আলোকিত: ইতালি দূতাবাসের প্রদর্শনীতে চন্দননগরের আলো। নিজস্ব চিত্র
ফের একবার বিশ্ব-দরবারে চন্দননগরের আলো।
‘ইন্ডিয়া আর্ট ফেয়ার’ উপলক্ষে বুধবার থেকে দিল্লিতে ইতালি দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সে দেশের প্রদর্শনী উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে চন্দননগরের আলোয়। যে আলোর বিষয়— ‘সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনে কাঁটাতার থাকতে পারে না। সমস্ত মানুষ একই গ্রহের জীব’। তাই আলোয় ফুটে উঠেছে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়াজাল ভেঙে ঢুকছেন মানুষ।
এই আলোর বিষয়-ভাবনা ইতালির মিলানের ডিজাইনার আন্দ্রে অ্যানাসতাসিও-র। তাতে রূপ দিয়েছেন চন্দননগরের অন্যতম আলোকশিল্পী বাবু পাল। তিনি জানান, সপ্তাহ তিনেক ধরে জনা পনেরো শিল্পী ওই কাঠামো তৈরি করেছেন। কাঠামোটি ৩৭ ফুট লম্বা, ৮ ফুট চওড়া। মাঝে ১৩ ফুট অংশ ফাঁকা। প্রায় ৫০ হাজার এলইডি বাল্ব লাগানো হয়েছে। পঞ্চাশোর্ধ্ব এই আলোকশিল্পীর দাবি, ‘‘এলইডি-র তীক্ষ্মতা নয়, টুনি বাল্বের নরম আলোর ছোঁয়া মিলছে এই আলোকসজ্জায়। চোখের পক্ষে যাতে আরামদায়ক আলো হয়, সে জন্য এলইডি বাল্বগুলি বিশেষ খাপে ভরে দেওয়া হয়েছে। আলো ওই খাপ থেকে যখন চুঁইয়ে যখন বেরোচ্ছে, তখন চন্দননগরের বিখ্যাত টুনি বাল্বের আস্বাদ মিলছে। আমরা বলি, ক্যাপ টুনি।’’
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মধ্যস্থতায় বাবু ওই কাজ করছেন। সংস্থাটির সম্পাদক সোমনাথ পাইন জানান, ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে। অনেক বিদেশি আসবেন। চন্দননগরের ঐতিহ্যশালী আলো তথা বাংলার সৃজনশীলতা বিশ্বের দরবারে ফুটে উঠবে। বাবু জানান, গত নভেম্বরে ওই ইতালীয় ডিজাইনার চন্দননগরের বোরো চাঁপাতলায় তাঁর স্টুডিও-তে এসে আলোর সাজসজ্জা দেখে যান। বাবুর কথায়, ‘‘এই প্রদর্শনীতে ইতালির সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক
মেলবন্ধনও ঘটছে।’’
বিদেশের আঙিনায় চন্দননগরের আলোর খ্যাতি অবশ্য অনেক দিনের। এ শহরে বহু আলোকশিল্পী রয়েছেন। শুধু বাবুর আলোই সাত বার গিয়েছে দুবাইয়ের ‘শপিং ফেস্টিভ্যাল’-এ। ঢাকার দুর্গাপুজো বা রাশিয়ার হরেকৃষ্ণ মন্দিরও সেজেছে তাঁর আলোয়। পুজোর মরসুমে তিনি দম ফেলার ফুরসত পান না। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকেও তাঁর আলোর বরাত আসে। ২০১৬ সালের দীপাবলিতে আরব সাগরের পাড় থেকে বিগ-বি’র ডাক পেয়েছিলেন তিনি। মুম্বইয়ে অমিতাভ বচ্চনের তিনটি বাড়ি— ‘প্রতীক্ষা’, ‘জলসা’ এবং ‘জনক’ সেজেছিল বাবুর আলোতে। রাজ্যের বিভিন্ন পুজো মণ্ডপের পাশাপাশি দুর্গাপুজোর কার্নিভালে রেড রোডকেও আলোয় সাজিয়েছেন তিনি।
ক’দিন আগে নিজের স্টুডিওতে বসে শিল্পী জানান, তাঁদের তিন পুরুষের ব্যবসা ছিল লোহার কারবার। কলকাতার বড়বাজারে দোকান ছিল। বিকম পাশের পরে তিনি ওই দোকানেই বসতেন। সেই সময় এক বন্ধুকে আলোর ব্যবসায় টাকা ধার দিয়েছিলেন। বন্ধু ব্যবসা তুলে দেন। টাকার বদলে আলো দিয়ে দেন বাবুকে। এর পরে তিনিই আলোর ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু দু’দিক ভাল ভাবে সামলানো মুশকিল হত। শেষ পর্যন্ত বছর দশেক আগে দোকান বিক্রি করে পুরোপুরি আলোর ব্যবসায় মন দেন।
এর পর থেকে আর পিছনে ফিরতে হয়নি বাবুকে। নতুন নতুন আলোর কারিকুরিতে চমকে দিচ্ছেন সকলকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy