যখন বয়স ছিল, তাঁরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করেছেন কর্মস্থলে। এখন অবসরে দু’বেলা পেট পুরে খাওয়া জোটে না। কারণ, অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা মেলে না। মিললেও তা এতই কম যে, তাতে হাঁড়ি চাপে না।
অবসর জীবনের সমস্যা আর বার্ধক্যের কষ্ট নিয়ে এমন অনেকেই শনিবার দুপুরে জড়ো হয়েছিলেন চন্দননগরের বড়বাজারে। সেখানে এ দিন ‘প্রবীণ নাগরিক অধিকার রক্ষা মঞ্চ’ এবং ‘শ্রমিক কল্যাণ সমিতি’ নামে স্থানীয় দু’টি সংগঠনের উদ্যোগে নির্দিষ্ট অঙ্কের পেনশনের দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়।
আন্দোলনকারীদের দাবি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাঁরা যৎসামান্য পেনশন পান অথবা একেবারেই পান না, তাঁদের ন্যূনতম ৫০০০ হাজার টাকা পেনশন দিতে হবে। ওই দাবি নিয়ে সভায় উপস্থিত প্রবীণ নাগরিকদের স্বাক্ষর সংবলিত একটি আবেদনপত্র তৈরি করা হয়। সংগঠনের সদস্যেরা জানান, দাবিপত্রটি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হবে। জেলার অন্যান্য জায়গা থেকেও একই রকম আবেদনপত্র কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরে পাঠানোর চেষ্টা করা হবে।
এ দিন ওই কর্মসূচি উপস্থিত বিভিন্ন কল-কারখানার অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকেদের আক্ষেপ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়তে বাড়তে কার্যত তাঁদের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে। ফলে, সংসার চালাতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ, তাঁদের অনেকেই পেনশন পান না। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটির সুবিধাও মিলছে না। ফলে, পেটের তাগিদে বয়সের সমস্যা নিয়েই ছোটখাটো কাজ করতে হচ্ছে।
সত্তরোর্ধ্ব এক অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকের কথায়, ‘‘সরকারি চাকুরেদের চলনসই পেনশনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু যাঁদের সেটুকু সংস্থানও নেই? যাঁরা আদৌ পেনশন পান না বা যৎসামান্য পান? বার্ধক্যে পৌঁছে তাঁদের খাওয়া জুটবে কিনা, সে কথা কেউ ভাববে না?’’ কেউ কেউ জানান, বার্ধক্যভাতা বা বিধবাভাতার যৎসামান্য টাকা তাঁদের একমাত্র ‘রোজগার’।
ওই দুই সংস্থার তরফে বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়, অনন্তকুমার দে, কুণাল সেন, হীরালাল সিংহ প্রমুখের অভিযোগ, পেনশন সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকার এবং অন্যান্য সাংবিধানিক সংস্থার পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, পেনশন প্রকৃতপক্ষে বিলম্বিত মজুরি। পেনশনের অঙ্ক এমন হওয়া উচিত, যেন একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি সঠিক ভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফেও বিশেষত ভোটের সময় এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটে না বহু মানুষের ক্ষেত্রেই।
এ ব্যাপারে চন্দননগরের এই দুই সংগঠনের তরফে বিষয়টি নিয়ে বহু বার রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও কাজ হয়নি। শেষে তারা চন্দননগরের ‘আইন সহায়তা কেন্দ্র’-এর সহযোগিতায় বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। তাদের আরও অভিযোগ, কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী দেশের প্রত্যেকটি জেলায় সম্পূর্ণ সরকারি ব্যবস্থাপনায় কমপক্ষে ১৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি করে বৃদ্ধাবাস থাকার কথা। কিন্তু সে আইন খাতায়-কলমেই রয়ে গিয়েছে। এই নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে।
‘প্রবীণ নাগরিক অধিকার রক্ষা মঞ্চ’-এর সদস্য প্রদীপ দে’র অবসরকালীন অর্থে এ দিন ৩০০ পেনশনহীন এবং নামমাত্র পেনশন-প্রাপক নাগরিককে শীতবস্ত্র দেওয়া হয়।