Advertisement
১৮ মে ২০২৪
‘অস্বস্তি’ সিপিএমে

পাঁচ বছর ধরে পুরসভায় অনুপস্থিতিই অস্ত্র তৃণমূলের

তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত কাউন্সিলর। অথচ গত পাঁচ বছরে এক দিনের জন্যও পা রাখেননি পুরসভায়। উপস্থিত হননি কোনও বৈঠকে। অনুপস্থিতির এমন নজির আর কারও রয়েছে কি না, তাই নিয়েই সরগরম হুগলির রিষড়ার পুরভোট। শুধুমাত্র এই কারণেই এ বার প্রার্থী হিসেবে না থেকেও ভোটের ময়দানে রীতিমতো উপস্থিত সেখানকার প্রাক্তন পুরপ্রধান, বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা দিলীপ সরকার। বিষয়টি প্রচারেও অস্ত্র করেছে তৃণমূল। আর দিলীপবাবুর এমন ‘বেনজির গরহাজিরা’ই ভোটের ময়দানে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে তাঁর দল সিপিএমকে এবং অবশ্যই এ বারের দলীয় প্রার্থীকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রিষড়া শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৬
Share: Save:

তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত কাউন্সিলর। অথচ গত পাঁচ বছরে এক দিনের জন্যও পা রাখেননি পুরসভায়। উপস্থিত হননি কোনও বৈঠকে। অনুপস্থিতির এমন নজির আর কারও রয়েছে কি না, তাই নিয়েই সরগরম হুগলির রিষড়ার পুরভোট। শুধুমাত্র এই কারণেই এ বার প্রার্থী হিসেবে না থেকেও ভোটের ময়দানে রীতিমতো উপস্থিত সেখানকার প্রাক্তন পুরপ্রধান, বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা দিলীপ সরকার। বিষয়টি প্রচারেও অস্ত্র করেছে তৃণমূল। আর দিলীপবাবুর এমন ‘বেনজির গরহাজিরা’ই ভোটের ময়দানে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে তাঁর দল সিপিএমকে এবং অবশ্যই এ বারের দলীয় প্রার্থীকে।

পুরসভা সূত্রের খবর, সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য দিলীপবাবু ১৯৮১ সাল থেকে রিষ়ড়া পুরসভার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। তার মধ্যে ২৮ বছরই বামফ্রন্ট পরিচালিত পুরসভায় তিনিই ছিলেন চেয়ারম্যান। ফলে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনিই ছিলেন পুরসভার সর্বেসর্বা।

গত পুর নির্বাচনে বামফ্রন্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়। ২২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতে পুরপ্রধান থেকে সাধারণ কাউন্সিলর হন দিলীপবাবু। পুরসভার সঙ্গে তাঁর ‘নিবিড় সম্পর্কে’ও কার্যত ছেদ পড়ে যায়। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, কাউন্সিলর হিসেবে শপথ নিতে তিনি পুরভবনে যাননি। শ্রীরামপুরে মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে শপথ নেন। কাউন্সিলরদের একের পর এক সভার (বোর্ড অব কাউন্সিলরস মিটিং) জন্য তাঁকে চিঠি পাঠানো হলেও কখনওই তিনি হাজির হননি। আর এ বার প্রচারে সেই প্রসঙ্গ তুলেই কাউন্সিলার হিসাবে নিজের ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কাছে দিলীপবাবুর দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিরোধী সিপিএম প্রার্থীকে বেকায়দায় ফেলতে তৎপর তৃণমূল।

বিদায়ী পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, দিলীপবাবু যোগাযোগ না করায় তাঁরাই সরাসরি ওই ওয়ার্ডে পরিষেবা দিয়েছেন। বিদায়ী পুরপ্রধান শঙ্করপ্রসাদ সাউ এ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন তাঁর পূর্বসূরির উদ্দেশে। তিনি বলেন, ‘‘উনি বোর্ড মিটিং রুমে নিজের জন্য সিংহাসন বানিয়েছিলেন। পাশে চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিলদের জন্য ছোট সিংহাসন। আর কাউন্সিলরদের জন্য বেঞ্চ। বেঞ্চে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারবেন না বলেই বোধ হয় পুরসভায় ঢোকেননি!’’

সিপিএমের অন্দরেও এ নিয়ে চর্চা কম নয়। স্থানীয় এক ডিওয়াইএফ নেতা বলেন, ‘‘দিলীপবাবুর পুরসভায় না যাওয়ার বিষয়টা অনেকেই হয়তো মানতে পারেননি।’’ জেলা সিপিএমের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘ওঁর যা অভিজ্ঞতা, বিরোধী হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারতেন। তবে পুরভোটের মুখে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে তৃণমূল বিষয়টাকে বড় করছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি আমরা ব্যক্তিগত হিসেবে ধরছিই না। দলগত ভাবে যা আলোচনা করার করেছি।’’ আরও যোগ করেন, ‘‘পুরপ্রধান হিসেবে পুরসভায় যাওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে। কাউন্সিলরের হিসাবে তা থাকে না।’’

এ বার দিলীপবাবু ভোটে দাঁড়াননি। তাঁর জায়গায় প্রার্থী হয়েছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ সুদীপ সাহা। তৃণমূলের প্রার্থী বিদায়ী চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল সুভাষ দে ওরফে বুলা। কংগ্রেস প্রার্থী করেছে দলের স্থানীয় নেতা সাবির আলিকে। দিলীপবাবু প্রসঙ্গে সুদীপবাবুর দাবি, ‘‘গত পাঁচ বছর উনি খুবই অসুস্থতার মধ্যে কাটিয়েছেন। পুরসভায় না গেলেও পরিষেবার ক্ষেত্রে খামতি ছিল না। আমাদের ওয়ার্ড কমিটিও যথেষ্ট ভাল কাজ করেছে। অপপ্রচার করে দিলীপবাবুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের কৃতিত্ব খাটো করা যাবে না।’’ দিলীপবাবুর নিজের কথায়, ‘‘পুরসভায় গিয়ে দর্শকের চেয়ারে বসার মানসিকতা আমার নেই। বিরোধী দলনেতার জন্য একটা ঘরের কথা বলেছিলাম। ওরা দেয়নি। আর বর্তমানে যে নোংরামি চলছে, সহ্য হয় না। যে কোনও কাজে ওরা বাধা সৃষ্টি করে। ওয়ার্ড কমিটির কথা শোনা হয় না। নোংরামি থেকে নিজেকে মুক্ত করতেই ভোটে দাঁড়াইনি।’’

তৃণমূল অবশ্য দিলীপবাবুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘পুরসভার ছায়া মাড়ানো দূরঅস্ত, মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেননি দিলীপবাবু। উনি মানুষের সঙ্গে বঞ্চনা করেছেন। ওই ওয়ার্ডের যাবতীয় কাজের দায়িত্ব আমরাই কাঁধে তুলে নিয়েছিলাম। দায়িত্ব পেলে আগামী পাঁচ বছরেও চেষ্টার ত্রুটি রাখব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE