সেই দুর্ঘটনাস্থল। (ইনসেটে) উপমা মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার, বঙ্কিম সেতুতে।
সেতুর ঢালে মোড় ঘুরতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল সরকারি বাস। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল একটি বেসরকারি বাস। দু’টির মাঝখানে পড়ে গিয়ে পিষে গেলেন এক তরুণী। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল তাঁর। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আর এক তরুণী।
শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার বঙ্গবাসী মোড়ের দিকে বঙ্কিম সেতুতে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম উপমা মুখোপাধ্যায় (২৭)। বাড়ি রাজবল্লভ সাহা লেনে। উপমা রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী ছিলেন। আগামী জানুয়ারি মাসে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। এ দিন সল্টলেকে অফিস যাওয়ার পথে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় যে তরুণী গুরুতর আহত হয়েছেন, তাঁর নাম দেবলীনা রায়। তিনি বায়ো-টেকনোলজিতে এমএসসি-র দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। দেবলীনা আবার ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায়ের ছোট মেয়ে। তাঁকে প্রথমে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গ্রিন করিডর তৈরি করে নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। যানশাসনের ক্ষেত্রে হাওড়া সিটি পুলিশের ভূমিকার পাশাপাশি সরকারি বাসগুলির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে এ দিনের এই দুর্ঘটনা।
গত সাত বছর ধরে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য লন্ডভন্ড হয়ে রয়েছে হাওড়া ময়দান চত্বর। হাওড়া বা কলকাতার দিক থেকে আসা হাওড়া ময়দান রুটের বাসগুলির কোনও স্ট্যান্ড না থাকায় এখন বঙ্কিম সেতুই হয়ে দাঁড়িয়েছে অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড। পুলিশ সূত্রের খবর, নিয়ম অনুযায়ী বঙ্গবাসী মোড়ের আগে এক জায়গায় বাসগুলি ঘোরানোর কথা। কিন্তু অভিযোগ, সরকারি বাসগুলি নিয়ম না মেনে ইচ্ছেমতো সেতুর ময়দানমুখী ঢালের কাছে বিপজ্জনক ভাবে বাস ঘুরিয়ে নেয়। আর তা করতে গিয়েই এ দিন এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, সেতুর উপরেই বাসগুলি যাত্রী তোলে। তাই ওই দুই তরুণীও বাস ধরতে সেতুর উপরের কাট-আউটের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখনই ওই সরকারি বাসটি সেই কাট-আউট দিয়ে ঘোরানোর সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিছন দিকে গড়িয়ে যেতে থাকে। সেই সময়ে কাছেপিঠে কোনও পুলিশকর্মী ছিলেন না বলেই অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বেসরকারি বাসের কন্ডাক্টর বলেন, ‘‘ব্রেক ফেল করার পরে সরকারি বাসটি প্রায় ৫০ ফুট গড়িয়ে এসেছিল। সেই সময়ে ওই বাসের কন্ডাক্টর চিৎকার করে সবাইকে সতর্ক করতে থাকেন। তাতেই বেশ কয়েক জন পথচারী অল্পের জন্য রক্ষা পান। চিৎকার শুনে ১৫-২০ জন পথচারী সরে গেলেও পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বেসরকারি বাসের সামনে পড়ে যান ওই দুই তরুণী। আর তখনই সরকারি বাসটি দু’জনকে পিষে দেয়।’’
পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার পরেই ওই দুই তরুণীকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা উপমাকে মৃত ঘোষণা করেন। দেখা যায়, দেবলীনার বাঁ পায়ের আঘাত গুরুতর। সেই পায়ে অস্ত্রোপচারের পরে গ্রিন করিডর করে তাঁকে এসএসকেএমে আনা হয়।
পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার পরে ঘণ্টা তিনেক উপমার পরিচয় জানা যায়নি। পরে এটিএম কার্ডের সূত্র ধরে তাঁর নাম-ঠিকানা উদ্ধার করে বাড়িতে খবর দেওয়া হয়।
পুলিশের ফোন পেয়েই হাওড়া থানায় ছুটে আসেন তাঁর বাবা মনোজিৎ মুখোপাধ্যায় ও মা শাশ্বতী মুখোপাধ্যায়। তাঁরা মেয়েকে শনাক্ত করার পরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ দিন থানায় বসে মনোজিৎবাবু বলেন, ‘‘আগামী জানুয়ারী মাসে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সব কেনাকাটা চলছে। বিয়েবাড়ি ভাড়া নেওয়াও হয়ে গিয়েছে। আমি বেঁচে থাকতে এমন ঘটনাও দেখতে হল?’’
পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পরে সরকারি বাসের চালক এবং কন্ডাক্টর পলাতক। বেসরকারি বাসটির চালককে আটক করা হয়েছে। সরকারি বাসচালকের খোঁজ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy