Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জগন্নাথ নন, চট্টোপাধ্যায় পরিবারে রথে পুজো হয় নারায়ণশিলার

বয়স নেহাত কম নয়, ১৪২ বছর। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বিধিচন্দ্রপুরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের প্রাচীন এই রথযাত্রা এক সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কারণ জীর্ণ হওয়ায় ভেঙে পড়েছিল রথের কাঠামো। অনেকেই ভেবেছিলেন, বোধহয় বন্ধ হয়ে গেল রথযাত্রা।

নবনির্মিত রথ।—নিজস্ব চিত্র।

নবনির্মিত রথ।—নিজস্ব চিত্র।

রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়
উদয়নারায়ণপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৫ ০১:২৫
Share: Save:

বয়স নেহাত কম নয়, ১৪২ বছর। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বিধিচন্দ্রপুরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের প্রাচীন এই রথযাত্রা এক সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কারণ জীর্ণ হওয়ায় ভেঙে পড়েছিল রথের কাঠামো। অনেকেই ভেবেছিলেন, বোধহয় বন্ধ হয়ে গেল রথযাত্রা। কিন্তু এগিয়ে আসেন গ্রামের মানুষ। তাঁদের উদ্যোগের নতুন করে তৈরি হয় রথের কাঠামো। শুরু হয় উৎসব। চট্টোপাধ্যায় পরিবারের লবর্তমান উত্তরসূরী বিমল চট্টোপাধ্যায় জানান, ১৮৭৩ সালে তাঁর পূর্বপুরুষ তিনকড়ি চট্টোপাধ্যায় এই রথ প্রতিষ্ঠা করেন। উচ্চতায় ২০ ফুট, চওড়ায় প্রায় ১০ ফুট। চাকার পরিধি ২ ফুট। পাঁচটি চূড়াবিশিষ্ট এই রথের মাঝের চূড়ায় রয়েছে পরী। তাঁকে ঘিরে চার চূড়ায় চার প্রহরী। রথের দু’টি অশ্বের লাগাম সারথির হাতে। তবে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের এই রথে জগন্নাথ চড়েন না। থাকে নারায়ণশিলা। যা জগন্নাথ বলরাম, সুভদ্রা ও রথের সারথি শ্রীকৃষ্ণ হিসাবে পুজো করা হয়। ১১৩ বছর পর ওই রথের অনেকাংশই জীর্ণ হয়ে ভেঙে পড়ে।

রথযাত্রা উৎসব কমিটির প্রাক্তন কর্মকর্তা মোহনলাল চন্দ্র বলেন, এর পর চট্টোপাধ্যায় বংশধরেরা অর্থাভাবে রথটি পুনর্নির্মাণ না করতে পারায় গ্রামবাসীরা হাল ধরেন। প্রথম দিকে তারা ১০ ফুট উচ্চতার থার্মোকলের এক রথ তৈরি করে উৎসবটি বজায় রাখেন। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন গ্রামের এক গরিব যুবক, কাঠামো মিস্ত্রি শীতল মাঝি। শীতলবাবু নিখরচায় থার্মোকলের রথটি তৈরি করে দেন। পাঁচ বছর থার্মোকলের রথটি চলার পর ১৯৯২ সালে বিধিচন্দ্রপুর গ্রামের প্রয়াত জমিদার রামপ্রসন্ন রায়ের বংশধর প্রয়াত প্রাণধন রায় ও জীবনধন রায় তিন লক্ষ টাকা ব্যয়ে বর্তমান রথটি নির্মাণ করান। যাতায়াত সমস্যার দরুন রথের উচ্চতা ১৫ ফুট করা হয়। মোহনবাবু আরও বলেন, আজও রথের বিগ্রহ নারায়ণশিলা। বর্তমানে উদয়নারায়ণপুরের বিধিচন্দ্রপুর, চিত্রসেনপুর ও ভবানীপুর গ্রামের মানুষ উৎসবে মিলিত হয়। রথযাত্রা উৎসব কমিটি উৎসবটি পরিচালনা করে। উৎসবের দিন ফুলের মালা দিয়ে রথ সাজানো হয়। রথতলায় বসা মিলনমেলায় শিশুদের জন্য ঘূর্ণ্যমান দোলা, মিকি মাউস ছাড়াও নানা মনোহারি দ্রব্য, বেতের ধামাকুলো, বাঁশের ঝুড়ি, ঝাঁঝরি, মাটির পাত্র, খাবার দোকানে মেলা জমজমাট হয়ে ওঠে। সন্ধ্যায় পুরোহিত নারায়ণ শিলাকে পুজো করেন। তারপর শতাধিক ভক্তের দড়ির টানে ও কাঁসার ঘণ্টা, শঙ্খধ্বনি, খোল করতালের তালে তালে মিছিল এগিয়ে চলে ১০ বিঘা জমি পার হয়ে বারোয়ারিতলার মাসির বাড়ির দিকে। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে জমে ওঠে বিধিচন্দ্রপুর গ্রামের সেই পুরনো রথযাত্রা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE