Advertisement
২২ মে ২০২৪

চাঁদা নয়, সংসারের খরচ বাঁচিয়ে পুজোয় মহিলারা

শুধু পুজো নয়, বছরভর নানা সামাজিক কাজের জন্য এলাকাবাসীর নজর কেড়েছিল এই পুজো কমিটি। এ বার প্রশাসনের তরফেও তাঁদের কার্যকলাপ প্রশংসিত হওয়ায় সরকারি অনুদান পেতে চলেছে আরামবাগের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পল্লিশ্রীর দুর্গোৎসব।

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০০
Share: Save:

শুধু পুজো নয়, বছরভর নানা সামাজিক কাজের জন্য এলাকাবাসীর নজর কেড়েছিল এই পুজো কমিটি। এ বার প্রশাসনের তরফেও তাঁদের কার্যকলাপ প্রশংসিত হওয়ায় সরকারি অনুদান পেতে চলেছে আরামবাগের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পল্লিশ্রীর দুর্গোৎসব।

মহিলা পরিচালিত এই পুজো বয়সে নিতান্তই নবীন। পুজোর উদ্যোক্তারা জানালেন, প্রতিবেশী ৩৫টি পরিবারের বধূদের তৈরি পল্লিশ্রী নাগরিক কমিটি ২০১০ সালে পুজো শুরুর সময় সামাজিক দায়বদ্ধতার যে অঙ্গীকার করেছিলেন, আজও তা পালন করে চলেছেন। আর সামাজিক দায়বদ্ধতার পুরস্কার হিসেবে তাঁরা রাজ্য পুলিশের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা অনুদান পাচ্ছেন। পুজো কমিটির সম্পাদক বিভা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা খুশি। এই স্বীকৃতি আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিল।’’

কমিটির এক সদস্য প্রতিমা গণ বলেন, ‘‘স্রেফ সংসারের ঘানি টানছিলাম আর ছেলেমেয়েদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসা করতাম। আমার মতো আরও অনেকেই ছিলেন। এ সব থেকে হাঁফ ফেলতে বা বলতে পারেন কিছুটা মুক্তির স্বাদ নিতেই পুজো করার চিন্তাভাবনা শুরু করি।’’ আর এক সদস্য কুমকুম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রায় সকলের স্বামীরাই চাকুরিজীবী। সংসার চালানোর খরচ থেকে কিছুটা বাঁচিয়ে পুজোর তহবিল তৈরি করি। চাঁদার জন্য কারও কাছে হাত পাতি না।”

সম্পাদক বিভাদেবীর কথায়, ‘‘ওই টাকাতেই প্রতিমা থেকে মণ্ডপের বায়না, পুজোর আয়োজন সব হয়। প্রথমে আমাদের এই উদ্যোগ নিয়ে ঘরের কর্তারাই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু আমরা পেরেছি। এখন আমাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা।’’

২০১০ সালে পুজোর শুরু থেকেই সামাজিক কর্তব্য পালনের দায় কাঁধে তুলে নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। পুজোর কটা দিন দরিদ্র নারায়ণ সেবা এবং দুঃস্থদের বস্ত্রদান ছাড়াও সারা বছর ধরে দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের বই কিনে দেওয়া, এলাকায় স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রচার সবই চলে নিয়ম করে। পাশাপাশি সামাজিক শোষণের শিকার হওয়া মহিলাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কাজও চলছে। যে কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকে। অচিন্ত্য গঙ্গোপাধ্যায়, শুভেন্দু চক্রবর্তীর মতো অনেকে তাঁদের স্ত্রীদের এমন উদ্যোগ নিয়ে রীতিমত গর্বিত। তাঁদের কথায়, ‘‘প্রথমত পাড়ার ৩৫টি টুকরো পরিবারকে এক সুতোয় গেঁথে দিয়েছেন এঁরা। তাঁদের সামাজিক কাজকর্মও এলাকায় প্রভাব ফেলেছে। জুটেছে সরকারি স্বীকৃতি।”

পল্লিশ্রী নাগরিক কমিটির পুজোর বাজেট এ বার প্রায় এক লক্ষ টাকা। প্রতিমা-আলো-মণ্ডপে কোনও আড়ম্বর নেই। রয়েছে ‘নির্মল বাংলা’, ‘সেফ ড্রাইভ-সেভ লাইফ’ নিয়ে মানুষকে সচেতন করার নানা পন্থা। অভিনীত হচ্ছে নাটক। আর রয়েছে সারা বছর ধরে দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ানোর দায়বদ্ধতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Household Subscription
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE