Advertisement
২১ মে ২০২৪
বার্তা তৃণমূল পঞ্চায়েতের

শাসক-বিরোধী টানেই চলুক উন্নয়নের রথ

শাসক থাক তার জায়গায়। বিরোধীরাও থাকুক সম্মানের সঙ্গে। গড় গড় করে চলুক উনন্নয়নের রথ।বুধবার এই নীতিকে সামনে রেখেই শাসক-বিরোধী সমন্বয়ের নজির রাখল হাওড়ার আমতা-১ ব্লকের রসপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। পঞ্চয়েত ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। মোট সদস্য সংখ্যা ১২।

নুরুল আবসার
আমতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৬ ০২:০৭
Share: Save:

শাসক থাক তার জায়গায়। বিরোধীরাও থাকুক সম্মানের সঙ্গে। গড় গড় করে চলুক উনন্নয়নের রথ।

বুধবার এই নীতিকে সামনে রেখেই শাসক-বিরোধী সমন্বয়ের নজির রাখল হাওড়ার আমতা-১ ব্লকের রসপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। পঞ্চয়েত ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। মোট সদস্য সংখ্যা ১২। তার মধ্যে তৃণমূলেরই সদস্য আছেন ১১ জন। বিরোধী সিপিএম সদস্য এক জন। বুধবার পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হল উলুবেড়িয়া উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজিকে। নিজেদের দলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে দলীয় বিধায়ককে সংবর্ধনার দায়িত্ব দেওয়া হল বিরোধী সিপিএমের একমাত্র সদস্যা তথা পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেত্রী সুপ্রিয়া খামরুইকে। সুপ্রিয়াদেবীর কাছ থেকে ফুলের স্তবক নিয়ে বিধায়ক দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে ওই সদস্যাকে দেখিয়ে বলেন, ‘‘এঁকে মঞ্চে বসতে চেয়ার দাও।’’ তারপরে ফের সুপ্রিয়াদেবীর দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘‘আপনি বসুন।’’

মঞ্চে শুধু সৌজন্য দেখানোই নয়, ভাষণ দেওয়ার সময়েও বিষয়টি উল্লেখ করে বিধায়ক বলেন, ‘‘বিরোধীদের মন জয় করতে চাই। অন্য দলের মন জয় করতে চাই। উন্নয়নের আনন্দ সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।’’ পাশাপাশি বিধানসভা নির্বাচনে যে দলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন সেই দলের বিধায়ককে সংবর্ধনা দিয়ে তিনিও যে অনুতপ্ত নন সে কথা জানান সুপ্রিয়াদেবী। তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতির ক্ষেত্র আলাদা। উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনও দলবাজি করা উচিত নয়। আমার দলের পক্ষ থেকেও আমাকে বারণ করা হয়নি।’’

আমতায় বুধবার এই ছবি দেখা গেলেও জেলা তথা রাজ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঘটনায় বিপরীত ছবিই দেখা যায়। দলে দলে বিরোধী গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যরা শাসক দলের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। জগৎবল্লভপুরের পোলগুস্তিয়া এবং গোবিন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএমের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যরা যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। সাঁকরাইলের নলপুর এবং জগতবল্লভপুরেরই বড়গাছিয়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্যরা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় পঞ্চায়েত দু’টি সিপিএমের হাতছাড়া হয়েছে। সিপিএমের অভিযোগ, জোর করে তাদের তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করানো হয়েছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, রাজ্যব্যাপী উন্নয়নে সামিল হতেই সিপিএম ছেড়ে অনেকে তাঁদের দলে যোগ দিয়েছেন।

রসপুরের তৃণমূল নেতাদের গলায় অবশ্য ভিন্ন সুর। তাঁদের বক্তব, উন্নয়নে সামিল হওয়ার জন্য তৃণমূলে আসতেই হবে, তার কোনও মানে নেই। মানসিকতাই আসল। তা থাকলে যে কোনও দলে থেকেই উন্নয়ন করা যায়। রসপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্লে বলেন, ‘‘আমাদের ১২ জন সদস্য যাতে সমান বরাদ্দ পান তার উপরে নজর রাখা হয়। আমরা দল ভাঙাকে প্রশ্রয় দিই না। বরং অন্য দল থেকে আমাদের দলে কেউ আসতে চাইলে বারণ করি।’’

তিনি জানান, এই গ্রাম পঞ্চায়েত যখন সিপিএমের হাতে ছিল, তখন তিনি বিরোধী নেতা ছিলেন। তাঁর সংসদে কোনও কাজ হত না। এখনও শুনতে পান বিরোধী দলের সদস্যদের এলাকায় কাজ হয় না। এতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষই বঞ্চিত হন। সেই কারণেই ঠিক করেছেন সিপিএমের সংসদ এলাকার বেশি করে কাজ করবেন।

পঞ্চায়েতের তৃণমূল সভাপতি অলোক মণ্ডল বলেন, ‘‘বিধায়ককে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা যখন করা হয়, ঠিক হয় তা করা হবে বিরোধীদলের সদস্যের হাত ধরেই।’’ এ দিন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেই শস্যবিমার ফর্ম বিলি, জমির পাট্টা প্রদান, বৃক্ষ পাট্টা প্রদান এবং নির্মল গ্রাম কর্মসূচির কর্মসূচি পালনের কথা ঘোষণা করা হয়। বৃক্ষ পাট্টা প্রদানের কর্মসূচির সূচনা করেন সুপ্রিয়াদেবী। জয়ন্তবাবু এবং অলোকবাবু জানান, এই পঞ্চায়েত থেকে তাঁরা বার্তা দিতে চান উন্নয়নের কাজে শাসক এবং বিরোধীদের মধ্যে যেন ফারাক না থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Development TMC CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE