Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দুই নেতার টক্কর, গুলি

দু’জনেই রাজনৈতিক জমানা বদলের সময়ে দল বদলেছিলেন। দু’জনেই পরিবহণ ব্যবসায়ী। সেই দু’জনেরই টক্করে উত্তপ্ত হল দক্ষিণপূর্ব রেলের হাওড়ার শালিমার ইয়ার্ড। সোমবার ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন তাঁদেরই এক জনের ভাই ও ভাগ্নে। রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ শালিমার ইয়ার্ডের ১ নম্বর গেটের বটতলায় মালপত্র ওঠানো-নামানোর কাজ চলছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩২
Share: Save:

দু’জনেই রাজনৈতিক জমানা বদলের সময়ে দল বদলেছিলেন। দু’জনেই পরিবহণ ব্যবসায়ী। সেই দু’জনেরই টক্করে উত্তপ্ত হল দক্ষিণপূর্ব রেলের হাওড়ার শালিমার ইয়ার্ড। সোমবার ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন তাঁদেরই এক জনের ভাই ও ভাগ্নে।

রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ শালিমার ইয়ার্ডের ১ নম্বর গেটের বটতলায় মালপত্র ওঠানো-নামানোর কাজ চলছিল। তখন দু’টি মোটরবাইকে আসা চার দুষ্কৃতী খুব সামনে থেকে দুই যুবককে গুলি করে সকলের চোখের সামনে দিয়েই পালিয়ে যায়। এমন একটি সুরক্ষিত জায়গায় এই ঘটনা ঘটায় শালিমার এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। ঘটনাস্থলে যান হাওড়া সিটি পুলিশ ও রেল পুলিশের পদস্থ কর্তারা।

রেল পুলিশ জানায়, গুলিবিদ্ধ দুই ব্যক্তির নাম বিনোদকুমার সিংহ ও রাজেশকুমার সিংহ। বিনোদ হাওড়া পুরসভার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের কাউন্সিলর তথা শালিমার ইয়ার্ডের একটি বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার মালিক বিনয় সিংহের ভাই। রাজেশ বিনয়ের ভাগ্নে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দু’জনকেই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইয়ার্ডেরই আর এক পরিবহণ সংস্থার মালিক প্রদীপ তিওয়ারি ও তাঁর তিন ভাইয়ের নামে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছেন বিনয়বাবু।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রদীপ ও বিনয়ের রেষারেষি দীর্ঘদিনের। প্রদীপ এক সময়ে হাওড়া পুরসভার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে বাম সমর্থিত জনতা দল ইউনাইটেডের কাউন্সিলর ছিলেন। পরে দল পাল্টে গত পুরভোটে তৃণমূলের হয়ে ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়ান তাঁরই ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ বিনয়। বিনয় প্রদীপকে হারিয়ে ওই ওয়ার্ড থেকে জেতেন এবং পরে তিনিও দল পাল্টে তৃণমূলে যোগ দেন। পুলিশ জানায়, এর পরেই দু’জনের শত্রুতা চরমে ওঠে।

এ দিনের ঘটনার পরে পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত প্রদীপ বেপাত্তা। যদিও রাতে ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘নিবার্চনে হেরে গেলেও আমি এখনও তৃণমূলই করি। চক্রান্ত করে আমাকে এবং আমার ভাইদের ফাঁসানো হচ্ছে।’’ প্রদীপ এ কথা দাবি করলেও তৃণমূলের হাওড়া জেলা সভাপতি (শহর) তথা রাজের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘নিবার্চনে হেরে প্রদীপ দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি। দলেও আর নেই।’’

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর বিনয় বলেন, ‘‘ভোটে হারার পর থেকেই ও নানা ভাবে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছিল। আজ সেটা করেই দিল।’’

ঘটনার প্রতিবাদে এবং কমর্চারীদের নিরাপত্তার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধমর্ঘটের ডাক দিয়েছেন হাওড়া জেলা শালিমার লরি ও টেম্পো অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি কল্পনাথ রাই বলেন, ‘‘গত ৪০ বছর ধরে আমি এই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। এমন আগে কখনও ঘটেছে বলে শুনিনি। অবিলম্বে ইয়াডের্র নিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।’’

খড়্গপুরের রেল পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘জায়গাটা রেলরক্ষী বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। তবে এই ঘটনার পর আলাদা পুলিশ পিকেট বসেছে। আলাদা নজরদারিরও ব্যবস্থা হচ্ছে। অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE