কাজ শেষ উলুবেড়িয়া কৃষক বাজারের। ছবি: সুব্রত জানা।
হাওড়া জেলায় দু’টি কিসান মান্ডি চালুর প্রক্রিয়া শুরু করল রাজ্য কৃষি বিপণন দফতর। উলুবেড়িয়া ১ এবং উদয়নারায়ণপুর এই দু’টি ব্লকে দু’টি কিসান মান্ডির নির্মাণকার্য কাজ শেষ হয়েছে কয়েক মাস আগে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দূর নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে এগুলির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করেছেন। কিন্তু উদ্বোধন হয়ে গেলে মাঝে মাঝে ন্যায্য মূল্যে ধান ও আলু কেনা ছাড়া বাকি সময় দু’টি কিসান মান্ডি বন্ধ থাকে। পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে এখানেন সপ্তাহ জুড়ে কৃষিজাত পণ্য কেনাবেচা করতে পারবেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
এই দু’টি কিসান মান্ডি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হাওড়া জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটিকে। এই বাজার কমিটির হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে কিষাণমান্ডি দু’টির মালিকানা হস্তান্তর করে দিয়েছে রাজ্য কৃষি বিপণন দফতর। বাজার কমিটির সভাপতি হলেন জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস। তিনি বলেন, ‘‘কারা কিষাণমান্ডিতে স্টল পাবেন, সেইসব আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে সরকারের তরফে নির্দেশাবলীও আমাদের দেওয়া হয়েছে। তা মেনেই সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে। তারপরেই স্টল বিলি শুরু হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প কিসান মান্ডি। রাজ্যের ৩৪১টি ব্লকে একটি করে কিসান মান্ডি হওয়ার কথা। প্রথম পর্যায়ে ৯৫টি ব্লকে মান্ডি তৈরির কাজ শুরু হয়। ৮৮টি মান্ডির কাজ শেষ। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৬টি মান্ডি তৈরির কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের ৭১টি মান্ডির উদ্বোধনও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেগুলিতে শুধু ধান ও আলু কেনাবেচা হয়। সেগুলি পুরোদস্তুর চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে কৃষি বিপণন দফতর। সোমবার হুগলির চুঁচুড়ায় এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়। বৈঠকে ছিলেন কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নাও। মূলত, হুগলি জেলার পাঁচটি কিসান মান্ডি চালু করার ব্যাপারে আলোচনা করতে অরূপবাবু চুঁচুড়ায় আসেন। তিনি বলেন, ‘‘আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে ৭১টি কিসান মান্ডি পুরোপুরি চালু করতে জেলাশাসকদের উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে।’’
কী ভাবে চলবে কিসান মান্ডিগুলি?
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রের খবর, রাজ্য বিপণন পর্ষদের অধীনে থাকা বিভিন্ন জেলার নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটিগুলিই কিসান মান্ডি চালাবে। উল্লেখ্য, রাজ্য বিপণন পর্যদ রাজ্য কৃষি বিপণন দফতরেরই অধীন একটি স্বশাসিত সংস্থা। এই নিয়ম মেনেই উলবেড়িয়া ১ এবং উদয়নারায়ণপুর এই দু’টি ব্লকের কিসান মান্ডি চালানোর দায়িত্ব জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটিকে দেওয়া হয়েছে।
হাওড়া জেলায় উলুবেড়িয়া ১ এবং উদয়নারায়ণপুর ব্লক ছাড়াও আমতা ১, শ্যামপুর ২ ব্লকে কিসান মান্ডি তৈরির কাজ চলছে। বাগনান ১ ব্লকেও মান্ডি তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। তবে এর ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ওই ঠিকাসংস্থাকে বাদ দেওয়া হয়। সেই কারণে গত এক বছর ধরে বাগনানে কিষাণ মান্ডি তৈরির কাজ বন্ধ আছে। রাজ্য কৃষি বিপনন দফতর সূত্রের খবর, বাগনানের জন্য অন্য ঠিকা সংস্থা নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে। নির্বাচন হয়ে গেলেই ফের বাগনানের কিসান মান্ডির নির্মাণকাজ শুরু হবে।
কী কী ব্যবস্থা থাকবে মান্ডিতে ?
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রের খবর, এখানে থাকবে স্টল, যেগুলি ভাড়া বা লিজ নিতে পারবেন পাইকারি সব্জি ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কাছে সরাসরি চাষিরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করবেন। খুচরো ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পণ্য কিনে তা গ্রামের বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। চাষিরা যদি এখানে বসে তাঁদের পণ্য বিক্রি করতে চান, তাঁদেরও জায়গা ভাড়া বা লিজে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে। থাকবে নিলামঘর, ছোট গাড়ি রাখার জায়গা।
উলুবেড়িয়া এবং উদয়নারায়ণপুর যে দু’টি কিসান মান্ডি তৈরি হয়েছে তা জনবসতি থেকে বেশ দূরে। ফলে চাষি বা ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন, এখানে পণ্য আনা বা এখান থেকে পণ্য কিনে নিয়ে যাওয়ার খরচ বেশি পড়বে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘মান্ডি পর্যন্ত সব্জি আনার জন্য চাষিদের যদি বাড়তি খরচ হয় তা ভর্তুকি হিসাবে দেওয়া যায় কিনা তা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে স্থির করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy