জনতার হাত থেকে এক প্রহৃতকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: দীপঙ্কর দে।
মাস ঘুরতেই ফের গুজবের জেরে গণপিটুনি!
একমাস আগেই ‘ছেলেধরা’ গুজবে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছিল হুগলি বলাগড়, বর্ধমানের কালনা, নদিয়ার হরিণঘাটা-সহ রাজ্যের নানা জায়গায়। পরিস্থিতি সামলাতে গুজবে ইন্ধন দিলেই কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ করপুরকায়স্থ । পুলিশ মাইক নিয়ে গুজবে কান না-দিতে প্রচারেও নামে। কিন্তু এক মাস পরে রবিবার এবং সোমবার— দু’দিনে একই ঘটনা হুগলিরই হরিপালের দু’জায়গায়। গণপিটুনিতে জখম হলেন চার জন। ঘটনা সামাল দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশও। সোমবার বিকেল পর্যন্ত পর্যন্ত হামলাকারীদের কাউকে পুলিশ ধরতে পারেনি।
হুগলির পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন অবশ্য জানিয়েছেন, রবিবার রাতের ঘটনায় নির্দিষ্ট ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ হরিপালের দ্বারহাট্টা পঞ্চায়েতের সাহামণিতলায় অহল্যাবাঈ রোডে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করে একটি দোকানে আটকে রাখে এক দল গ্রামবাসী। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই যুবককে উদ্ধারে প্রথমে বাধা পায়। পুলিশকর্মীদের লক্ষ করে ইট ছোড়া হয়। লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ সিঙ্গুরের বলরামবাটির বাসিন্দা, আহত ওই যুবককে উদ্ধার করে। ঘটনার জেরে বেশ কিছুক্ষণ অহল্যাবাঈ রোড কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
অন্য ঘটনাটি ঘটে রবিবার রাতে হরিপালের বাহিরখণ্ড পঞ্চায়েতের নন্দকুটিতে। তারকেশ্বরের বালিগোড়ি এলাকার তিন যুবক একটি গাড়িতে ঘুরতে বেরিয়ে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ নন্দকুটিতে গ্রামের রাস্তায় গাড়ি ঘোরাচ্ছিলেন। তখনই ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে এক দল গ্রামবাসী তাঁদের মারধর করে। গাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের উপরেও চড়াও হয় জনতা। পুলিশের সঙ্গে জনতার একপ্রস্ত ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য অর্ণব দাস, প্রদীপ দাস এবং শেখ হাসান নামে ওই তিন যুবককে উদ্ধার করে পুলিশ। হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতালে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা হয়।
অর্ণব প্রদীপের কাকা। গাড়িটি অর্ণবদেরই। অর্ণবের বাবা রাজেশ দাস হরিপাল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। জেলা পুলিশের আধিকারিকরা জানান, ওই অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা ছাড়াও পুলিশকর্মীদের উপর হামলার অভিযোগেও মামলা হয়েছে। কয়েক জনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। রাজেশবাবু বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগে ওদের মারধর করা হয়। এমন ঘটনা বন্ধ করতে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে অলিগলিতে প্রচার করা দরকার।’’
বস্তুত, এর আগে গত মাসে হুগলিরই বলাগড়ে শিশুচোর সন্দেহে জনতার হাতে আক্রান্ত হন কল্যাণীর স্কুলশিক্ষিকা অপর্ণা ঘোষ এবং তাঁর বৃদ্ধা মা। মারধর করে আগুন লাগানো হয় তাঁদের গাড়িতে। সেই ঘটনার আগে-পরে রাজ্যের আরও কিছু এলাকাতেও গুজবের জেরে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। তার পরে পুলিশ প্রচার চালালেও হরিপালের ঘটনা কেন এড়ানো গেল না?
জেলা পুলিশের দাবি, গুজবের জেরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে জেলার সব জায়গার মতো হরিপালেও প্রচার চালানো হয়। তবে, স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, বলাগড়ের ঘটনার পরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় পুলিশি প্রচারে ঢিলেমি এসেছিল। সেই ফাঁক গলেই হরিপালে গুজব ফিরে আসে।
পুলিশ জানিয়েছে, এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য ফের প্রচার চালানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy