Advertisement
E-Paper

ভোটের দেওয়াল-লিখনে বাড়ছে পেশাদারিত্ব 

সকাল থেকে ফোন বাজে। কদর বাড়ে। বরাত মেলে। দিনের দিন নগদ। ৫০০ থেকে ৭০০, হাজার বা আরও বেশি টাকা।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯ ০৩:০৯
পেশাদার দেওয়াল-লিখিয়ে।—ছবি সংগৃহীত।

পেশাদার দেওয়াল-লিখিয়ে।—ছবি সংগৃহীত।

ভোট এলেই ওঁরা খুশি।

সকাল থেকে ফোন বাজে। কদর বাড়ে। বরাত মেলে। দিনের দিন নগদ। ৫০০ থেকে ৭০০, হাজার বা আরও বেশি টাকা।

ওঁরা পেশাদার দেওয়াল-লিখিয়ে। সারা বছর যে যাঁর নিজের কাজে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু ভোটের ঢাকে কাঠি পড়লেই রাজনৈতিক দলগুলির কাছ থেকে মেলে বাড়তি রোজগারের হাতছানি। রং-তুলি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।

যেমন, জাঙ্গিপাড়ার রসিদপুরের অমল কুণ্ডু। এখন নাওয়া-খাওয়ার সময় পাচ্ছেন না। স্ক্রিন-প্রিন্টিংয়ের কাজ করেন সারা বছর। এখন দেওয়াল-লেখার ব্যস্ততায় তাড়ায় সেই কাজ আপাতত বন্ধ। সেই ১৯৯৮ সাল থেকে ভোটের দেওয়াল-লেখার কাজ করছেন। শুধু রসিদপুরেই নয়, ভোটের দেওয়াল লিখতে তাঁর ডাক পড়ছে শহরাঞ্চলেও।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অমলবাবুর কথায়, ‘‘শহরের দিকে রোজগারটা কিছুটা ভাল হয়। যাঁরা রং নিজেরা কিনে দেন, সে ক্ষেত্রে তাঁদের শুধু লিখে দেওয়াটাই আমার কাজ। আর যাঁরা রং সমেত পুরো বরাত দেন, তাঁদের থেকে বেশি টাকা মেলে। রঙের দাম অনেক। লেখার কাজে গড়ে দিনে ৫০০ টাকা রোজগার হয়। এটা শুধু মজুরি। রং কিনতে হলে মজুরির সঙ্গে রংয়ের দামটা যোগ করি।’’

অমলবাবু একা কাজ করেন। চণ্ডীতলার পশুপতি দাসের আবার দু’জন সহযোগী রয়েছে। পশুপতিবাবু পেশায় অঙ্কন-শিক্ষক। তিনিও এখন সেই কাজ বন্ধ রেখে দেওয়াল-লেখায় মেতেছেন। ১৯৯৫ সাল থেকে এই কাজে তাঁর অভিজ্ঞতা। শুরু করেছিলেন কংগ্রেসের দেওয়াল-লেখা দিয়ে। এ বার শাসকদলের প্রার্থীর নাম ঘোষণার দিন থেকেই তাঁর ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। পশুপতিবাবু বলেন, ‘‘বহু জায়গা থেকে ডাক আসে। কয়েক বছর আগের ভোটে গরলগাছা, নৈটি, উত্তরপাড়ায় গিয়েও দেওয়াল লিখে এসেছি। রাজনৈতিক দলের চাহিদামতো কাজ করি।’’

গত বছর পঞ্চায়েত ভোট গিয়েছে। এ বার লোকসভা। সামনের বছর পুরসভা ভোট। তার পরের বছর আবার বিধানসভা নির্বাচন। ফলে, ভোট মরসুমে কোনও বছরই বসে থাকতে হচ্ছে না অমলবাবু, পশুপতিবাবুদের। সিপিএমে এক সময় বহু পোড়খাওয়া কর্মী ছিলেন, যাঁরা নিজেরাই ভাল দেওয়াল লিখতেন। কিন্তু এখন সেই সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে বলে দলের নেতারা মানছেন। তাই তাঁদের পেশাদার দেওয়াল-লিখিয়েদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। একই সমস্যার কথা মানছে তৃণমূল-বিজেপিও।

চণ্ডীতলার তৃণমূল নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দলের ছেলেরা যতই লিখুক, পেশাদারদের দিয়ে দেওয়াল লেখালে অনেক দ্রুত আর ভাল কাজ হয়।’’ বিজেপি নেতা স্বপন পাল অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের প্রার্থী ঘোষণা না-হলেও কর্মীরা অনেক জায়গাতেই দেওয়াল দাগিয়ে রেখেছেন। না হলে দেওয়াল দখল হয়ে যাবে। ঘোষণা হলে দেওয়াল লেখা শুরু হয়ে যাবে। আমাদের দলে এক সময় দেওয়াল লেখার কাজ শেখানোর জন্য কর্মীদের কর্মশালা হত।’’

লড়াই এ বার চতুর্মুখী হতে চলেছে। ফলে, জেলায় কংগ্রেস ও বিজেপি প্রার্থী ঘোষণা করলে দেওয়াল লেখার বরাত আরও বেশি মিলবে বলে আশাবাদী ওই লিখিয়েরা। হুগলির বাদপুরের দেওয়াল-লিখিয়ে জিয়া মুন্সি যেমন বলছেন, ‘‘এরপর দেওয়াল লেখা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মতো আমাদের শিল্পীদের মধ্যেই জোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে।’’

Lok Sabha Election 2019 Wall Writers Election Campaign professionalism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy