Advertisement
E-Paper

পদ্ম এ বার হুগলিতেও

কেন হুগলি কেন্দ্রে ঘাসফুলের ‘উর্বর’ জমিতে পদ্ম ফুটল? তাও দু’বারের সাংসদ রত্না দে নাগের তালুকে! 

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০২:০৩
হাসিমুখে: জয়ের পর লকেট। ছবি: তাপস ঘোষ

হাসিমুখে: জয়ের পর লকেট। ছবি: তাপস ঘোষ

জেতার হ্যাটট্রিক হল না রত্না দে নাগের। তৃণমূলকে হারিয়ে হুগলি কেন্দ্রে জিতে গেল বিজেপি।

বৃহস্পতিবার বেলা প্রায় ১১ ছুঁইছুঁই। গণনা কেন্দ্র থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে চুঁচুড়ার কারবালা মোড়ে পুলিশের ‘ড্রপগেট’-এর সামনে তৃণমূলের জমায়েত। এক কোণে চেয়ারে বসে স্থানীয় বিধায়ক অসিত মজুমদার এবং পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়। হাতে কাগজ-কলম। হিসেব যেন কিছুতেই মি‌লছিল না!

পরিচিত সাংবাদিককে দেখে চেয়ার টেনে বসালেন অসিতবাবু। বলে উঠলেন, ‘‘কী অবস্থা ভাই, সুগন্ধা পঞ্চায়েতেও ‘লিড’ পেলাম না! এত উন্নয়নের পরেও!’’ দিনভর এ ভাবেই তৃণমূল নেতারা অবিশ্বাসের দোলাচলে ভুগলেন। কেন হুগলি কেন্দ্রে ঘাসফুলের ‘উর্বর’ জমিতে পদ্ম ফুটল? তাও দু’বারের সাংসদ রত্না দে নাগের তালুকে!

রাজ্যের প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী, প্রয়াত গোপাল দাস নাগের মতো মেয়ে রত্নাও চিকিৎসক। বাবা যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। রত্নার জনপ্রিয়তাও কম নয়। দলের আর পাঁচ জন নেতার মতো জনমানসে রত্নার ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন নেই। তিনি যে এখানে হারতে পারেন, অনেকেই ভাবেননি। যদিও শেষ পর্যন্ত রত্নাদেবীকে ৭৩,৩৬২ ভোটে হারিয়ে দিলেন হুগলিতে ‘নবাগতা’, বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়।

অনেকেই বলছেন, এই কেন্দ্রে উন্নয়ন হয়েছে মূলত রাস্তাকেন্দ্রিক। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়‌নের ঢক্কানিনাদ কাজ করেনি। হুগলি শিল্পাঞ্চলে বন্ধ কল-কারখানা, কর্মসংস্থানের প্রশ্নে ব্যর্থতাও শাসকের বিরুদ্ধে গিয়েছে। তার উপরে সাধারণ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের আচরণ রত্নাদেবীর মতো ‘যোগ্য’ প্রার্থীকেও পিছিয়ে দিয়েছে। ভোট-মরসুমেই বলাগড়ে ফসলের দাম না-পেয়ে দুই পেঁয়াজ চাষি আত্মঘাতী হন বলে অভিযোগ। সিঙ্গুরেও চাষিদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

চন্দননগরের এক প্রৌঢ় বলেন, ‘‘মেলা-খেলার চমকে বেশি দিন চলে না। চন্দননগর পুরসভায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে নির্বাচিত বোর্ড ভেঙে দেওয়া হল। এর কোনও প্রতিফলন ভোটের বাক্সে পড়েনি মনে করছেন?’’ গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে হুগলিতে তৃণমূলের জয়জয়কার হয়েছিল। তবে শাসকদলের বিরুদ্ধে ব্যাপক ছাপ্পাভোটের অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা।

হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে তিনটির বিধায়ক রাজ্যের মন্ত্রী। দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত সপ্তগ্রাম, কার্যকরী সভাপতি অসীমা পাত্র ধনেখালি এবং ইন্দ্রনীল সেন চন্দননগরের বিধায়ক। কোনও জায়গাতেই তৃণমূল কাঙ্ক্ষিত ভোট পায়নি। হারের কারণ হিসেবে পরিসংখ্যান দেখিয়ে অসিত মজুমদার থেকে তপন দাশগুপ্ত— সকলেরই দাবি, বামেদের ভোট বিজেপির বাক্স ভরিয়েছে। তবে, বলাগড় ব্লকের এক তৃণমূল নেতার কার্যত স্বীকারোক্তি, ‘‘এই ফল অপ্রত্যাশিত নয়। এক শ্রেণির নেতার ভাবমূর্তির জন্য মানুষ অখুশি। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দলের খোলনলচে বদল করা দরকার।’’

রত্নাদেবীর হার নিয়ে লকেটের বক্তব্য, ‘‘উনি কোন‌ও কাজ করেননি। তবে তাতে ওঁর দুঃখের কিছু নেই। উনি যা করতে পারেননি, আমি সেগুলো করতে চাই।’’ গণনাকেন্দ্রে রত্নাদেবীর দেখা মেলেনি। তিনি ফোনও ধরেননি। কয়েক বার চেষ্টার পরে এক পুরুষকণ্ঠ মোবাইলে ব‌লেন, ‘‘উনি মোবাইল শ্রীরামপুরের বাড়িতে রেখে বেরিয়েছেন। কোথায় গিয়েছেন, জানি না।’’

লকেট-রত্নার থেকে অনেকটা পিছিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন সিপিএমের প্রদীপ সাহা। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মানুষ যা ভাল বুঝেছেন, করেছেন।’’

Election Results 2019 Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ Locket Chatterjee BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy