Advertisement
E-Paper

মায়ের কোলে চেপেই ৫০ শতাংশ, কাটছে না সংশয়

শারীরিক ‌এবং সাংসারিক নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে শুভজিৎ উচ্চ মাধ্যমিকে পঞ্চাশ শতাংশ নম্বর পেয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০২:৫৭
লড়াকু: মাকর্শিট নিচ্ছে শুভজিৎ। সঙ্গে তার মা। নিজস্ব চিত্র

লড়াকু: মাকর্শিট নিচ্ছে শুভজিৎ। সঙ্গে তার মা। নিজস্ব চিত্র

জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী সে। মায়ের কোলেই বেড়ে ওঠা। মায়ের কোল ছাড়া হাঁটাচলাও তার পক্ষে অসম্ভব। মায়ের কোলেই চড়ে প্রথম স্কুলে গিয়েছিল সে। সোমবার সেই মায়ের কোলে চড়েই স্কুলের গণ্ডিও পার করল উলুবেড়িয়া কাঁটাবেড়িয়ার শুভজিৎ মালিক।

শারীরিক ‌এবং সাংসারিক নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে শুভজিৎ উচ্চ মাধ্যমিকে পঞ্চাশ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। তার ইচ্ছা শিক্ষক হওয়ার। শুভজিতের স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার রায় বলেন, ‘‘ছেলেটার মনের জোর সাঙ্ঘাতিক। আর ওর মায়ের সম্বন্ধে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’’

উলুবেড়িয়া কাঁটাবেড়িয়া গ্রামে বাড়ি শুভজিতের। আট বছর বয়সে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বাবা স্বপন মালিকের। শুভজিৎ তখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। মা কণিকা মালিক হাল ছেড়ে দেননি। একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে সংসার টেনেছেন। কোলে করে ছেলেকে স্কুলেও পৌঁছে দিয়ে এসেছেন। আয় বলতে ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতা মাসে হাজার টাকা ও আত্মীয়দের সামান্য সাহায্য।

কণিকাদেবী বলেন, ‘‘ ছোট থেকেই ছেলেকে স্কুলে বসিয়ে দিয়ে আসতাম। আবার স্কুল ছুটি হলে নিয়ে আসতাম।’’ হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার পর সমস্যা বাড়ে। কারণ সেই স্কুল ছিল শুভজিতের বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। তবু হাল ছাড়েননি মা-ছেলে। শুধু তাই নয়, যে শিক্ষক শুভজিৎকে পড়াতেন, তাঁর বাড়িও আট কিলোমিটার দূরে। সেখানেও ছেলেকে কোলে করেই নিয়ে যেতেন কণিকাদেবী।

ছেেল স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছে। খুশিতে এ দিন কেঁদে ফেলেন কণিকাদেবী। বলেন, ‘‘লোকে হাসহাসি করত। পেটে যাদের ভাত জোটে না, তাদের না কি পড়াশোনা বিলাসিতা। অনেকবার ভেবেছি, আর বোধহয় টানতে পারব না। কিন্তু ছেলেটা শুধু হাঁটতে পারে না বলে, পড়ার স্বপ্নটা শেষ হয়ে যাবে। এটা মানতে পারিনি।’’

উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর এ বার কলেজে যাওয়ার কথা বলতেই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে শুভজিতের চোখ। মুহূর্তেই চোখ নামিেয় সে বলে, ‘‘কলেজ তো ১৫ কিলোমিটার দূরে। সেখানে মা আমাকে কীভাবে নিয়ে যাবেন? মায়েরও তো বয়স হচ্ছে! আর টাকা-পয়সাও নেই আমাদের অত।’’

মা অবশ্য মাঝপথেই থামিয়ে দেন ছেলেকে। বলেন, ‘‘এতদিন যেভাবে হয়েছে, আবার সেভাবেই হবে। প্রয়োজনে মানুষের কাছে সাহায্য চাইব।’’ তাঁর আশা, ‘‘ছেলেটা একটা চাকরি পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’’

Higher Secondary WB Higher Secondary Result 2019 WB HS Result উচ্চ মাধ্যমিক WBCHSE Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy