অব্যবস্থা: হাসপাতাল চত্বরে জমে রয়েছে জল হাসপাতালের পিছনে জঞ্জালের স্তূপ। ছবি: সুব্রত জানা
সামনে থেকে দেখলে সব কিছুই ঝকঝকে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কিন্তু ভিতরের অন্ধকার এখনও পুরোপুরি কাটল না!
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের দিকে নজর পড়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁরই উদ্যোগে হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫১০। তৈরি হয়েছে এসএনসিইউ, আইসিসিইউ, ডায়ালিসিস ইউনিট, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি যন্ত্র। ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্র বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যেই হাসপাতালকে সুপার স্পেশ্যালিটি স্তরে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে। তৈরি হচ্ছে প্রায় ৪০ কোটি টাকার নতুন ভবন। প্রসূতি বিভাগকে ঝাঁ চকচকে করা হয়েছে। চোখ জুড়িয়ে যায় অসুস্থ নবজাতকদের পরিচর্যা কেন্দ্র (এসএনসিইউ) দেখলে। যে কোনও প্রথম শ্রেণির বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে এই ইউনিট। কমেছে শিশুমৃত্যুর হার।
হাসপাতালে ঢুকলেই চোখে পড়ে বাগান। নর্দমাও ঠিকঠাক। কিন্তু এ সবই সামনের দিকে। ওয়ার্ড-মাস্টারের ঘরে যেতে গেলেই নাকে আসে শৌচাগারের গন্ধ। বহির্বিভাগ এবং ওয়ার্ড-মাস্টারের ঘরের মধ্যবর্তী জায়গায় তৈরি হয়েছে শৌচাগার। কিন্তু সেখানে নিয়মিত জল দেওয়া হয় না। ফলে, বহির্বিভাগে আসা রোগীরাও দূষণের শিকার হয়ে থাকেন বলে অভিযোগ।
হাসপাতালের পিছনের দিক যেন নরক, এমন অভিযোগও কান পাতলেই শোনা যায়। রোগীদের ওয়ার্ডের বাইরের দিকে খোলা নর্দমায় জমে থাকে নোংরা জল। তাতে প্লাস্টিকের চায়ের কাপ-সহ নানা ধরনের বর্জ্য পড়ে থিক থিক করে। প্রায়ই দেখা যায়, প্রসূতি ওয়ার্ড থেকে সাফাইকর্মী যখন হাতগাড়িতে বর্জ্য তুলে ফেরেন, তখন নোংরা জল ওয়ার্ডে এবং লিফ্টেও পড়তে থাকে। সেই লিফ্টে মা এবং শিশুকে নামানো হয়। ফলে, তাঁদের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে, এমন অভিযোগও শোনা যায়।
কী বলছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? তাঁদের দাবি, সাফাইকর্মীদের বলা হয়েছে অল্প করে বর্জ্য হাতগাড়িতে তুলতে। এটা যাতে তাঁরা করেন, সে জন্য নজরদারিও চালানো হয়। অথচ, এই হাসপাতালে নিয়মিত সাফাই অভিযান চলে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে সেই অভিযানে হাত মেলান সুপার নিজেও। ‘নির্মল বাংলা অভিযান’-এ সাফাইয়ের কাজ করা হয় পুরসভার পক্ষ থেকেও। তার পরেও এত নোংরা কেন?
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব দায় চাপিয়েছেন রোগীর আত্মীয়দের উপর। তাঁদের বক্তব্য, রোগীকে দেখতে এসে তাঁদের আত্মীয়েরা চায়ের কাপ ভিতর থেকে বাইরে ছুড়ে ফেলেন। তা নর্দমায় পড়ে। রোগীর আত্মীয়দের এ বিষয়ে নিয়মিত সচেতন করা হলেও কাজ হয় না। সুপার সুদীপরঞ্জন কাঁড়ার জানান, নর্দমার উন্নয়নে বড় পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে রোগীর আত্মীয়দেরও সচেতন হতে হবে। দেওয়ালে পানের পিক ফেলা বা জানলা দিয়ে চায়ের কাপ ফেলে দিয়ে নর্দমা নোংরা করার প্রবণতা বন্ধ না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া মুশকিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy