প্রায় দু’বছর বন্ধ থাকার পরে কাল বৃহস্পতিবার থেকে খুলছে সাঁকরাইলের ডেল্টা জুটমিল। একশ্রেণির শ্রমিকের অসহযোগিতার ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে— এই কারণ দেখিয়ে ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কর্তৃপক্ষ সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক ঘোষণা করেছিলেন। এখানে প্রায় চার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। চটকলটি ফের খুলে গেলে তাঁরা সকলেই কাজ ফিরে পাবেন বলে কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনগুলি জানিয়েছে।
মঙ্গলবার নিউ সেক্রেটারিয়েট ভবনে তাঁর নিজের ঘরে কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনকে নিয়ে আলোচনায় বসেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। তাঁর সভাপতিত্বেই বৈঠক হয়। মালিক সুনীল ঝুনঝুনওয়ালা নিজে এ দিন বৈঠকে হাজির ছিলেন।
যে দিন সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক ঘোষণা করা হয়, তার পরের দিন বেতন দেওয়া কথা ছিল। শ্রমিকরা বেতন পাপনি। তাঁদের ১৭ দিনের বেতন বকেয়া থেকে যায়। আন্দোলনের জেরে কর্তৃপক্ষ কয়েকমাস আগে ৬ দিনের বেতন মিটিয়ে দিলেও বকেয়া থেকে যায় ১১ দিনের বেতন। মঙ্গলবারের বৈঠকে শ্রমিক সংগঠনগুলি দাবি করে, বকেয়া ১১ দিনের বেতন মিটিয়ে দেওয়া হলে তবেই তারা কারখানা চালু করতে দেবে। কারখানা কর্তৃপক্ষ পাল্টা জানিয়ে দেয়, আগে কারখানা চালু হবে, তারপরে ১১ দিনের বেতন মেটানো হবে। শেষ পর্যন্ত শ্রমমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় ঠিক হয়— উভয়পক্ষকেই কিছু স্বার্থ ছাড়তে হবে। এর পরেই কারখানার মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতারা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করেন, ১ ডিসেম্বর থেকে কারখানা চালু হবে। চালু হওয়ার এক মাসের মধ্যে দু’টি কিস্তিতে শ্রমিকদের বকেয়া ১১ দিনের বেতন মিটিয়ে দেওয়া হবে।
আইএনটিটিইউসি-র হাওড়া জেলা সভাপতি অরূপেশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চান আমরা আন্দোলন যেমন করব, তেমনই দেখতে হবে উৎপাদন যেন বন্ধ না হয়। তাই কিছুটা আত্মত্যাগ আমাদের করতেই হল।’’ আইএনটিইউসি-র পক্ষে রমজান হালদার বলেন, ‘‘বকেয়া নিয়ে টানাটানি করলে কারখানা আর চালু হত না। তাই কিছুটা সংযম আমাদের দেখাতে হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি মালিক তাঁর কথামতো কারখানা খোলার এক মাসের মধ্যে বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেবেন।’’ সিটুর স্থানীয় প্রতিনিধিরা এই বৈঠকে হাজির থাকলেও চুক্তিতে সই করেননি। সিটুর পক্ষ থেকে কেউ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। সিটুর জেলাসম্পাদক কৃষ্ণস্বপন মিত্র বলেন, ‘‘সংগঠনের রাজ্য সম্মেলনের জন্য আমি এখন পুরীতে আছি। তাই এ বিষয়ে বিশেষ কিছু বলতে পারব না। তবে এর আগেও এমন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছিল। আমাদের মনে হচ্ছে, কারখানা খোলার নাম করে ভিতরের দামি যন্ত্রপাতি বের করে নেওয়ার চক্রান্ত করছেন কর্তৃপক্ষ।’’ তবে কারখানা খোলা হলে সিটু বাধা দেবে না বলে তাঁদের সংগঠনের স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন।
চটকল মালিকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে উৎপাদন চালু হোক, এটা আমরা চেয়েছিলাম। শ্রমিকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। শ্রমিকদের ১১ দিনের বকেয়া মজুরি এক মাসের মধ্যেই মিটিয়ে দেওয়া হবে।’’