হাওড়ার সরকারি গ্রন্থাগারগুলিতে যাবতীয় কাজকর্ম সারা এবং মজুত বইপত্রের তালিকা আধুনিক পদ্ধতিতে নথিভুক্ত করার জন্য বছর পাঁচেক আগে থেকে কম্পিউটার বসানো শুরু করেছিল হাওড়া জেলা গ্রন্থাগার দফতর। এ ছাড়াও, গ্রামীণ এলাকার মানুষের মধ্যে ইন্টারনেট পরিষেবার প্রসারের জন্যও ওই কম্পিউটার ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্প। প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাবে জেলার বহু গ্রন্থাগারেই পড়ে থেকে নষ্ট হতে বসেছে কম্পিউটারগুলি।
সমস্যার কথা মেনে নিয়ে জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক তুষার চট্টোপাধ্যায় জানান, শূন্যপদগুলি পূরণ হলে এই সমস্যা থাকবে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
হাওড়ায় একটি জেলা গ্রন্থাগার, ১২টি শহর গ্রন্থাগার-সহ মোট ১৩২টি গ্রন্থাগার রয়েছে। ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা গ্রন্থাগার ছাড়াও সব কটি শহর গ্রন্থাগার ও ২৪টি গ্রামীণ গ্রন্থাগারের প্রতিটিতে তিনটি করে কম্পিউটার দেওয়া হয়েছিল। সেগুলি থেকেই ইন্টারনেট ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু জেলা গ্রন্থাগার ও কয়েকটি শহর গ্রন্থাগার ছাড়া বাকিগুলিতে কম্পিউটার শুধুমাত্র সাজানো রয়েছে বললেই চলে। ইন্টারনেট পরিষেবা এখনও চালু হয়নি।
উলুবেড়িয়া মহকুমায় উলুবেড়িয়া শহর পাঠাগার, বাগনানের পানিত্রাসের শরৎ স্মৃতি গ্রন্থাগার এবং আমতা পাবলিক লাইব্রেরি— এই তিনটি শহর গ্রন্থাগার। এ ছাড়াও শ্যামপুরের রাজীবপুর অগ্রণী সঙ্ঘ পাঠাগার, মুগকল্যাণের পল্লিভারতী গ্রন্থাগার, উদয়নারায়ণপুর গ্রন্থাগার, গড়ভবানীপুর গ্রন্থাগারের মতো কয়েকটি বড় গ্রামীণ গ্রন্থাগার রয়েছে এই মহকুমায়। সব ক’টি শহর গ্রন্থাগার ও গ্রামীণ গ্রন্থাগারে কম্পিউটার রয়েছে। কিন্তু তাতে কাজ হয় না বললেই চলে।
পানিত্রাসের শরৎ স্মৃতি গ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সেখানে কাজ চালাচ্ছেন দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। তাঁদের মধ্যে একজন অবসর নেওয়ার মুখে। অন্য জন যুবক। ওই কর্মী বলেন, ‘‘কম্পিউটারে গ্রন্থাগারের ছোটখাটো কাজ করি। তবে কম্পিউটারে বইয়ের সূচি বানানোর মতো কাজের জন্য বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন।’’ আমতা পাবলিক লাইব্রেরিতে বর্তমানে দু’জন কর্মী রয়েছেন। এক জন গ্রন্থাগার সহায়ক। অন্য জন করণিক। এখানে গ্রন্থাগারের কিছু কাজ কম্পিউটারে হয়। প্রায় একই অবস্থা রাজীবপুর অগ্রণী সঙ্ঘ পাঠাগার, মুগকল্যাণের পল্লিভারতী গ্রন্থাগার-সহ প্রায় সবগুলিতেই। তবে, কোথাও ইন্টারনেট পরিষেবা স্থায়ী ভাবে চালু হয়নি। কয়েকটি জায়গায় ‘ডঙ্গল’ ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হলেও সেগুলির সংযোগ পাওয়াই মুশকিল বলে জানান কর্মীরা।
জেলা গ্রন্থাগার দফতরের এক কর্তা জানান, গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলিতে কম খরচে ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর জন্যেও কম্পিউটারগুলি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা না হওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। বর্তমানে স্কুল ও কলেজ স্তরের পঠনপাঠনের অনেক বই অনলাইনে পাওয়া যায়। সেগুলির খোঁজ করতে ছাত্রছাত্রীদের সাইবার ক্যাফেতে যেতে হচ্ছে। খরচ হচ্ছে বেশি। একই সঙ্গে বিভিন্ন কলেজের ভর্তির ফর্ম পেতেও ভরসা সেই সাইবার ক্যাফে।
পানিত্রাস এলাকার এক ছাত্র বলেন, ‘‘আমি এ বার তিনটি কলেজে ভর্তির জন্য সাইবার ক্যাফে থেকে অনলাইনে ফর্ম পূরণ করেছি। খরচ হয়েছে ৩০০ টাকার বেশি। শরৎ স্মৃতি পাঠাগারে ইন্টারনেট পরিষেবা থাকলে এত টাকা খরচ হতো না।’’
পডু়য়ারা চান, দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে কম্পিউটারে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy