Advertisement
E-Paper

পানীয় জল, আলো আর পুনর্বাসন চায় গড়বাগান

সকাল থেকে তারস্বরে মাইক বাজছিল গড়বাগানের আনাচে-কানাচে। পাঁচ বছরে এখানকার বাসিন্দাদের প্রতি কতটা ‘অবিচার’ করেছে তৃণমূলের পুরবোর্ড, কংগ্রেসের প্রচারের অঙ্গ হিসেবে রেকর্ডিং করা গলায় তা-ই ক্রমাগত বেজে চলছিল। এই ওয়ার্ডে শাসকদল টাকা খরচে কার্পণ্য করেছে বলেও কংগ্রেসের অভিযোগ।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৯

সকাল থেকে তারস্বরে মাইক বাজছিল গড়বাগানের আনাচে-কানাচে। পাঁচ বছরে এখানকার বাসিন্দাদের প্রতি কতটা ‘অবিচার’ করেছে তৃণমূলের পুরবোর্ড, কংগ্রেসের প্রচারের অঙ্গ হিসেবে রেকর্ডিং করা গলায় তা-ই ক্রমাগত বেজে চলছিল। এই ওয়ার্ডে শাসকদল টাকা খরচে কার্পণ্য করেছে বলেও কংগ্রেসের অভিযোগ।

রিক্শায় ক্যাসেট চালিয়ে পাল্টা প্রচার চলছিল তৃণমূল প্রার্থীর। গত তিরিশ বছর এই ওয়ার্ডে ক্ষমতায় থাকায় অনুন্নয়নের দায়ভার যে আসলে কংগ্রেসরই, তাও জানাতে ভোলেনি তারা। পল্লির ঘরে ঘরে দু’পক্ষের এই বার্তা-লড়াই কতটা পৌঁছল, তা অবশ্য জানা গেল না। কেননা, ভোটের মুখে রাজনৈতিক দলের গালভরা আশ্বাস আর নতুন নয়। কিন্তু চায়ের কাপ আর ঠোঁটের দূরত্ব যে বড়় কম নয়, শেওড়াফুলি গড়বাগানের যৌনকর্মীরা তা বিলক্ষণ জানেন।

দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়া ঘরে বসে এক মহিলা বলে ওঠেন, ‘‘আমরা তো লেখাপড়া় জানি না। তাই বোধহয় আমাদের অঙ্ক মেলে না।’’ এক যৌনকর্মীর কথায়, ‘‘বলতে গেলে আমাদের কারওরই বিপিএল কার্ড নেই। কম দামে রেশন বা চিকিৎসার সুযোগ পাই না। আমরা নাকি সবাই বড়লোক!’’ মহিলার সংযোজন, ‘‘কষ্টেসৃষ্টে রেশন কার্ড আর ভোটার কার্ড হয়েছে ‘দুর্বার’-এর চেষ্টায়। আর সেই কবে থাকোদা দু’একটা করে দিয়েছিলেন।’’ এখানকার ভুক্তভোগীরা জানেন, গতর থাকলে বাজার আছে। রোজগার থাকে। কিন্তু বয়স হলেই ‘ইনকাম’ একেবারে শূন্য। জমানো টাকা ফুরোতে সময় নেয় না। অগত্যা লোকের দোরে পড়ে থেকে দিন কাটে। খাবার জোটে না। এলাকায় কান পেতে শোনা গেল, পঞ্চাশোর্ধ্ব এক যৌনকর্মী কিডনির রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসার টাকা নেই। অন্যরা চেষ্টাচরিত্র করে তাঁর চিকিৎসা করাচ্ছেন। বৈদ্যবাটি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এই পল্লি চায়, যৌনকর্মীরা বৃদ্ধ হলে, তাঁদের থাকা খাওয়ার কিছু একটা বন্দোবস্ত হোক। কিন্তু মনের কথা মনেই থেকে যায়।

এ বারও অবশ্য সব দলই যৌনকর্মীদের ‘পাশে’ থাকার আশ্বাস দিয়েছে। তিন দশক ধরে এই ওয়ার্ড কংগ্রেসের দখলে। কংগ্রেস নেতা অমিয় মুখোপাধ্যায় ওরফে থাকোদা বেশ কয়েক বার এখান থেকে জিতেছেন। নয়ের দশকে সাড়ে ৬ বছর পুরপ্রধানও ছিলেন। যৌনপল্লির মহিলারা জানান, এখানকার জন্য আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করেছেন থাকোদা। কিন্তু পরিষেবা যে আদৌ সেই মানে পৌঁছয়নি বলাই বাহুল্য। এ বারও নবতীপর থাকোদাই কংগ্রেসের প্রার্থী। আশ্বাস দিয়েছেন, আগের মতোই যৌনকর্মীদের ভালমন্দয় থাকবেন। জিতলে জল-আলোর জন্য চেষ্টা করবেন। আর বলছেন, বয়স তাঁকে কাবু করতে পারবে না।

থাকোদার বিরুদ্ধে এ বার তৃণমূলেরা প্রার্থী পোড়খাওয়া নেতা কল্যাণ সরকার ওরফে কলু। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির বলে পরিচিতি রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘জিতলে যৌনপল্লির জন্য যথাসাধ্য করব।’’ প্রচারপত্রে বৃদ্ধ-অশক্ত যৌনকর্মীদের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘সমাজের এই অবহেলিত মহিলাদের পুনর্বাসনের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে দরবার করব’। ওয়ার্ডের অন্য জায়গার মতো এখানেও ফ্লেক্সে, প্রচারপত্রে নিজের ফোন নম্বর দিয়েছেন। কলুবাবুর কথায়, ‘‘থাকো কাকা সম্মানীয় ব্যক্তি। কিন্তু এত দিন ওঁরা ক্ষমতায় থেকেও সে ভাবে এলাকার উন্নতি করতে পারলেন কোথায়! জল নেই, পর্যাপ্ত আলো নেই!’’ ভোটারদের কাছে কৌশলী মন্তব্য, ‘‘থাকোকাকার বয়স হয়েছে। এ বার আমাকে সুযোগ দিন। দরকারে ওঁর পরামর্শ নিয়েই কাজ করব।’’

আরও এক বার আশ্বাসে বুক বেঁধেই শনিবার ভোটকেন্দ্রের পথে পা বাড়াবে গড়বাগান।

garbagan pally baidyabati municipality election 2015 prakash pal garbagan resident problem
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy