অস্বাস্থ্যকর: রাস্তার পাশেই পড়ে রয়েছে জঞ্জাল। নিজস্ব চিত্র
রেহাই মিলছে না কিছুতেই। ফের ডেঙ্গি, ফের মৃত্যু, ফের আতঙ্ক।
হুগলি শিল্পাঞ্চলে মাসখানেকের ব্যবধানে ডেঙ্গিতে প্রাণ গেল দু’জনের। ফলে, ডেঙ্গি-প্রতিরোধ কর্মসূচি কতটা যথাযথ ভাবে হচ্ছে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর চুঁচুড়ার ধরমপুরের এক বৃদ্ধা ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছিলেন। শুক্রবার মারা গেলেন চাঁপদানির ২২ নম্বর ওয়ার্ডের অ্যাঙ্গাস খানপুকুর এলাকার বাসিন্দা, অমরনাথ সাউ (৩৬) নামে এক যুবক। তিনি রিষড়া দমকলকেন্দ্রের অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। ওই দমকলকেন্দ্রের চার কর্মীও বর্তমানে জ্বরে আক্রান্ত।
ধরমপুরে বৃদ্ধার মৃত্যুর পরে এলাকা সাফাই নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁর পরিবারের লোকেরা। অমরনাথের মৃত্যুর পরে একই অভিযোগ তুলছেন তাঁর পরিজনরা। শুধু অ্যাঙ্গাস খানপুকুরেই নয়, ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে রিষড়া দমকলকেন্দ্রেও। মৃতের স্ত্রী জ্যোতির ক্ষোভ, ‘‘নিজের জীবন বিপন্ন করে মানুষকে বিপদের হাত থেকে যাঁরা রক্ষা করেন, তাঁদেরই দেখার কেউ নেই!’’ জ্যোতির অভিযোগ, ‘‘রিষড়ায় দমকল বিভাগে থাকার জায়গাটা খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে বলে শুনেছি। মশা মাছির উৎপাতে ঠিকমতো থাকা যেত না। একদিকে বাসস্থান, অন্যদিকে কর্মস্থলের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্যই স্বামীর প্রাণ গেল।’’ অমরনাথের খুড়তুতো দাদা সন্তোষ সাউয়ের ক্ষোভ, ‘‘পুর পরিষেবা ঠিকমতো মেলে না।’’ ওই এলাকার বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, এলাকার জঞ্জাল সাফাইয়ে কোনও রকম নজর দেওয়া হয় না। যেখানে-সেখানে ময়লা জমে থাকে। নিকাশি নালাগুলি নিয়মিত পরিষ্কার না-করায় নোংরা জল উপচে বাড়িতে ঢোকে।
অভিযোগ মানেননি চাঁপদানির পুরপ্রধান সুরেশ মিশ্র। তাঁর দাবি, ‘‘ডেঙ্গি রোধে পুরসভার পক্ষ থেকে সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। অ্যাঙ্গাস খানপুকুর এলাকার একাংশ স্থানীয় জুটমিলের আওতায় রয়েছে। জুটমিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।।’’
বাড়িতে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে অমরের সংসার ছিল। দুর্গাপুজোর সময় তিনি দমকলকেন্দ্রেই ছিলেন। গত ২১ অক্টোবর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পর অমরকে প্রথমে চন্দননগর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরের দিন তাঁকে প্রথমে কলকাতার পার্কসার্কাসের একটি নার্সিংহোমে, পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শুক্রবার রাতে অমরনাথ মারা যান।
সহকর্মীর মৃত্যুতে কী করবেন বুঝে পাচ্ছেন না রিষড়া দমকলকেন্দ্রের কর্মীরা। সন্ধ্যা হলেই তাঁরা মশারির মধ্যে ঢুকে পড়ছেন। দুর্গাপুজোর সময় থেকেই একে একে তাঁদের কয়েকজন জ্বরে আক্রান্ত হন। দু’জন সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিলেও বাবুসোনা সামন্ত নামে এক কর্মী কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিন জনের চিকিৎসা চলছে বাড়িতে। এক দমকলকর্মীর কথায়, ‘‘প্রত্যেকেরই মোটামুটি একই রকম উপসর্গ। প্রবল জ্বর, গায়ে ব্যথা, মাথায় যন্ত্রণা। প্লেটলেট কমে যাচ্ছে। ফলে আমাদের এখানে থাকতে ভয় লাগছে।’’
শনিবার ওই দমকলকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, চৌহদ্দি মোটের উপর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ব্লিচিং ছড়ানো রয়েছে। এখানকার একাধিক কর্মী জানান, পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা আসেন। সাফাই, মশার লার্ভা মারার তেল, ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর কাজ নিয়মিত চলে। তার পরেও জ্বর-ডেঙ্গি হওয়ার কারণ তাঁরা বুঝতে পারছেন না। ২০১৬ সালেও ওই দমকলকেন্দ্রের দুই কর্মী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন বলে তাঁরা জানান।
জেলার অন্যান্য পুরসভার মতোই রিষড়াতেও অবশ্য পতঙ্গবিদ নেই। পুরপ্রধান বিজয় মিশ্র বলেন, ‘‘ডেঙ্গি রোধে পুরসভার তরফে সব ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। ওই দমকলকর্মীর মৃত্যুর ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। তবে ডেঙ্গির জীবাণু কোথা থেকে এল, তা নিশ্চিত করা দরকার। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের পরামর্শ নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy