Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

জল নামলেও বাড়ছে মৃত্যু

হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, খানাকুলের ২ নম্বর ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েত ছাড়া আরামবাগ মহকুমার বাকি জায়গা থেকে জল নামছে। তবে ওই ১১টি পঞ্চায়েত এলাকার ৫৩ টি মৌজা এখনও প্লাবিত।

খানাকুলের রাস্তায় এখনও ভরসা নৌকো

খানাকুলের রাস্তায় এখনও ভরসা নৌকো

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৭ ০৩:১১
Share: Save:

জল নামছে আস্তে আস্তে। তবে মৃত্যু বন্ধ হচ্ছে না জলমগ্ন এলাকায়। হুগলির খানাকুলে ফের নতুন করে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের।

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে খানাকুল ২ ব্লকের বারবাউন গ্রামের মইদুল মোল্লা (১৮) নামে এক যুবকের দেহ উদ্ধার হয়। সোমবার বিকেলে রাস্তা পারাপারের সময়ে ওই যুবক পা পিছলে জলে তলিয়ে গিয়েছিলেন। পুরশুড়ার নিমডাঙিতে সর্পদ্রষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় সপ্তমী সামন্ত (১৯) নামে এক বধূর। জলমগ্ন বাড়িতে ঘুমোনোর সময়ে রবিবার তাঁকে সাপে ছোবল মারে। সোমবার বিকালে তারকেশ্বরের একটি নার্সিংহোমে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, খানাকুলের ২ নম্বর ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েত ছাড়া আরামবাগ মহকুমার বাকি জায়গা থেকে জল নামছে। তবে ওই ১১টি পঞ্চায়েত এলাকার ৫৩ টি মৌজা এখনও প্লাবিত। সেখানে এখনও নৌকাতেই যাতায়াত চলছে। মুণ্ডেশ্বরী সেচ দফতরের (চাঁপাডাঙ্গা) সহকারী বাস্তুকার সোমনাথ ঘোষ বলেন, “দামোদরের জল বিপদসীমার নীচে নেমেছে। মুণ্ডেশ্বরী নদীর জল প্রাথমিক বিপদসীমা থেকেও প্রায় ২ মিটার নিচে নেমে গিয়েছে।”

তবে এই মহকুমায় ত্রাণ নিয়ে অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে। খানাকুল ১ ব্লকের বালিপুর গ্রামের প্রফুল্ল রায়ের অভিযোগ, “গত ১০ দিন হল জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত একটি ত্রিপল আর ২ কেজি চাল ছাড়া কিছু সরকারি সাহায্য পাইনি।” একই অভিযোগ করেছেন আরও অনেকে। যদিও আরামবাগ মহকুমা ত্রাণ আধিকারিক সৌমেন দাসের দাবি, “পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে।’’ তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত এই মহকুমায় ৬৩৭৩টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িযেছে ৭ লক্ষ ৪০ হাজার ৪৬৪ জন।

জল-যন্ত্রণা: জয়পুরের সিয়াগড়িতে ত্রাণ শিবির থেকে বাড়ির পথে দুর্গতরা।

ডিভিসি জল ছাড়ার পরে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ব্লক থেকেও দল নামছে। জেগে উঠছে রাস্তা। তবে আমতা ২ ব্লকের কিছু এলাকায় এখনও জল জমে রয়েছে। মঙ্গলবার জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন হাওড়ার জেলাশাসক চৈতালী চক্রবর্তী। সেখানে ছিলেন জেলা প্রশাসন এবং পূর্ত (সড়ক), সেচ, স্বাস্থ্য-সহ সব দফতরের কর্তারা। সেখানে পানীয় জলের নলকূপগুলি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সারানোর কথা বলা হয়েছে।

ডিভিসির ছাড়া জলে উদয়নারায়ণপুরের ১০টি এবং আমতা ২ ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েত প্লাবিত হয়েছিল। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শুধুমাত্র উদয়নারায়ণপুরেই প্রায় ২ হাজার নলকূপ জলে ডুবে যায়। সেগুলি দ্রুত শোধনের জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরকে আলাদা আলাদা দল করে ত্রাণ শিবির-সহ সব দুর্গত এলাকায় যেতে বলা হয়েছে। সেচ দফতরকে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রুত মেরামত করতে। হাওড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, রাস্তা এবং বসতবাড়ির ক্ষতির হিসেব এখনও পাওয়া যায়নি। কারণ পঞ্চায়েতগুলি ত্রাণ বিলিতে ব্যস্ত। তবে চাষের ক্ষতির হিসেব মিলেছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত উদয়নারায়ণপুরে ৫৫৭৬ হেক্টর এবং আমতা ২ ব্লকে ৭৩৯০ হেক্টর জমিতে চাষের ক্ষতি হয়েছে। দু’টি ব্লক মিলিয়ে প্রায় ৪২ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে।

বাঁধ সংস্কারের জন্য সেচ দফতরের জন্য বলা হলেও কর্তারা অসুবিধার কথা জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এখন বালি বা মাটি এখন পাওয়া কঠিন। এছাড়া এখন বাঁধ মেরামতের পরে যে ডিভিসি ফের জল ছাড়বে না তার নিশ্চয়তা নেই। সেচ কর্তাদের পরামর্শ, আপাতত রামপুর খালের বাঁধের ভাঙা অংশগুলি মেরামত করা হোক। বর্ষা কাটলে দামোদরের বাঁধে হাত দেওয়া হবে। আজ, বুধবার সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাওড়ার বন্যা দুর্গত এলাকায় আসার কথা। তাঁর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের কর্তারা জানিয়েছেন।

ছবি: সুব্রত জানা ও মোহন দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE