অসিতবরণ সাউ বলেন, ‘‘আমরা বহুবার ভাটা-মালিকদের সঙ্গে প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিষয়টি নিয়ে বসেছি। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে মালিক-প‌ক্ষ এড়িয়ে গিয়েছে।’’ পক্ষান্তরে, শ্যামপুর ভাটা-মালিক সংগঠনের সভাপতি বনদেব মাজির দাবি, ‘‘বহু শ্রমিককেই পিএফের আওতায় আনা হয়েছে। পিএফে শ্রমিকদের প্রদেয় অংশের টাকাও আমরাই দিয়ে দিই।’’ তা হলে অভিযোগ উঠছে কেন? বনদেববাবুর সাফাই, ‘‘অধিকাংশ শ্রমিকের কাগজপত্র ঠিক নেই। যাঁদের কাগজপত্র ঠিক আছে, তাঁদের পিএফের আওতায় আনা হয়েছে।’’

প্রভিডেন্ড ফান্ড কমিশনারের কলকাতা আঞ্চলিক দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, তাঁদের তরফ থেকে নিয়মিত ভাটাগুলিতে গিয়ে শ্রমিকদের প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা জমা পড়ছে কিনা তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখা হয়। ওই টাকা জমা না-পড়লে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। কোনও রকম অসঙ্গতি নিয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।

Brick Kiln Worker Provident Fund Money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy