Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
মৃত্যুঞ্জয়-খুনে এখনও অধরা ১৪ জন
Murder

আমি আসছি, পোস্ট অধরা অভিযুক্তের

ওই খুনের পরে ধনেখালিতে তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দল বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েতের রাশ কোন পক্ষের হাতে থাকবে, তা নিয়েই ওই ঘটনা বলে তৃণমূলের একাংশ এবং নিহতের আত্মীয়দের দাবি। অভিযুক্তেরা অবশ্য দাবি করেছেন, এলাকায় একক কর্তৃত্ব স্থাপনের জন্য রামেন্দু মিথ্যা রটাচ্ছেন‌।

হুমকি: এই পোস্ট ঘিেরই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র

হুমকি: এই পোস্ট ঘিেরই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল ও দীপঙ্কর দে
ধনেখালি শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

পুলিশের খাতায় তাঁরা পলাতক। তাঁদের খোঁজে পুলিশ তল্লাশি চালাছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদেরই একজনের হুমকি-পোস্ট!

ধন‌েখালির তৃণমূল নেতা মৃত্যুঞ্জয় বেরা খুনে অভিযুক্ত দলীয় নেতা বিশ্বজিৎ সাঁতরার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি বাড়ির সামনে ভাঙচুরের ছবি এবং উপরে ওই হুমকি-পোস্ট ঘিরে সোমবার সকালে শোরগোল হয় এলাকায়। হুমকিতে লেখা, ‘ধনেখালিতে যে অমানবিক ঘটনা ঘটেছে তাতে আমরা খুবই শোকাহত। কিন্তু বিনা কারণে যে সমস্ত নেতা পরিকল্পনামাফিক আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন, আপনারা ভুল করছেন। আমার ও আমাদের দলের সকলের বাড়ি যাঁরা ভেঙেছেন বা পুড়িয়েছেন ও মারধর করেছেন, আপনারা মনে রাখবেন, আমি আসছি।’’

দুপুরের দিকে লেখাটি ওই অ্যাকাউন্ট থেকে মুছে দেওয়া হলেও বিষয়টি পুলিশকে জানান তৃণমূল নেতা রামেন্দু সিংহরায়। পুলিশ জানিয়েছে, পোস্টটি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিশ্বজিতের বক্তব্য জানা যায়নি। তাঁর মোবাইল বন্ধ ছিল।

গত ২৩ মে দুপুরে ধনেখালির গোপীনাথপুর-২ পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান তথা এ বারের জয়ী তৃণমূল সদস্য মৃত্যুঞ্জয় আক্রান্ত হন। ব্লক অফিস থেকে মোটরবাইকে ফেরার পথে তাঁকে মারধর করা হয়। তাঁর স্ত্রী শিপ্রা দলেরই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর ১৫ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করে‌ন। শুক্রবার মৃত্যুঞ্জয় মারা যান। এর পরে অভিযুক্তদের বাড়ি-দোকানে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে নিহতের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে। মৃত্যুঞ্জয় খুনে অভিযুক্ত চিত্তরঞ্জন সাঁতরাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে, বাকি অভিযুক্তেরা অধরা। চিত্তরঞ্জনের ভাই, বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য তথা এ বারের জয়ী প্রার্থী নিত্যানন্দও অভিযুক্ত। বিশ্বজিৎ নিত্যানন্দের ছেলে। দলের গোষ্ঠী-রাজনীতিতে সাঁতরা পরিবার দলের নেতা মুন্সি সাকায়েত হোসেনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। মৃত্যুঞ্জয় ছিলেন‌ রামেন্দুর অনুগামী।

ওই খুনের পরে ধনেখালিতে তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দল বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েতের রাশ কোন পক্ষের হাতে থাকবে, তা নিয়েই ওই ঘটনা বলে তৃণমূলের একাংশ এবং নিহতের আত্মীয়দের দাবি। অভিযুক্তেরা অবশ্য দাবি করেছেন, এলাকায় একক কর্তৃত্ব স্থাপনের জন্য রামেন্দু মিথ্যা রটাচ্ছেন‌।

মাস আটেক আগে এক ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগেও বিশ্বজিৎকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তবে মৃত্যুঞ্জয়কে মারধরের ঘটনায় তাঁরা বা সাকায়েত জড়িত নন বলে বিশ্বজিতের দাবি। রবিবার রাতে তিনি ফোনে দাবি করেন, ঘটনার দিন (২৩ মে) তিনি বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, মৃত্যুঞ্জয় জখম অবস্থায় মাটিতে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি তিনি ভিলেজ-পুলিশকে জানান।

বিশ্বজিতের অভিযোগ, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে আমাদের বাড়ি-দোকানে হামলা করা হল। প্রয়োজনে সিআইডি বা সিবিআই তদন্ত হোক। সত্যি সামনে আসুক। রামেন্দু সিংহরায় এ সব ঘটাচ্ছেন। ওঁকে ছেড়ে অনেকে আমাদের গোষ্ঠীতে আসাতেই ওঁর রাগ।’’ মৃত্যুঞ্জয়ও বিরোধী এবং দলের লোকজনের উপর অত্যাচার করেছেন বলে তাঁর দাবি। অভিযোগ উড়িয়ে রামেন্দুর বক্তব্য, ‘‘এলাকায় নেতৃত্ব দিই বলে মিথ্যা বলছে আমার নামে। লোকমুখে শুনছি, তিন জন ওদের টার্গেট ছিল। মৃত্যুঞ্জয়কে মেরে দিল। আমিও টার্গেট।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Facebook Post Controversy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE