স্নেহ: চলছে ফোঁটা দেওয়া।
সকাল থেকে বৃষ্টির বিরাম ছিল না। কিন্তু বৃষ্টি কাড়তে পারেনি ওদের আনন্দ!
রাজকুমারী, গুড়িয়ারানিদের ধান-দূর্বা উঠল ‘ভাই’দের মাথায়। ফোঁটা পড়ল কপালে। বৃষ্টির আওয়াজ ছাপিয়ে সমবেত কণ্ঠে উচ্চারিত হল— ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা’।
ওরা সকলেই হাওড়ার জয়পুরের পারবাকসির বেসরকারি হোমের আবাসিক। চাইল্ড লাইন থেকে পাঠানো প্রায় ৭০ জন মানসিক প্রতিবন্ধী মহিলা আছেন। আছে ২০ জন কিশোর। কেউ এখানে ঠাঁই পেয়েছে আদালতের নির্দেশে, কেউবা মানসিক প্রতিবন্ধী। শনিবার তারাই ফোঁটা নিল আবাসিক ‘দিদি’দের হাত থেকে।
সকাল থেকে সেজেগুজে তৈরি হয়ে গিয়েছিলেন রাজকুমারী, গুড়িয়া রানিরা। ভাইফোঁটার জন্য হোমের মাঠেই প্যান্ডেল করার পরিকল্পনা করেছিলেন হোম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দু’দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে সব পণ্ড হয়ে যায়। ফলে, হোমেরই একটি হলঘরে ভাইফোঁটার আয়োজন হয়। হোমের পক্ষ থেকে এ দিন সব মহিলা এবং কিশোরদের দেওয়া হয়েছিল নতুন পোশাক। সেই পোশাকেই তাঁরা অনুষ্ঠানে মাতেন।
ভাইফোঁটা শুরু হয় ১১টা নাগাদ। মোট কুড়িটি আসন পাতা হয়েছিল। তাতে সার দিয়ে বসেছিল কিশোররা। আসনের সামনে প্লেটে রাখা ছিল পাঁচ রকমের মিষ্টি। ওই কিশোরদের কপালে দইয়ের ফোঁটা দিয়ে গলায় ঘুনসিমালাও পরিয়ে দিলেন দিদিরা। সব দিদির থেকে প্রায় তিন দফায় ফোঁটা নিল কিশোররা। অনুষ্ঠানের শেষে ছিল পাত পেড়ে খাওয়া। মাংস-ভাতের আয়োজন করা হয়েছিল।
হোমের শৃঙ্খলাবদ্ধ আটপৌরে জীবনের বাইরে এ দিনের ব্যতিক্রমী আয়োজন যে তাঁদের খুব মনে ধরেছে তা বোঝা যাচ্ছিল রাজকুমারী, গুড়িয়ারানি এবং তাদের আবাসিক ভাইদের কথায়। রাজকুমারী বলেন, ‘‘আমরা এখানে পড়ে আছি। বাবা-মা, ভাই কে কোথায় আছে জানি না। হোমের ছেলেরাই আমার ভাই।’’ একই কথা বললেন গুড়িয়ারানি। এক কিশোর বলে, ‘‘খুব আনন্দ পেয়েছি। ফুটপাথে থাকতাম। দেখার কেউ ছিল না। বাড়ি কেমন জানতাম না। এ দিন টের পেলাম।’’
নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy