প্রতীকী ছবি
ডেঙ্গি প্রতিরোধে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে বারবার আবেদন করে একজনও পতঙ্গবিদ পায়নি হাওড়া পুরসভা। কিন্তু হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর একসঙ্গে দু’জন পতঙ্গবিদ পেয়ে যাওয়ায় এ বার তাঁদের নিয়ে কার্যত দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে হাওড়া পুরসভা ও হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, হাওড়া জেলার অনেকগুলি ব্লক পুরসভা এলাকার অন্তর্গত। তাই ওই ব্লকগুলির ক্ষেত্রে ডেঙ্গির লার্ভা শনাক্ত করবেন ওই পতঙ্গবিদরা। অন্য দিকে হাওড়া পুরসভার দাবি, দুই পতঙ্গবিদের মধ্যে একজনকে স্থায়ী ভাবে পুরসভায় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে দিতে হবে। কারণ হাওড়া পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ জেলার গ্রামাঞ্চলের থেকে অনেক বেশি।
হাওড়া পুরসভায় ৬৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে অধিকাংশ ওয়ার্ড ডেঙ্গিপ্রবণ হওয়ায় তৃণমূল পুরবোর্ড গঠনের পরেই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে। চুক্তির ভিত্তিতে প্রায় ৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নেওয়া হয়। একজন মেডিক্যাল অফিসার-সহ মশাবাহিত রোগ বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসক এবং একজন ফুড ইনস্পেক্টর নিয়োগ করা হয়। বাম বোর্ডের আমলে অস্থায়ী ভিত্তিতে একজন মেডিক্যাল অফিসার ছাড়া আর কেউ দায়িত্বে ছিলেন না। চলতি বছরে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করা হয় ‘আর্বান লোকাল বডি ডেঙ্গি মনিটরিং টিম’। যার চেয়ারম্যান খোদ হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী। আহ্বায়ক পদে রয়েছেন পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণাকে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ডেঙ্গির প্রকোপ কম থাকলেও তার আগের বছরগুলিতে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা হাজার পেরিয়ে গিয়েছিল। অথচ পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের কলেবর বাড়লেও ডেঙ্গির লার্ভা চেনার জন্য কোনও পতঙ্গবিদকে নিয়োগ করা হয়নি। আর তাই গত কয়েক বছরে পুরসভার কয়েক জন অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপরে ভরসা করে ডেঙ্গি অভিযান চালিয়ে গিয়েছে হাওড়া পুরসভা।
মেয়র রথীন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘আমরা শুধু নির্দিষ্ট সময় ধরে ডেঙ্গি নিয়ে সমীক্ষাই করিনি। সারা বছর ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমাদের ৩ হাজার কর্মী স্বাস্থ্য সমীক্ষা চালিয়ে গিয়েছেন। বছরভর ব্লিচিং পাউডার ও লার্ভিসাইড তেল স্প্রে করা হয়েছে। ডেঙ্গির লার্ভা চিহ্নিত করে ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে গত বছর একজনও ওই রোগে মারা যাননি।’’
মেয়র জানান, এ সব সত্ত্বেও পুরসভার পক্ষ থেকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে একাধিক বার একজন পতঙ্গবিদ চাওয়া হয়েছিল। তা হলে আরও পরিকল্পিত উপায়ে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হত। কিন্তু তা চেয়েও পাওয়া যায়নি। অন্য দিকে, মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) ভাস্কর ভট্টাচার্য্যের বক্তব্য, পুরসভার একজন পতঙ্গবিদ প্রয়োজন। তা হলে বিভিন্ন জায়গা থেকে লার্ভা সংগ্রহের পরে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে লার্ভাগুলির চরিত্র বিশ্লেষণ করা যাবে। যা বিশেষজ্ঞ ছাড়া সম্ভব নয়।
মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) বলেন, ‘‘জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে আমরা দাবি জানাব, একজন পতঙ্গবিদকে পুরসভার জন্য কাজ করতে দিতে হবে। কারণ হাওড়া শহরেই ডেঙ্গির প্রকোপ সবসময় বেশি থাকে।’’
হাওড়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর দু’জন পতঙ্গবিদকে চুক্তির ভিত্তিতে পাঠিয়েছেন ঠিকই। তাঁরা গ্রামের পাশাপাশি হাওড়া পুরসভার যে সব এলাকা গ্রামীণ অঞ্চলের সঙ্গে লাগোয়া সেখানে কাজ করবেন। হাওড়া জেলার বহু গ্রাম ডেঙ্গিপ্রবণ। সেখানে একজন পতঙ্গবিদ একা সামাল দিতে পারেবেন না। তবে যখন যেমন প্রয়োজন হবে আমরা পুরসভাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy