Advertisement
১৯ মে ২০২৪

হোম থেকে আপন ঘরে ঝাড়খণ্ডের সরযূবালা

এক হোমের আশ্রয়ে জীবন ‘দুর্বিষহ’ হয়ে উঠেছিল। চোখের সামনে সহ-আবাসিকদের উপর অত্যাচার দেখতে দেখতে বিতৃষ্ণায় ভরে গিয়েছিল মন। সেই তিনিই আর একটি হোমের সহায়তায় ঘরের লোকের কাছে ফিরতে চলেছেন।

প্রকাশ পাল
জাঙ্গিপাড়া শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৪
Share: Save:

এক হোমের আশ্রয়ে জীবন ‘দুর্বিষহ’ হয়ে উঠেছিল। চোখের সামনে সহ-আবাসিকদের উপর অত্যাচার দেখতে দেখতে বিতৃষ্ণায় ভরে গিয়েছিল মন। সেই তিনিই আর একটি হোমের সহায়তায় ঘরের লোকের কাছে ফিরতে চলেছেন। মাঝে ব্যবধান দেড় দশকের। ওই হোম কর্তৃপক্ষের চেষ্টায় এবং আইনি দফতরের মধ্যস্থতায় ভিন্ রাজ্যে নিজের বাড়ি ফিরতে চলেছেন ওই মহিলা।

পুলিশ সূত্রে খবর, ঝাড়খণ্ডের গ্রামে স্বামী-সন্তানকে নিয়ে সংসার ছিল সরযূবালার (নাম পরিবর্তিত)। বছর পনেরো আগে একদিন ছেলেকে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলা। ট্রেনে ঘুমিয়ে পড়লে কেউ তাঁর ছেলেকে তুলে নিয়ে যান। এ দিন ওদিক ঘুরতে ঘুরতে মহিলার ঠাঁই হয়েছিল হুগলির গুড়াপের দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমে। ২০১২ সালে ওই হোমে আবাসিক মহিলাদের উপর অত্যাচারের কাহিনি সামনে আসে। তাঁর উপরেও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। রাজ্য সরকার হোমটি বন্ধ করে দেয়। সেখানকার ৪২ জন আবাসিককে জাঙ্গিপাড়ার জনশিক্ষা প্রচার কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

নতুন হোমে এসে যেন নিজেকে ফিরে পান সরযূবালা। গুড়াপের হোমে গুড়িয়া নামে এক সহ-আবাসিককে ধর্ষণ করে দেহ পুঁতে ফেলার মামলায় আদালতে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হন তিনি। ওই ঘটনায় দোষী এখন যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজা ভোগ করছে। জাঙ্গিপাড়ার হোম কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এখানে বাধ্য মেয়ের মতো সব কথা শোনেন সরযূবালা। তবে মাঝেমধ্যে বাড়ির ফেরার জন্য ছটফট করতেন। হোম কর্তৃপক্ষ তাঁর বাড়িতে যোগাযোগ করেন। যদিও বাড়ি থেকে তেমন সাড়া মেলেনি। কিছু দিন ধরে হুগলি জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের (ডালসা) তরফে নিয়মিত বিভিন্ন হোম পরিদর্শন করা হচ্ছে। ওই কমিটির সদস্যরা হোমে এলে তাঁদের কাছে সরযূ জানান, তিনি বাড়ি ফিরতে চান।

ডালসার তরফে ঝাড়খণ্ডের আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের (ঝালসা) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ঝালসা এ ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করে। জানা যায়, সরযূবালার স্বামী ফের বিয়ে করেছেন। এর পরে ঝালসার সঙ্গে সরযূবালার দিদি-জামাইবাবুর যোগাযোগ হয়। তাঁরা হুগলিতে আসেন। মঙ্গলবার ডালসার সচিব সৌনক মুখোপাধ্যায় সরযূবালাকে তাঁর দিদি-জামাইবাবুর হাতে তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেন চুঁচুড়ার মহকুমাশাসকের কাছে। ডালসার বক্তব্য, মহকুমাশাসকের নির্দেশেই গুড়াপের হোম থেকে জাঙ্গিপাড়ার হোমে সরযূবালাকে পাঠানো হয়েছিল। তাই তাঁর অনুমতি চাওয়া হয়েছে।

সৌনকবাবু বলেন, ‘‘বাড়ির জন্য সরযূবালার মন কেমন করত। তাঁর সঙ্গে কথা বলেই আমরা ওঁকে বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগী হই। ও যে দিদি-জামাইবাবুর কাছে ফিরতে পারবে, এটা আনন্দের।’’

হোমের তরফে সুদেষ্ণা দাস জানান, সরযূবালা এখন ৮০ ভাগ সুস্থ। নিজের পরিচিত পরিবেশে ফিরলে তিনি আরও সুস্থ হয়ে উঠবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

woman returned Home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE