Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আন্দোলন হোক অহিংস পথেই, জুম্মার নমাজের আগে বার্তা ইমামদের

শুক্রবার উলুবেড়িয়া জামে মসজিদ থেকে জুম্মার নমাজের আগে এমনই বার্তা দিলেন ইমাম মুফতি নাসিমুদ্দিন কাশেমি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:১২
Share: Save:

নয়া নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসির বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে আন্দোলনের জোয়ার। সেই স্রোতে পুরোপুরি অহিংস এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে সামিল হওয়ার ডাক দিলেন ইমামরা।

শুক্রবার উলুবেড়িয়া জামে মসজিদ থেকে জুম্মার নমাজের আগে এমনই বার্তা দিলেন ইমাম মুফতি নাসিমুদ্দিন কাশেমি। শহরের সব থেকে বড় এই মসজিদে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ নমাজ পড়েন। সেখানে দাঁড়িয়ে ইমাম বলেন, ‘‘নয়া নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে আন্দোলন অবশ্যই দরকার। সেই আন্দোলনে যাঁরা আছেন, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তাঁদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে। এটা কোনও সম্প্রদায়ের একার আন্দোলন নয়। কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনের নামে যেভাবে হিংসা ছড়ানো হয়েছে সেটাও কোন‌ও পথ হতে পারে না।’’

গত শুক্রবারেই নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উলুবেড়িয়ায় মুম্বই রোড অবরোধ করা হয়। জ্বালানো হয় টায়ার। অবরোধ চলে কয়েক ঘন্টা ধরে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সব থেকে অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটে উ‌লুবেড়িয়া স্টেশনে। পাথর মারা হয় চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। সেইসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই শুক্রবার জুম্মার নমাজের দিনে ইমাম বলেন, ‘‘ইসলাম হিংসা সমর্থন করে না। যে কেউ ডাকলেই আন্দোলনে চলে গিয়ে নাশকতামূলক কাজ করা মানে দেশের ক্ষতি। অহিংস পথে আন্দোলন হলে তবেই তা শক্তিশালী হয়।’’

গত শুক্রবার শুধু উলুবেড়িয়া নয়, বাগনানেও দীর্ঘক্ষণ মুম্বই রোড অবরোধ করা হয়। তারপর থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের গরফা সেতু, বাঁকড়া, সাঁকরাইলের চাঁপাতলা, সাঁকরাইল রেলস্টেশনে গোলমাল হয়। বুধবার রাতে সাঁকরাইলেরই তিনকপাটি পোলের কাছে ঝামেলা হয়েছিল। শুক্রবার তিনকপাটি পোল সংলগ্ন মসজিদেও নমাজের আগে হাজার দুই মানুষের সমাবেশে ইমাম মৌলানা আবুল কাদের বলেন, ‘‘বহিরাগতরা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলনে সামিল হওয়ার নাম করে হিংসা ছড়াতে যাতে না পারে, সেটা আমাদেরই দেখতে হবে। দেখতে হবে সাম্পদায়িক সম্প্রীতি যেন নষ্ট না হয়। ইসলাম আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়।’’

ডোমজুড়ের শাঁখারিদহ জুম্মা মসজিদেও নমাজ পড়তে আসা হাজার খানেক মানুষের সমাবেশে ইমাম শেখ সিদ্দিকুল্লা বলেন, ‘‘আন্দোলনের নামে একজনও পুলিশ বা সেনা যদি আহত হন সেটা দেশের ক্ষতি। তা বরদাস্ত করা হবে না।’’

শুধু এই তিন ইমামই নন, জেলা জুড়ে প্রতিটি মসজিদে জুম্মার নমাজের আগে ইমামরা শান্তি বজায় রেখে আন্দোলনে সামিল হওয়ার কথা বলেন। বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসন ও পুলিশের কর্তারা ইমামদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতামন্ত্রীরা এলাকায় টহলদারিতে ছিলেন। প্রশাসনও সজাগ ছিল। সাঁকরাইলে পর পর হিংসাত্মক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুপুরে সমবায়মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি (সদর) অরূপ রায় প্রশাসনিক বৈঠকও সেরে নেন।

শুক্রবার জেলা ছিল শান্ত। অরূপবাবু বলেন, ‘‘নয়া নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। এটা যে শুধু সংখ্যালঘুদের ব্যাপার নয় সেটা তাঁদের বোঝানো দরকার। এই বার্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজে রাস্তায় নেমেছেন। অহিংস পথে আন্দোলন করছেন। সেটাই যাতে অন্যরাও করেন আমরা সবাইকে তা বোঝাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CAA NRC Uluberia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE