Advertisement
E-Paper

মশাদের প্রবল দাপট হাসপাতালেই

শ্রীরামপুর মহকুমায় ডেঙ্গি ‘মহামারি’ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্যভবন। জেলার হাসপাতালগুলিতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। পরিষেবা নিয়ে উঠছে নানা অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালগুলিতে পরিচ্ছন্নতার বহর কেমন, তা দেখল আনন্দবাজার।সকাল ১০টা। বৃষ্টির দিনে বাইরে বসে থাকার খুব সমস্যা। তাই হাসপাতাল চত্বর ও ভিতরে রোগীর বাড়ির লোকজনেরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে আছেন। অনেকটা জায়গা জুড়ে গাছগাছালি। বাঁধানো চাতাল। ঘড়ির কাঁটা গড়গড়িয়ে চললেও ঝাঁট পড়েনি তখনও।

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০২:৫২
নোংরা-আবর্জনায় ভর্তি হাসপাতাল চত্বর। — মোহন দাস।

নোংরা-আবর্জনায় ভর্তি হাসপাতাল চত্বর। — মোহন দাস।

সকাল ১০টা। বৃষ্টির দিনে বাইরে বসে থাকার খুব সমস্যা। তাই হাসপাতাল চত্বর ও ভিতরে রোগীর বাড়ির লোকজনেরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে আছেন। অনেকটা জায়গা জুড়ে গাছগাছালি। বাঁধানো চাতাল। ঘড়ির কাঁটা গড়গড়িয়ে চললেও ঝাঁট পড়েনি তখনও। মুড়ির ঠোঁঙা হাওয়ায় লাট খাচ্ছে। ঝরা গাছের পাতায় জমে বৃষ্টির জল। যে জলে এখন কাঁপছে উত্তর থেকে দক্ষিণ। অথচ তা পরিষ্কার করতে কাউকে দেখা গেল না বুধবার। এমনই দৃশ্য দেখা গেল আরামবাগ হাসপাতালে।

এখানেই শেষ নয়। আরও এগিয়ে যেতেই পড়ল শৌচাগার। এ বার থমকাতেই হল। হাসপাতালের এক কর্মীর দেওয়া তথ্যে, ‘ওই শৌচালয়ে কোনও চেম্বার নেই। অর্থাৎ কেউ শৌচকর্ম করলে সরাসরি বাইরে চলে যাচ্ছে।’ এরপর সেই নোংরা জল হাসপাতালের চত্বরেই একটা নীচু জায়গায় জমে থাকে বছরভর। অথচ ওই শৌচাগারটি মানুষ নিয়মিত টাকা দিয়ে ব্যবহার করেন।

হাসপাতাল ভবন এখন ঝাঁ-চকচকে। চিকিৎসকের সংখ্যা কম হলেও কাজ চলে যাচ্ছে। চিকিৎসার উন্নত সরঞ্জামও এখন মজুত আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল। কিন্তু রোগীর সেবায় সেই সব নিয়ে কাজটা করবে কে? এখন এই প্রশ্নই প্রতিদিন ধাক্কা খেয়ে ফিরছে হাসপাতালের ঝকঝকে বাড়িতে। হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা ২৬২। সাফাই কর্মী, জেনারেল ডিউটি অ্যাসিস্ট্যান্ট (জিডিএ) নেই। কর্মীর অভাবে রোগীরা ন্যূনতম পরিষেবা পান না। সাফাই কর্মী না থাকায় নিকাশি নালা পাঁকে ভর্তি। আবর্জনাময় হাসপাতাল চত্বর মশার আড়ত।

চতুর্থ শ্রেণির কর্মী না থাকায় রোগী ভর্তি করিয়ে, বাড়ির লোকজনকে হাসপাতাল চত্বরেই সারাদিন কাটাতে হয়। কেন না জরুরি বিভাগ থেকে ভর্তি হওয়া রোগী হাসপাতালে স্ট্রেচারে করে ওয়ার্ডে নিতে হয় রোগীর আত্মীয় স্বজনকেই। ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে রক্ত, অক্সিজেন সিলিন্ডার, সেলাইনের সরঞ্জাম রোগীর বাড়ির লোকজনকেই নিয়ে যেতে হয় রোগীর কাছে। দূর গ্রাম থেকে রোগী ভর্তি হলে আত্মীয়দের বাড়ি ফিরতে হয়। তখন বেহাল অবস্থা বেচারা রোগীর। কেন না, রাতে পানীয় জল আনা বা মশারি টাঙাতে হয় তাঁকেই। হাসপাতাল সুপার শান্তনু নন্দী বলেন, “চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এবং সুইপার নিয়োগ নিয়ে রাজ্যস্তরে প্রক্রিয়া চলছে বলে শুনেছি।’’

মহকুমা হাসপাতালে অনুমোদিত জিডিএ পদ ৯২। আছেন মাত্র ১৮ জন। অবসর নেওয়ার পরে ওই পদে নিয়োগ হচ্ছে না। সাফাই কর্মীর ৩০টি অনুমোদিত পদ। আছেন ১২ জন। এর ফলে ওয়ার্ড এবং শৌচাগারগুলি অধিকাংশ সময় অপরিষ্কার থাকে। মহকুমা হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের প্রতিদিনের ঘটনা। মহকুমা হাসপাতাল স্তরে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও প্রয়োজনীয় টেকনিসিয়ানের অভাবে যথা সময়ে পরিষেবা পাচ্ছে না মানুষজন। পাঁচ জন টেকনিসিয়ান থাকার কথা। আছেন মাত্র ১ জন। সেই একজনকে নিয়েই এখন এই জ্বরের মরসুমে চলছে অসম লড়াই।

যক্ষা বা এডস বিভাগের টেকনিসিয়ানদের কাজে লাগিয়েও সেই চাপ সামাল দেওয়া যায় না। ওই কাজে গ্রুপ ডি কর্মীরাদেরও লাগে। বর্তমানে হাসপাতালের কাজের বহর এমন যে, রোগীর পরীক্ষার ফল পেতে ৭ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে। এ নিয়ে টেকনিসিয়ানদের সঙ্গে রোগীর আত্মীয় স্বজনদের হাতাহাতি প্রায়ই লেগে যায়। আরামবাগ হাসপতালে খাতায়-কলমে শয্যা সংখ্যা ২৫০। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ৪০০ রোগী দেখা হয়। আরামবাগ লাগোয়া বর্ধমান, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর এবং হাওড়া থেকেও রোগী আসেন। বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগী আসেন গড়ে ৬০০। হাসপাতালে বর্হি ও অন্তর্বিভাগ মিলে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগীর রক্ত-মল-মূত্রের নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়।

শুধু হুগলি নয়, লাগোয়া পাঁচটি জেলা থেকে প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ আসেন আরামবাগ হাসপাতালে। ডেঙ্গিতে ইতিমধ্যেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এই মহকুমার কামারপুকুর লাগোয়া জয়রামবাটিতে। প্রতিদিন জ্বর নিয়ে মানুষ ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। কিন্তু পরিকাঠামোর বেহাল অবস্থা কী ভাবে ডেঙ্গির দাপটকে ঠেকাবে— তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়দের।

Dengue arambagh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy