Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Paralysis

‘ভুল’ চিকিৎসায় হুইলচেয়ারে বন্দি তরুণী

জুতো সেট করানোর জন্য আমার দু’টো হাত ধরে ব্যায়াম করাচ্ছিলেন এক ম্যাডাম। ব্যায়াম করাতে করাতে হঠাৎ তাঁর মোবাইলে ফোন আসায় উনি হাত ছেড়ে দেন। আমি মেঝেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ি।’’ তাতেই পা ভেঙে যায় মামণির। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মেঝেতে টানা তিন ঘণ্টা যন্ত্রণায় ছটফট করলেও হাসপাতালের কেউ এগিয়ে আসেননি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
বনহুগলি শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৮ ০৩:২৭
Share: Save:

ছোট থেকেই দু’পা পোলিও আক্রান্ত। অনেক বাধা পেরিয়ে পাশ করেছেন মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক। কিন্তু পেরনো হল না কলেজের গণ্ডি। অভিযোগ, চিকিৎসায় ‘গাফিলতি’র কারণে বর্তমানে হুইলচেয়ারে কার্যত বন্দি হাওড়ার শ্যামপুরের মামণি খাতুন। তাঁর এই অবস্থার জন্য বনহুগলির ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড’ হাসপাতালের চিকিৎসকদের দায়ী করছেন মামণি।

অভিযোগ, বনহুগলির ওই হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে পোলিও আক্রান্ত ডান পা ভেঙে গিয়েছে মামণির। প্লাস্টার করিয়েও হাড় জোড়়া লাগেনি। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড’ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে মামলা করেছিলেন তিনি। গত ১১ এপ্রিল রাজ্যের ক্রেতা আদালত ওই হাসপাতালের অধিকর্তা অভিষেক বিশ্বাস-সহ তিন চিকিৎসককে ১৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে।

পোলিও আক্রান্ত পায়ের বিশেষ জুতোর জন্য ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বনহুগলির ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড’ হাসপাতালে ভর্তি হন মামণি। নিয়মানুযায়ী, ওই বিশেষ জুতো পরার আগে হাসপাতালে থেকে কয়েকদিন ফিজিওথেরাপি করাতে হয়। হাওড়ার শ্যামপুরের গ্রামের বাড়িতে বসে মামণি বলেন, ‘‘সেদিনের কথা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। জুতো সেট করানোর জন্য আমার দু’টো হাত ধরে ব্যায়াম করাচ্ছিলেন এক ম্যাডাম। ব্যায়াম করাতে করাতে হঠাৎ তাঁর মোবাইলে ফোন আসায় উনি হাত ছেড়ে দেন। আমি মেঝেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ি।’’ তাতেই পা ভেঙে যায় মামণির। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মেঝেতে টানা তিন ঘণ্টা যন্ত্রণায় ছটফট করলেও হাসপাতালের কেউ এগিয়ে আসেননি। ডান পা ভাঙার আট দিন পর প্লাস্টার করা হয়। চিকিৎসক অভিষেক বিশ্বাসের অধীনে ভর্তি হলেও ঘটনার পর একদিনের জন্যও উনি আমাকে দেখতে আসেননি।’’

ওই ঘটনার ফলে পরীক্ষা দেওয়া আর হয়ে ওঠেনি মামণির। ছলছল চোখে ওই তরুণী বলেন, ‘‘স্বপ্ন ছিল, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে চাকরি করব। কলেজে ভর্তিও হয়েছিলাম। হাসপাতালে পায়ে প্লাস্টার হওয়ার দিন কয়েক পরেই প্রথম বর্ষের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা যাতে দিতে পারি, সেজন্য অভিষেকবাবুকে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু উনি শোনেননি।’’

ডান পায়ের প্লাস্টারের মাস খানেক পর মামণি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। তার পরেও পায়ের ব্যথা সারেনি। মামণির কথায়, ‘‘হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার দিনই এসএসকেএমে গিয়েছিলাম। সেদিন এক্সরে হলেও ফের পরের দিন আসতে বলা হয়।’’

মামণির বাবা প্রতিবন্ধী। তিন ভাই, দু’বোনের টানাটানির সংসারে বারবার অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে কলকাতা আসার সামর্থ্য ছিল না। বাধ্য হয়ে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে মামণিকে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ফের ডান পায়ে প্লাস্টার হলেও ব্যথা কমেনি। ধীরে ধীরে হাঁটাচলার ক্ষমতা হারান তিনি।

মামণি-মামলার রায়ে ক্রেতা আদালতের বিচারক ঈশান চন্দ্র দাস এবং তারাপদ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড-এর গাফিলতিতেই এক প্রতিবন্ধী যুবতী স্বাভাবিক হাঁটাচলার ক্ষমতাটুকুও হারিয়েছেন। এর দায় এড়াতে পারেন না হাসপাতালের চিকিৎসকরা।’’ আদালতের রায়ের দে়ড় মাসের মধ্যে মামণিকে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যদিও ওই হাসপাতালের অধিকর্তা বলছেন, ‘‘রায়ের কপি এখনও হাতে পাইনি। অভিযোগকারিণী রোগীর কথা মনে পড়ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Paralysis Doctor Bonhooghly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE