Advertisement
০৩ মে ২০২৪

হলুদ ধোঁয়ায় ভরল এলাকা

এ দিন সকালে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিক সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বেলুড়ের ওই এলাকার বাসিন্দারা।

উদ্বেগ: তখনও কাটেনি আশঙ্কা।  ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

উদ্বেগ: তখনও কাটেনি আশঙ্কা।  ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
বেলুড় শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:১৪
Share: Save:

টেবিলে দেওয়া হয়েছে ভাত। হঠাৎ বাড়ির বাইরে চেঁচামেচি শুনে জানলা দিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন বেলুড়ের লালাবাবু সায়র রোডের শম্ভু হালদার। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তিনি ফিরে এসেছিলেন খাওয়ার টেবিলে। কিন্তু ভাত মুখে তুলতেই দেখলেন, পুরো তেতো! তরকারিতে পচা গন্ধ!

কিছু বুঝে ওঠার আগেই বুকে ব্যথা শুরু হয় শম্ভুবাবুর। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। একই সঙ্গে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় পরিবারের আরও চার জনের। সোমবার বেলা ১১টা থেকে ঝাঁঝালো গ্যাসের প্রকোপে এ ভাবেই অসুস্থ হয়ে পড়েন লালাবাবু সায়র রোড এলাকার একের পর এক বাসিন্দা। বাদ যাননি এলাকার চটকলের কর্মী থেকে পথচলতি লোকজনও। হাসপাতালে ভর্তি করে তাঁদের অনেককেই অক্সিজেন ও নেবুলাইজার দিতে হয়েছে।

এ দিন সকালে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিক সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বেলুড়ের ওই এলাকার বাসিন্দারা। বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ আচমকাই রাস্তার মোড়ে দাঁড়ানো লোকজন দেখলেন, হুটার বাজিয়ে পুলিশের গাড়ি জেসিপি মেশিনে চাপিয়ে একটি সিলিন্ডার নিয়ে এলাকায় ঢুকছে। সরে যেতে বলা হচ্ছে রাস্তার লোকজনকে। কী ঘটেছে, তখনও সে বিষয়ে কিছুই বুঝতে পারছিলেন না কেউ। তখনই আচমকা সাবান দিয়ে আটকানো সিলিন্ডারের একটি ফুটো খুলে গিয়ে বেরোতে শুরু করে ঝাঁঝালো ক্লোরিন গ্যাস। নাক-মুখ-চোখ জ্বালা করতে শুরু করে পথচারী ও দোকানিদের। নাকে চাপা দিয়ে শুরু হয় দৌড়োদৌড়ি।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, কিছু ক্ষণের মধ্যেই হলুদ ধোঁয়ায় ভরে ওঠে এলাকা। জানলা দিয়ে বাড়ির ভিতরেও ঢুকে যায় সেই গ্যাস। কেউ কিছু না বুঝলেও অনেকেই অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। অনিন্দিতা মহাপাত্র নামে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘রান্না করছিলাম। হঠাৎ গা গোলাতে শুরু করল।’’ শোভা দালাল নামে আর এক গৃহবধূ বলেন, ‘‘অসুস্থ শাশুড়ির জন্য ভাত বাড়ছিলাম। হঠাৎ তীব্র গন্ধ। সব খাবার তেতো হয়ে গেল।’’ বাসিন্দারা জানান, গ্যাস ছড়িয়ে পড়ায় রাস্তার গাছগুলিও হলুদ হয়ে নেতিয়ে পড়ে।

এলাকায় তখন লন্ডভন্ড অবস্থা। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন লোকজন। ঝাঁঝালো গ্যাসে অসুস্থ অনেকে। এলাকায় ঢুকতে শুরু করল অ্যাম্বুল্যান্স। তত ক্ষণে জেসিপি-তে চেপে সিলিন্ডার পৌঁছে গিয়েছে পুরনো জগন্নাথ ঘাটের কাছে। ঘাটে ঢোকার আগেই জেসিপি থেকে ফেলে দেওয়া হল সিলিন্ডার। তিনটি ফুটো খুলে গিয়ে আরও বেশি গ্যাস বেরোতে শুরু করল। যার জেরে ঘাট সংলগ্ন চটকল-সহ ওই এলাকারও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বেলা ১২টা নাগাদ সিলিন্ডার জলে পড়ার পরে কয়েক জন বাসিন্দা ঘাটের কাছেই একটি বাড়ি থেকে গোঙানির শব্দ শুনে গিয়ে দেখেন, ভিতরে অসুস্থ হয়ে পড়ে বৃদ্ধা সাগুনা পাণ্ডে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছিল বজরংবলী সংলগ্ন অন্যান্য এলাকাতেও। এ দিন জায়সবাল হাসপাতালে ভর্তি নবম শ্রেণির ছাত্র অভি সরকারের বাবা প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘ঝাঁঝালো গ্যাসে স্কুলে আচমকাই বমি করতে শুরু করে ও। তাই হাসপাতালে আনতে হল।’’

এ দিন রাতেও অবশ্য ‘গ্যাস নগরী’র আতঙ্ক কাটেনি বাসিন্দাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gas Leak Dwellers Belur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE