Advertisement
E-Paper

লোকগানে, ঢাকের বোলে ভোটের সুর হুগলিতে

‘বঙ্গধ্বনি যাত্রা’ কর্মসূচিতে সরকারের গত এক দশকের সাফল্য প্রচারে নেমে কোথাও তারা ঢাক পেটাচ্ছে, কোথাও হাতিয়ার করেছে বাউল গান। বসে নেই বিজেপিও।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:১৫
শ্রীরামপুরে ঢাক নিয়ে ‘বঙ্গধ্বনি যাত্রা’।—নিজস্ব চিত্র

শ্রীরামপুরে ঢাক নিয়ে ‘বঙ্গধ্বনি যাত্রা’।—নিজস্ব চিত্র

সাতসকালে হঠাৎ ঢাকের বাদ্যি!

শ্রীরামপুর পুরসভার ৭, ৮ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অনেকেই মঙ্গলবার ঘুম ভেঙে উঠে বুঝে পাচ্ছিলেন না হলটা কী! পরে বোঝা গেল, ‘বঙ্গধ্বনি যাত্রা’য় বেরিয়েছে তৃণমূল।

মাঝ ডিসেম্বরে একটু একটু করে পারদ নামছে বঙ্গে। রাজনীতির আকাশ অবশ্য ক্রমেই তপ্ত হচ্ছে। ভোটের কয়েকমাস আগেই সেই উষ্ণতা মালুম হচ্ছে যুযুধান তৃণমূল এবং বিজেপির কার্যকলাপে। ‘গেরুয়া আগ্রাসন’ রুখতে নির্বাচনী প্রচারের ঢঙে হুগলিতে ময়দানে নেমে পড়েছে রাজ্যের শাসকদল। ‘বঙ্গধ্বনি যাত্রা’ কর্মসূচিতে সরকারের গত এক দশকের সাফল্য প্রচারে নেমে কোথাও তারা ঢাক পেটাচ্ছে, কোথাও হাতিয়ার করেছে বাউল গান। বসে নেই বিজেপিও।

এ দিন শ্রীরামপুরে তৃণমূল ওই কর্মসূচি পালন করে ঢাক বাজিয়ে। ঢাকের আওয়াজে অনেকেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। স্থানীয় নেতাজি সুভাষ অ্যাভিনিউর এক যুবক বলেন, ‘‘ঢাকের আওয়াজে ভাবলাম, এখন আবার কী? বেরিয়ে দেখি, প্রচার চলছে। যেন ভোট এসে গেল!’’

এ যেন সত্যিই ভোটের ঢাকে কাঠি! শহর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সন্তোষ সিংহ বলছেন, ‘‘কোনও ঘোষণা করতে আগে ঢ্যাঁড়া পেটানো রীতি ছিল। আর সাফল্যের প্রচার ঢাক পিটিয়েই করতে হয়। মানুষের জন্য করা কাজ গর্বের সঙ্গে বলতে আগামিদিনেও আমাদের সঙ্গে ঢাকিরা থাকবেন।’’

এ দিন চুঁচুড়া পুরসভার ১, ২ এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ওই কর্মসূচিতে তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের নেতৃত্বে বাড়ি বাড়ি সরকারের সাফল্যের রিপোর্ট-কার্ড পৌঁছে দেওয়া হয়। মাইকে সে কথা প্রচার করা হয়। শোভযাত্রায় শিল্পীরা গান শোনান। ‘মা-মাটি-মানুষ’-এর জয়গান ছাড়াও দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করেন তাঁরা। গান শোনান বাউল শিল্পীরা।

অসিত বলেন, ‘‘দিদির (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ১০ বছরের যা কাজ, অন্য কোনও সরকার কস্মিনকালে তা ভাবতেও পারেনি। সে কথাই মানুষকে বলছি। জেলায় জেলায় হারিয়ে যাওয়া লোকশিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটেছে দিদির হাত ধরে। তাই সেই সুরেই গান বেঁধে আমরা মানুষের দোরে পৌঁছচ্ছি।’’

গত লোকসভা ভোটে হুগলি কেন্দ্র তৃণমূলের হাতছাড়া হয়। চুঁচুড়া বিধানসভায় তৃণমূলের ভোটবাক্সে ধস নামে। চুঁচুড়া পুরসভার ওই তিন ওয়ার্ডে বিজেপির কাছে ভাল ব্যবধানে তৃণমূ‌ল পিছিয়ে পড়ে। তৃণমূল শিবিরের খবর, বিধানসভা ভোটের আগে সেই ক্ষয় মেরামতে এখানে বাড়তি জোর দিচ্ছেন অসিত।

বিজেপি স্বভাবতই তৃণমূলের এই কর্মসূচিকে ‘ভোটের চমক’ বলে দাগিয়ে দিতে চাইছে। বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘তৃণমূল এখন তাসের ঘর। ওদের ঢাকে আর গানে বিষাদের সুর। ওদের মিথ্যের সাম্রাজ্য শুধু ভেঙে পড়ার অপেক্ষা। নিজের পিঠ নিজে চাপড়ে কী হবে? মানুষের রিপোর্ট কার্ডে ওরা শূন্য পেয়ে বসে আছে।’’

বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামল বসুর কটাক্ষ, ‘‘ঢাকের আওয়াজে ভাঁওতা, মিথ্যাচার চাপা দেওয়া যায় না। ওদের ঢাক পেটানো দেখে মানুষ হাসছে।’’

পাল্টা সন্তোষ বলছেন, ‘‘লড়াই তো সমানে সমানে হয়। বাংলার প্রতিটি ঘর রাজ্য সরকারের কোনও না কোনও প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে। গত ৭ বছরে কেন্দ্রে বিজেপির কাজের বহর দেখলেই বোঝা যাবে, ভাঁওতাবাজ কারা।’’

বিজেপি নেতা-কর্মীরাও প্রচারে জোর দিচ্ছেন। তাদের যুবকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বেকারত্বের হিসেব নিচ্ছেন। চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। ‘গৃহসম্পর্ক যাত্রা’ চলছে। তাতে দরিদ্র মানুষের বাড়িতে মধ্যাহ্যভোজেও জনসংযোগ চলছে। এ দিন কার্যত একই কায়দায় অসিতও দলবল নিয়ে কেওটা এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে ভাত, ডাল, আলুভাজা, আলুপোস্ত দিয়ে দুপুরের খাওয়া সারেন।

Cultural campaign TMC Bangadhani Yatra West Bengal Assembly Election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy