এখানেই কাজ শুরু হয়েছিল।—নিজস্ব চিত্র।
দেখতে দেখতে পাঁচ মাস পার। ঠিকাদার সংস্থা কৃষি বিপণন দফতরের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করায় বাগনান-১ ব্লকে থমকে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাবিত কিষান মান্ডি তৈরির কাজ।
চলতি বছরের গোড়ায় ওই কিষাণ মান্ডি তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এবং পরে নির্মাণ সামগ্রী পরীক্ষা করিয়ে ঠিকা সংস্থাকে বাতিল করে দেয় কৃষি বিপণন দফতর। নতুন ঠিকা সংস্থা নিয়োগ করার জন্য টেন্ডারও করা হয়। কিন্তু ঠিকা সংস্থাটির কর্ণধারেরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। তার জেরে থমকে নির্মাণ কাজ।
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নমুনা পরীক্ষা করানোর পরে ভেজালের প্রমাণ মিলেছিল। কিন্তু মামলা দায়ের হওয়ার পরে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দেয় নমুনা ফের পরীক্ষা করাতে হবে খড়্গপুর আইআইটি থেকে। ওই দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “আদালতের নির্দেশে আমরা নতুন ঠিকা সংস্থা নির্বাচনের প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছি। নতুন ভাবে নমুনা পরীক্ষার পরে রিপোর্ট আদালতে পেশ করা হবে। এর পরে আদালত যে রায় দেবে সেই মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ হবে।”
ঠিকা সংস্থার কর্ণধার দেবকুমার বসু অচলাবস্থার জন্য দায়ী করেছেন কৃষি বিপণন দফতরকেই। তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ মাস ধরে কাজ চলছিল। ওই দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা প্রতিটি পর্যায়ে কাজটি পরিদর্শন করেন। তারপরেও দুর্নীতির দায় কী করে আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হল বুঝতে পারিনি। মাত্র একটি জায়গা থেকে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে শাস্তি দিল ওই দফতর। তাই সুবিচার চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হই। বিচারপতি যে রায় দেবেন মাথা পেতে নেব।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই রাজ্যের ৩৪১টি ব্লকের প্রতিটিতে একটি করে কিষাণ মান্ডি তৈরির পরিকল্পনা করে রাজ্য সরকার। তা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় কৃষি বিপণন দফতরকে। রাজ্য জুড়ে প্রথম পর্যায়ে ৯৫টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩৫টি কিষাণ মান্ডি তৈরির কাজ চলছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে যে ৩৫টি কিষাণ মান্ডি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে বাগনান-১ ব্লকেরটি।
হিজলকে কৃষি দফতরের অধীন বীজ খামারের পাঁচ একর জমিতে কিষাণ মান্ডি তৈরির কাজ শুরু হয় চলতি বছরের জানুয়ারিতে। কাজ শুরুর দিন থেকে দেড় বছরের মধ্যে এটি চালু হওয়ার কথা। এখানে কৃষিপণ্য বিক্রির স্টল, গুদামঘর, ওজনঘর, হিমঘর, পণ্যবাহী গাড়ি রাখার জায়গা প্রভৃতি থাকার কথা। এখানে একদিকে যেমন চাষিরা উৎপাদিত পণ্য নিয়ে সরাসরি স্টলে বসে বিক্রি করতে পারবেন, অন্য দিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সরাসরি চাষিদের থেকে পণ্য কিনে নিয়ে যেতে পারবেন। ফড়েদের উপদ্রব কমবে ধারণা সরকারি কর্তাদের। কিষাণ মান্ডি তৈরির জন্য খরচ ধরা হয় সাড়ে ছ’কোটি টাকা।
কিন্তু কাজ শুরুর পাঁচ মাসের মাথায় এই কিষাণ মান্ডির নির্মাণকাজ নিয়ে ঠিকা সংস্থার বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা কৃষি বিপণন দফতরে অভিযোগ জানান। তারই ভিত্তিতে গত ৩০ মে কৃষি বিপণনমন্ত্রী নিজে এসে কাজ পরিদর্শন করেন। বালি-সিমেন্টের মিশ্রণের নমুনাও সংগ্রহ করেন। তা পাঠানো হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কৃষি বিপণন দফতর থেকে পরে জানানো হয়, নিকৃষ্ট মানের জিনিসপত্র দিয়ে যে নির্মাণকাজ হচ্ছিল, নমুনা পরীক্ষায় তার প্রমাণ মিলেছে। তারপরেই কেন এই কাজ থেকে ঠিকা সংস্থাকে বাদ দেওয়া হবে না, তার কারণ দেখানোর জন্য সংস্থার কর্ণধারকে চিঠি পাঠানো হয়। উত্তর সন্তোষজনক না হওয়ায় ঠিকা সংস্থাকে বাতিল করে নতুন করে ঠিকা সংস্থা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তার পরেই ওই ঠিকা সংস্থা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। দু’পক্ষের এই বিবাদের জেরে কিষাণ মান্ডি তৈরিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় হতাশ স্থানীয় চাষিরা। তাঁদের মধ্যে অনেকেই জানান, তাঁরা এখানে স্টল নিয়ে ব্যবসা করবেন বলে ভেবেছিলেন। মামলা মিটে যাওয়ার পরে কবে থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হবে আপাতত সে দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তাঁদের আর কিছুই করার নেই।
বাগনান-১ ব্লকের পরে আমতা-১ ব্লকের কিষাণ মান্ডির নির্মাণকাজও পরিদর্শন করেছিলেন কৃষি বিপণনমন্ত্রী। সেখানেও নির্মাণকাজকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় কিছু দিন বন্ধ থাকার পর ফের নির্মাণকাজ শুরু হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy