নিহত সঞ্জয় ভাদুড়ি।
জেলা জুড়ে খুন-জখম, ডাকাতি রুখতে পুলিশের নানা আশ্বাসেও পরিস্থিতির যে তেমন উন্নতি হয়নি ফের তার উদাহরণ সামনে এল।
মঙ্গলবার রাতে নিজের দোকানেই খুন হলেন এক ব্যবসায়ী। শ্রীরামপুরের পিয়ারাপুর পঞ্চায়েতের সিমলায় নিহত ওই ব্যবসায়ীর নাম সঞ্জয় ভাদুড়ি (৪৮)। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, আক্রোশেই কেউ তাঁকে খুন করেছে। খুনের অভিযোগ দায়ের হলেও রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি ওই পরিবারের পরিচিত। প্রাথমিক ভাবে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের আঁচ পাওয়া গেলেও সব দিক খোলা রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল পরীক্ষার পর এটা স্পষ্ট যে, আততায়ীর ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্য ছিল না। কেননা, স্টুডিওতে দামি ক্যামেরা, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার থাকলেও তাতে হাত পড়েনি। সঞ্জয়বাবুর মোটরবাইকটিও স্টুডিওর সামনেই রাখা ছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সঞ্জয়বাবুর বাড়ি পিয়ারাপুর পঞ্চায়েতেরই বাঙ্গিহাটির মাদপুরে। পেশায় ফটোগ্রাফার ছিলেন তিনি। বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে সিমলায় তাঁর স্টুডিও ছিল। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় প্রতিদিনই তিনি গভীর রাত পর্যন্ত স্টুডিওয় বসে কাজ করতেন। এমনকী মাঝেমধ্যে ভোররাতে বাড়ি ফিরতেন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ তিনি বাড়ি থেকে বের হন। রাত ৮টা নাগাদ স্টুডিওয় যান। বুধবার ভোরে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছেই তাঁর খুন হওয়ার খবর পান পরিবারের লোকজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ কয়েক জন দেখেন স্টুডিওর দরজা খোলা। ভিতরে চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা ঝুঁকিয়ে পড়ে সঞ্জয়বাবুর ক্ষতবিক্ষত দেহ। পেটের উপর থেকে গলা পর্যন্ত কোপানোর অজস্র চিহ্ন। চার দিক রক্তে ভেসে যাচ্ছে। স্থানীয় এক বাসিন্দাই শ্রীরামপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এসডিপিও সুবিমল পাল এবং আইসি নন্দদুলাল ঘোষ ঘটনাস্থলে তদন্তে যান। দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়। নিহতের বাড়িতেও যান তাঁরা। পরে নিহতের স্ত্রী লোপামুদ্রা দেবীকে থানায় ডেকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, তদন্তে জানা গিয়েছে সঞ্জয়বাবুর এক নিকটাত্মীয়ার সঙ্গে অন্য এক যুবকের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। সঞ্জয়বাবু তাতে আপত্তি করেন। ওই আত্মীয়াও সম্পর্ক ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন। তাতেই সঞ্জয়বাবুর উপর ওই যুবকের আক্রোশ তৈরি হয়। পুলিশের বক্তব্য, সেই আক্রোশ থেকেই সঞ্জয়বাবুকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। রাতেও সঞ্জয়বাবু স্টুডিওর দরজা খোলা রেখে কাজ করতেন। সেই জন্য আততায়ীকে ভিতরে ঢুকতে বেগ পেতে হয়নি। অতর্কিতে আক্রমণ করায় প্রতিরোধের বিশেষ সুযোগ পাননি সঞ্জয়বাবু। কোপানোর ধরন দেখে পুলিশ মনে করছে, চপার জাতীয় কোনও অস্ত্র দিয়ে ওই কাজ করা হয়েছে। তবে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি।
প্রতিবেশীরা জানান, এলাকায় ভাল মানুষ, পরোপকারী হিসাবে সঞ্জয়বাবুর পরিচিতি ছিল। খুনির উপযুক্ত শাস্তি চেয়েছেন তাঁরা। স্বামীর হত্যাকারীর কড়া শাস্তি চেয়েছেন লোপামুদ্রাদেবীও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy