কড়া নজরে। বাগনানের একটি বুথের বাইরে। ছবি: সুব্রত জানা।
‘রাস্তে কা উপর সে হটাইয়ে আপকা গাড়ি। আপ ভি হট যাইয়ে। নেহি তো চালা দুঙ্গা।’
বুথের নজরদারিতে ব্যস্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের লাঠি রোদে আরও চকচক করে উঠল। জংলা পোশাককে বোঝানো হল, এই গাড়ি সংবাদ মাধ্যমের। যাঁরা এখানে হাজির তাঁরাও সংবাদমাধ্যমের লোক। তাতেও রেহাই নেই। উত্তর এল ‘ঠিক হ্যায়। লেকিন বুথ সে দোওশো মিটার দূর পর গাড়ি রাখিয়ে। কাম খতম করকে আপ ভি উধার চলা যাইয়ে। ইধার গ্যাদারিং মত কিজিয়ে।’’
হাওড়ায় আমতা বিধানসভা কেন্দ্রের জয়পুরের ১৩৮ নম্বর পারবাকসি প্রাথমিক স্কুলের বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাপটের এটাই শেষ নয়। বুথে এদিন যেমন ছিল চার জন জওয়ানের নজরদারি। অন্য দিকে ছিল রেসপন্স টিম (আরটি), কুইক রেসপন্স টিমের (কিউ আর টি) এবং হাইলি রেসপন্সিভ ফ্লাইং স্কোয়াড (এইচআরএফএস)-এর দৌড়াদৌড়ি। বুথ এবং বুথের ২০০ মিটারের মধ্যে তো বটেই, এমনকী গোলমালের খবর পেলে গ্রামের ভিতরেও ঢুকে পড়তে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সব কিছু ঠিকঠাক চলছে কিনা তা নিজের চোখে পরখ করছেন পর্যবেক্ষক, এমন ছবিও এদিন দেখলেন ভোটাররা।
বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ এখান থেকেই শব্দ পাওয়া গেল দূরে কোথাও বোমা পড়ার। গ্রামবাসীরা জানালেন প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে খড়িগেড়িয়া মাঠে বোমা পড়ছে। পুড়ে গিয়েছে ধানের গাদা। লোকজন সন্ত্রস্ত। কংগ্রেস প্রার্থী অসিত মিত্রের কাছে খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির হলেন আমতা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক এম ভি সাবিত্রী। বুথে ঢুকে দেখলেন, ভোট পড়ছে। তবে ধীর লয়ে। সেক্টর অফিসার অর্ঘ্য সামন্তকে তিনি বললেন, ‘‘হয়ত বোমা ফেলে ভোটারদের সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা চলছে। চলুন ঘটনাস্থলে যেতে হবে।’’ সেক্টর অফিসার বলার চেষ্টা করলেন, ‘‘যেখানে বোমা পড়েছে সেটা আমার সেক্টরে পড়ে না।’’ ধমকে উঠলেন পর্যবেক্ষক। বললেন, তাতে কী চলুন আপনার সঙ্গে আমিও যাবো। গ্রামবাসীদের বোঝাবো তাঁরা যেন ভয় না করেন। ভোটটা যেন দিতে আসেন।’’
গাড়ি থেকে নেমে ঢালাই রাস্তা ধরে প্রায় দেড় কিলোমিটার যাওয়ার পরে মিলল ঘটনাস্থল। এই এলাকার কুইক রেসপন্স টিম পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থানা থেকে আসা রাজ্য পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর ইজাজুল হক। গ্রামে ঢোকার পথে তাঁকে বেশ ভর্ৎসনা করলেন পর্যবেক্ষক। তিনি বললেন, ‘‘প্রায় দু’ঘন্টা আগে বোমা পড়ার ঘটনাটি ঘটেছে। অথচ আপনার কুইক রেসপন্স টিম সেখানে গেল না। শুধু বড় রাস্তায় টহলদারি করে কী হবে? গ্রামের ভিতরে যাননি কেন? মানুষের আতঙ্ক দূর করার দায়িত্ব ছিল আপনাদের। শুধু বড় রাস্তায় ঘুরলে তা হবে?’’ ইজাজুলসাহেবের তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচির মত অবস্থা। বার বার বলছেন, ‘‘ভুল হয়ে গিয়েছে ম্যাডাম’’
গ্রামে এসে দেখা গেল অন্তত দু’টি বোমা ফেটেছে। তবে ধানের গাদা পোড়েনি। ধান জমিতেই পড়েছিল বোমার অংশবিশেষ। সেগুলি উদ্ধার করে সিজার লিস্টে তুলে তবে কাজ মিটল ইজাজুল সাহেবের। তারপরেই পর্যবেক্ষক গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন। তাঁদের বোঝালেন তাঁরা যেন ভোট দিতে যান। আতঙ্ক ভুলে গ্রামবাসীরা পা বাড়ালেন বুথের দিকে।
এ দিন বোমায় জখম হয়ে জয়পুরের অমরাগড়ি বিবি ধর হাসপাতালে ভর্তি হন এক মহিলা-সহ তিন জন। তাঁরা দলীয় সমর্থক বলে তৃণমূলের দাবি। বাড়ি স্থানীয় রাজবংশী পাড়ায়। তৃণমূলের অভিযোগ, সিপিএম ও কংগ্রেস এই বোমা মেরেছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে কংগ্রেস এবং সিপিএম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy