Advertisement
E-Paper

অপ্রতুল কর্মী নিয়েই ‘প্রস্তুত’ হুগলির দমকল

দমকল সূত্রের খবর, অনেক জায়গাতেই এত সরু রাস্তায় আবাসন তৈরি হয়েছে যে, দমক‌লের গাড়ি ঢোকার উপায় নেই। উঁচু ভবনে উঠতে হাইড্রোলিক ল্যাডার প্রয়োজন হয়। গোটা জেলায় ওই মই নেই।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২২
অচল: বন্ধ পান্ডুয়ার দমকলকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র

অচল: বন্ধ পান্ডুয়ার দমকলকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র

শহর বাডছে, বাড়ছে বহুতলও। কিন্তু দমকল পড়ে রয়েছে সেই মান্ধাতার আমলেই।

হুগলির উত্তরপাড়া, কোন্নগর, রিষড়া, শ্রীরামপুর, চুঁচুড়া— এই সব শহরে কয়েকশো বহুতল গড়ে উঠেছে। দমকল বিধিকে শিকেয় তুলে সরু গলিতে গজিয়ে উঠেছে আবাসন। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই তৈরি হয়েছে মার্কেট কমপ্লেক্স। কার্যত জতুগৃহের চেহারা নিলেও দেখার কেউ নেই।

দমকল সূত্রের খবর, অনেক জায়গাতেই এত সরু রাস্তায় আবাসন তৈরি হয়েছে যে, দমক‌লের গাড়ি ঢোকার উপায় নেই। উঁচু ভবনে উঠতে হাইড্রোলিক ল্যাডার প্রয়োজন হয়। গোটা জেলায় ওই মই নেই। দমকলের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দরকারে কলকাতা থেকে হাইড্রোলিক ল্যাডার আনানো যেতে পারে। কিন্তু এনে কী হবে? এখানকার রাস্তায় তা ঢোকানোই মুশকিল। ওই ল্যাডার রাখতে যতটা জায়গা লাগে, তাও মিলবে না।’’ উদ্ধারকাজের সময় উঁচু নির্মাণ থেকে লাফাতে হলে নির্দিষ্ট সরঞ্জাম (জাম্পিং শিট) দরকার। তা-ও নেই এই জেলায়।

দমকলকর্মীরা বলছেন, কয়েক বছর আগেও নেইয়ের তালিকায় আরও অনেক কিছু ছিল। কৃত্রিম ভাবে নিঃশ্বাস নেওয়ার সরঞ্জাম ‘ব্রিদিং অ্যাপারেটস’-এর অভাবে মুখে ভিজে গামছা বা রুমাল বেঁধে প্রবল ধোঁয়ার মধ্যে আগুন নেভানোর কাজ করতে হয়েছে। বদ্ধ ঘর বা গুদামে আগুন লাগলে শাটার কাটতে বিশেষ সরঞ্জাম (কাটিং গিয়ার) না থাকায় শাবল-হাতুড়ি দিয়ে তা করতে হয়েছে। এখন গাড়ি বা ওই সব সরঞ্জাম পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে অসুবিধা হবে না।

তবে এখন সমস্যা কর্মী নিয়েই। সূত্রের খবর, বিভাগীয় সদরে আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত ‘ফায়ার অপারেটর’ থাকার কথা ৮০ জন। সেই জায়গায় আছেন সাকুল্যে ২০-২২ জন। ‘লিডার’ পদে ২০ জনের পরিবর্তে আছেন ১১-১২ জন। সংখ্যার অনুপাতে অন্যান্য দমকল কেন্দ্রের অবস্থাও তথৈবচ। গত কয়েক বছরে অনেকেই অবসর নিয়েছেন। নিয়োগ না হওয়ায় পদ শূন্যই রয়ে গিয়েছে। অনেকেই অবসরের দোরগোড়ায়। নিয়োগ না হলে আগামী কয়েক বছরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলেই অনুমান দমকল কর্তাদের।

কোথাও বড় কিছু হলে অন্য জায়গা থেকে দমকলকর্মীদের নিয়ে যাওয়াটা দস্তুর। যেমন, বাগড়ি-কাণ্ডে আগুন নেভাতে হুগলি থেকে দমকলকর্মীদের ডাক পড়ছে। ফলে এখানে বড় কিছু ঘটলে কর্মী সংখ্যায় আরও টান পড়বে। এক দমকলকর্মীর কথায়, ‘‘প্রায়ই আমাদের ওভারটাইম করতে হয়। ঘণ্টা প্রতি ৭টাকা, ৯টাকা, ১০টাকা মেলে ওভারটাইম করলে।’’

অস্থায়ী দমকলকর্মী (অক্সিলিয়ারি ফায়ার পার্সন বা এএফপি) নিয়োগ হওয়ার কথা থাকলেও স্থায়ী পদ ফাঁকা রেখে ‘প্রশিক্ষণহীন’ এমন কর্মী নিয়ে আদৌ কতটা লাভ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন তৈরি দমকল কেন্দ্র কাজে লাগছে না। বছরখানেক আগে পান্ডুয়া দমকল কেন্দ্রের উদ্বোধন হলেও লোকবলের অভাবে চালু হয়নি। ঝাঁ-চকচকে ভবন পড়েই রয়েছে। পান্ডুয়া, বলাগড়, পোলবা-দাদপুরের মতো জায়গায় আগুন লাগলে বাঁশবেড়িয়া বা হুগলি দমকলকেন্দ্রই ভরসা। ডানকুনি দমকল কেন্দ্রও কর্মীর অভাবে ভুগছে। দিল্লি রোড সংলগ্ন কল-কারখানায় আপৎকালীন পরিস্থিতি সামলাতে কয়েক মাস আগে চন্দননগরের খলিসান‌ির কাছে ব্রাহ্মণপাড়ায় জেলা পরিষদের পুরনো ভবনে অস্থায়ী দমকলকেন্দ্র তৈরি হয়েছে। সেখানে নিজস্ব গাড়ি নেই। অন্য জায়গা থেকে সকালে একটি গাড়ি এবং গুটিকতক কর্মী সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যার পরেই সবাই ফিরে আসেন।

Worker Fire Brigade Ladder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy