Advertisement
E-Paper

বকেয়া না মেলায় উন্নয়নে ভাটা পঞ্চায়েতে

প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবের ফারাকটা ভালই টের পাচ্ছেন হাওড়ার আমতা ১ ব্লকের রসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তারা। চতুর্দশ কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশন তাঁদের জন্য যে টাকা বরাদ্দ করেছিল তার পরিমাণ ছিল আগের অর্থ কমিশনগুলির তুলনায় দ্বিগুণ।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৫৬

প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবের ফারাকটা ভালই টের পাচ্ছেন হাওড়ার আমতা ১ ব্লকের রসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তারা। চতুর্দশ কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশন তাঁদের জন্য যে টাকা বরাদ্দ করেছিল তার পরিমাণ ছিল আগের অর্থ কমিশনগুলির তুলনায় দ্বিগুণ। কিন্তু বাস্তব চিত্র হল, যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল তার মাত্র এক তৃতীয়াংশ তাঁরা হাতে পেয়েছেন।

ওই পঞ্চায়েতের এক কর্তা জানান, প্রায় এক বছর আগে তাঁরা চতুর্দশ কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের কাছ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন। তার পরে আর একটি পয়সাও আসেনি। ফলে পরবর্তী উন্নয়নমূলক কাজগুলি আর শুরুই করা যায়নি। এই অবস্থা জেলার ১৫৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতেরই। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে উন্নয়নমূলক কাজ হয় মূলত কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের টাকাতেই। কিন্তু এই টাকা না আসায় কাজকর্ম কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

প্রতি পাঁচ বছর ছাড়া কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির জন্য যে অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ করে পাঁচ বছর ধরে সেই টাকা কেন্দ্রীয় সরকার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে দিতে থাকে। ২০১৫ সালে গঠিত হয় চতুর্দশ কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশন (২০১৫-২০২০)। ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের থেকে প্রায় দ্বিগুণ টাকা বরাদ্দ করেছিল চতুর্দশ কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশন। কিন্তু বর্ধিত বরাদ্দের সেই টাকা পায়নি পঞ্চায়েতগুলি। চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক এ পর্যন্ত প্রায় ২১০০ কোটি টাকা পাওয়ার কথা ছিল রাজ্যের সাড়ে তিন হাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের। কিন্তু বাস্তবে মিলেছে মাত্র ৮০০ কোটি টাকা। বাকি টাকা কবে আসবে সে বিষয়ে তাঁরা অন্ধকারে বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানেরা। তাঁদের আরও বক্তব্য, টাকা না আসায় পঞ্চায়েতের নানা উন্নয়নমূলক কাজ আটকে গিয়েছে।

নিয়ম হল, বছরে দুটি কিস্তিতে এই টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দিয়ে থাকে। প্রথমটি মে-জুন মাসে। সেই টাকা খরচের ইউসি (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) দিলে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস নাগাদ। চতুর্দশ কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশন রাজ্যে পঞ্চায়েতগুলির জন্য বরাদ্দ করেছে বছরে ১৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৫-’১৬ অর্থ বর্ষের প্রথমার্ধে দেওয়া হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আর আসেনি। এর মধ্যে আবার বকেয়া থেকে গিয়েছে ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষের প্রথম কিস্তি। সব মিলিয়ে বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি। তারই প্রভাব পড়ছে উন্নয়নমূলক কাজকর্মে।

কেন এই অবস্থা?

রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রে খবর, আগের বারের তুলনায় বরাদ্দ যেহেতু অনেকটাই বেশি, তাই বহু গ্রাম পঞ্চায়েত এই টাকা খরচ করতে পারেনি। ফলে সময়মতো ইউসি দেওয়া যায়নি। নিয়ম অনুযায়ী তা না দেওয়ার ফলেই বাকি টাকা আসেনি। যদিও রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক কর্তা জানান, অর্থ দফতর থেকে ইউসি চলে গিয়েছে। বাকি টাকার জন্য বার বার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। খুব শীঘ্রই টাকা চলে আসবে।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের টাকা ইচ্ছামতো খরচ করতে পারে পঞ্চয়েতগুলি। একে বলা হয় ‘আনটায়েড ফান্ড।’। গ্রামোন্নয়নের অনেক কাজই হয় এই টাকায়। কিন্তু টাকা না মেলায় হতাশ পঞ্চায়েতগুলি। হাওড়ার বাগনান ১ ব্লকের হাতুড়িয়া পঞ্চায়েতের এক কর্তা বলেন, ‘‘শুধুমাত্র ২০১৫-’১৬ অর্থ বছরেই দু’টি কিস্তি মিলিয়ে আমরা ৩২ লক্ষ টাকা পেতাম। কিন্তু পেয়েছি মাত্র ১৬ লক্ষ টাকা। তাতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের অর্ধেক হয়ে পড়ে রয়েছে। বাকি টাকা এলে কাজগুলি শেষ করা যেত। এই অবস্থায় পুজোর মরশুমে হাত গুটিয়ে বসে থাকা আর আমাদের কোনও উপায় নেই।’’

Development stopped raspur panchayat Arrears
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy