মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করোনা সংক্রমণ রুখতে উঠেপড়ে লেগেছেন। কিন্তু তাঁর দলেরই নেতাদের সংবিত ফিরছে কই?
দর্শকভরা চন্দননগরের কুটির মাঠে শনিবার একটি ফুটবল ম্যাচ হওয়া নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। কিন্তু তারপরেও রবি এবং সোমবার— দু’দিন মগরার ছোট খেজুরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে ফুটবল ম্যাচ হল এক তৃণমূল নেতার উদ্যোগে। এখানেও দেখা গেল মাঠ ভরা দর্শক। উদ্যোক্তারা অবশ্য দর্শকদের মাস্ক দিয়েছেন। খেলোয়াড়দের ডেটল-জলে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু যে কোনও রকম জমায়েত যেখানে নিষেধ করা হয়েছে, সেখানেই এই কাণ্ডজ্ঞানহীনতা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে। দর্শকদের মাস্ক পরতে সে ভাবে দেখাও যায়নি।
ওই ফুটবল প্রতিযোগিতার কথা জানতে পেরে এ দিনই অবশ্য মগরা-চুঁচুড়ার বিডিও আবেদা সুলতানা তা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। তবে, এ দিন পুরো খেলাই হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার থেকে প্রতিযোগিতা বন্ধ রাখা হচ্ছে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। করোনা-আতঙ্কে দেশ এবং রাজ্যব্যাপী যেখানে এত সতর্কতা এবং নিষেধাজ্ঞা, সেখানে কেন এই আয়োজন?
যাঁর উদ্যোগে এই প্রতিযোগিতা, তিনি মগরা-চুঁচুড়া ব্লকের যুব তৃণমূল সভাপতি দেবব্রত বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বছরই এই সময়ে আট দিনের এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। এলাকার বহু মানুষ এই প্রতিযোগিতা দেখার জন্য মুখিয়ে থাকেন। এ বার করোনার জন্য বাড়তি সতর্কতা নিয়েই প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। সরকারি নির্দেশ মেনে মঙ্গলবার থেকে প্রতিযোগিতা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরে সরকারি অনুমতি নিয়ে খেলা হবে।’’
যে কোনও রকম জমায়েতে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে, এ কথা বারবার বলছে স্বাস্থ্য দফতর। তাই এ রাজ্যেও স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ জাদুঘর, বিড়লা তারামণ্ডল, সায়েন্স সিটি। বন্ধ হয়ে গিয়েছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক খেলাও। তবু এক শ্রেণির মানুষের এখনও হুঁশ ফিরছে না।
সোমবার খেজুরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে গিয়ে দেখা গেল, মাঠ কানায় কানায় ভরা। আশপাশে দোতলা-তিনতলা বাড়ির ছাদেও দর্শক। রবিবার বিকেলে এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধন হয়েছিল চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের হাতে। ছিলেন জেলা তৃণমূলের যুব সভাপতি শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের অন্য নেতারাও। সোমবার খেলার দ্বিতীয় দিনে ছিলেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার স্বরূপ দাস। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী রবিবারেই জানিয়েছিলেন, করোনাভাইরাসের সতর্কতা হিসেবে এক জায়গায় বহু মানুষের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সমস্ত খেলার ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য।
তারপরেও এ দিন কী করে খেলার আয়োজন হয়, উঠছে প্রশ্ন।