কাজের প্রশংসা প্রতি বছরই জোটে। গত বছর পর্যন্ত দামও জুটেছে।
এ বারও ওঁদের হাতে কাজ প্রচুর। কিন্তু তেমন দাম মিলছে না!
পুজোর আনন্দ অনেকটাই ম্লান চন্দননগরের আলোক-শিল্পীদের। কারণ, জিএসটি-র ধাক্কা লেগেছে বহুদিনের পুরনো এই শিল্পে। সরঞ্জামের দাম বাড়ায় দিশাহারা শিল্পীরা। কেউ কেউ আগামীদিনে কাজের মানের সঙ্গে আপোসের চিন্তাভাবনাও শুরু করেছেন।
অসীম দে নামে এক আলোকশিল্পীর ক্ষোভ, ‘‘জিএসটি চালুর পরে আলোর সরঞ্জামের দাম বেড়েছে। কিন্তু বর্ধিত দাম দিতে পুজো উদ্যোক্তারা নারাজ। করব কী?’’ বাবু পাল নামে আর এক আলোক-শিল্পীর খেদ, ‘‘ভাবছি আগামী বছর এলইডি বাল্বের সংখ্যা কমিয়ে দেব। লোকসানে তো আর কাজ করা যাবে না।’’
চন্দননগরের আলোর খ্যাতি জগৎজোড়া। দুর্গাপুজোয় কলকাতা তো বটেই, রাজ্যের বহু নামী পুজোর উদ্যোক্তারাও আলোকসজ্জার জন্য চন্দননগরের দ্বারস্থ হন। এই ট্র্যাডিশন বহুদিনের। আগে টুনি বাল্বে আলোর কেরামতি দেখাতেন শিল্পীরা। বেশ কয়েক বছর আগে সেই জায়গা দখল করে এলইডি। উজ্জ্বল আলোতে ‘আইফেল টাওয়ার’, ‘ড্রাগন’, ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ বা এমন হাজারো মডেল আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। শহরের বিদ্যালঙ্কা, পালপাড়া-সহ কয়েকটি জায়গায় আলোর কাজ চলে বছরভর। কয়েক হাজার মানুষ এই শিল্পে যুক্ত। পুজোর মরসুমেই তাঁরা গোটা বছরের উপার্জন করেন। তাঁরা দুর্গাপুজোর বায়না নেন বছরের গোড়ায়। তার পরে চলে প্রস্তুতি।
সেই প্রস্তুতি এ বারও চলছিল। ধাক্কা লাগল অগস্টে। জিএসটি চালু হওয়ার পরে। আলোকশিল্পীরা জানিয়েছেন, জিএসটি চালুর পরেই সরঞ্জামের দাম যে ভাবে বেড়েছে, তাতে কাজ করতে হিমসিম খেতে হয়েছে। এলইডি বাল্ব, ফনমাইকা বোর্ড, তার ইত্যাদি আলোর কাজের মূল উপাদান। আলোকশিল্পীরা জানান, জিএসটি চালুর আগে একটি তারের কয়েল কিনেছেন ৪৮-৫০ টাকায়। বর্তমানে সেই কয়েলের দাম ৭০-৮০ টাকা। আগে একটি আলোর বোর্ড তৈরি করতে খরচ হতো ৫-৮ হাজার টাকা। এখন হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ। ১০০ এলইডি বাল্বের প্যাকেট আগে তাঁরা কিনেছেন ৪৫ টাকায়। এখন কিনছেন ৫৫ টাকায়।
মুশকিল হল, বছরের গোড়ায় আলোকশিল্পীরা যখন পুজো উদ্যোক্তাদের থেকে বায়না নেন, তখনই কাজের দাম স্থির হয়ে যায়। কিন্তু এ বার যে মাঝপথে জিএসটি আসবে, জানা ছিল না কারও। এতেই সঙ্কটে পড়েছেন আলোকশিল্পীরা। কারণ, পুজো উদ্যোক্তারা তাঁদের বর্ধিত দাম দিতে চাইছেন না বলে ক্ষোভ আলোকশিল্পীদের। অনেক শিল্পী আবার নিজে থেকেই কিছু আলোর কাজ তৈরি করে রাখেন। যদি কারও পছন্দ হয়। কিন্তু এ বার সেই কাজ নিয়েও তাঁরা আতান্তরে।
অতঃকিম?
তপন ঘোষ নামে এক আলোকশিল্পী বলেন, ‘‘যে বোর্ডে ৩০০০ বাল্ব প্রয়োজন, সেখানে না হয় ২০০০ বাল্ব দেব।’’ আর এক শিল্পীর কথায়, ‘‘বোর্ডের উচ্চতাও কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে। দেখা যাক কী হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy