শিখা মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
পুজোর মুখেও ডেঙ্গি পিছু ছাড়ছে না শ্রীরামপুরের!
শনিবার সকালে এ শহরে ফের ডেঙ্গি আক্রান্ত এক বৃদ্ধার মৃত্যু হল। এই নিয়ে বর্ষার মরসুমে শ্রীরামপুরে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল চার। এখনও ডেঙ্গিতে ভুগছেন বেশ কয়েক জন। নতুন করে মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ মানুষ মনে করছেন, পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতর উদ্যোগী হলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি বাগে আনতে পারেনি।
শনিবার সকালে হিন্দমোটরের একটি নার্সিংহোমে শিখা মুখোপাধ্যায় (৬২) নামে ওই বৃদ্ধা মারা যান। তিনি শ্রীরামপুরের লেনিন সরণির বাসিন্দা ছিলেন। মৃত্যুর শংসাপত্রে নার্সিংহোমের তরফে লেখা হয়েছে, ‘কার্ডিও রেসপিরেটরি ফেলিওর ইন এ কেস অব ডেঙ্গি মেনিনগো এনকেফেলাইটিস উইথ অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম’। চিকিৎসকদের বক্তব্য, ডেঙ্গির ভাইরাস শিখাদেবীর মস্তিষ্কে আক্রমণ করেছিল। যে কারণে মস্তিষ্কের আবরণী ঝিল্লির প্রদাহ শুরু হয়।
বৃদ্ধার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন পনেরো আগে শিখাদেবী জ্বরে আক্রান্ত হন। তার সঙ্গে ছিল মাথার যন্ত্রণা, গায়ে ব্যথা এবং বমি ভাবের উপসর্গ। প্রথমে তাঁকে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। শ্বাসকষ্টও থাকায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। দিন আটেক ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরে গত বুধবার তাঁকে হিন্দমোটরের নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই শনিবার সকাল ৬টা নাগাদ শিখাদেবী মারা যান।
কয়েক মাস আগে ডেঙ্গি শ্রীরামপুরে ব্যাপক ভাবে ছড়ায়। অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতর এবং পুরসভা দেরি করে গা-ঝাড়া দেওয়াতেই এই পরিস্থিতি। অবস্থা এতটাই উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে, শ্রীরামপুরে ডেঙ্গি মহামারির আকার নিয়েছে বলে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে ঘোষণা করা হয়। গত মাসে শহরের কুমিরজলা রোডের এক যুবক ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কাশীনাথ ভট্টাচার্য লেনে এক বৃদ্ধারও একই কারণে মৃত্যু হয়। চলতি মাসেই অসুস্থ স্বামীকে দেখভাল করতে এসে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন কাটোয়ার এক মহিলাও। বাঁচানো যায়নি তাঁকেও। এ ছাড়াও জ্বরে আক্রান্ত আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁদের প্লেটলেট কমে গিয়েছিল।
মাস দু’য়েক আগে ডেঙ্গি মোকাবিলায় তৎপর হয় পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতর। মশার লার্ভা নিধনে তেল ছড়ানো, জলাশয়ে গাপ্পি বা গাম্বুসিয়া জাতীয় মাছ ছাড়া তোল চলছিলই, বাড়ি বাড়ি সচেতনতা অভিযানও চলে। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, বর্তমানে ডেঙ্গির প্রকোপ এই শহরে অনেকটা কম। সরকারি হাসপাতাল, পুরসভার ফিভার ক্লিনিক বা চিকিৎসকদের চেম্বারেও জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে। তবে পরিস্থিতি যে পুরোপুরি বাগে আসেনি, তা দেখিয়ে দিল শিখাদেবীর মৃত্যু।
এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলেও পুরসভার চেয়ারম্যান ইন-কাউন্সিল (স্বাস্থ্য) সুপ্রীতি মুখোপাধ্যায় ফোন ধরেননি। এসএমএস-এরও জবাব দেননি। অন্য এক কাউন্সিলর দাবি করেছেন, ‘‘ডেঙ্গি মোকাবিলায় সব রকম ব্যবস্থাই তো পুরসভার তরফে নেওয়া হয়েছে। সেই অভিযান চলছেও। পরের বার থেকে এই পরিস্থিতি যাতে আর না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকব।’’
তবে, শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ডেঙ্গির চিকিৎসা সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ ওঠা এখনও থামেনি। ওই হাসপাতালকে কেন্দ্র করেই ডেঙ্গি চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হয় প্রশাসনের তরফে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ ছিল, আপৎকালীন অবস্থাতেও ডেঙ্গি আক্রান্তের রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা ওয়ালশে করার ব্যবস্থা হয়নি। রক্তের নমুনা পাঠানো হয় চুঁচুড়া ইমামবাড়া (সদর) হাসপাতালে। সেখান থেকে রিপোর্ট পেতে পাঁচ-সাত দিন গড়িয়ে যায়। তা ছাড়া, প্লেটলেট দেওয়ার ব্যবস্থাও ওয়ালশে ছিল না। ফলে, রোগীর অবস্থা একটু জটিল হলেই কলকাতার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অনেকেই মনে করেন, ডেঙ্গি নিয়ে ওয়ালশ হাসপাতালের পরিষেবার মান আরও বাড়ানো উচিত ছিল। যদিও স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ওই হাসপাতালের পরিকাঠামো অনুযায়ী উপযুক্ত পরিষেবাই দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy