বাড়িতে ঢুকে ‘প্রেমিকা’র সামনেই তাঁর স্বামীকে কাটারি দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানোর অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধ। আর্ত-চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে দম্পতির দুই শিশুসন্তান এসে দেখল, রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছেন বাবা। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির ত্রিবেণির মনসাতলায়। জখম অভিজিৎ সরকার আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্ত রবিন বৈদ্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিজিতের স্ত্রী স্বপ্না এবং স্বপ্নার মাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
বছর চৌত্রিশের অভিজিতের বাড়ি মনসাতলার বৈকুন্ঠপুরে। তবে, স্ত্রী এবং ৮ বছরের মেয়ে ও ৬ বছরের ছেলেকে নিয়ে কাছেই ভাড়াবাড়িতে থাকেন। অভিজিৎ পেশায় রাজমিস্ত্রী। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, জিরাটের হাসিফপুরের বাসিন্দা রবিনের সঙ্গে স্বপ্নার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে চলতি বছরের গোড়ায় গ্রিল কারখানার কর্মী রবিনের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন স্বপ্না। মাস তিনেক পরে অভিজিৎ স্ত্রীকে বুঝিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ অভিজিতের বাড়িতে এসে স্বপ্নার সঙ্গে গল্প করছিল রবিন। অভিজিৎ বাড়িতে ছিলেন না। তাঁদের ছেলেমেয়ে পাশের ঘরে খেলছিল। অভিযোগ, রাত আটটা নাগাদ অভিজিৎ ঘরে ঢুকতেই রবিন তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কাটারির কোপে তাঁর মাথার পিছন দিক এবং ঘাড় ফালাফালা করে দেয়। হাতেও কোপ মারে। তার পরে সাইকেল নিয়ে পালায়।
কাছেই স্বপ্নার বাপের বাড়ি। ঘটনার কথা তিনি ফোন করে মা যূথিকা সর্দারকে জানান। যূথিকা চলে আসেন। চেঁচামেচিতে প্রতিবেশীরাও জড়ো হন। খবর পেয়ে মগরা থানার পুলিশও পৌঁছয়। অভিজিতকে মগরা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসকেরা জানান, ক্ষতস্থান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। হাতের শিরাও কেটেছে।
অভিজিতের মা কাননবালা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্বপ্না, রবিন, যূথিকার নামে। তার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। বুধবার ধৃতদের চুঁচুড়া আদালতে তোলা হয়। রবিনকে ৩ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। স্বপ্না ও যুথিকাকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। কাননবালা বলেন, ‘‘বৌমা প্রেমিকের সঙ্গে মিলে ছেলেকে খুনের চক্রান্ত করবে, ভাবতে পারিনি।’’ যাবতীয় দোষ ‘প্রেমিকের’ ঘাড়ে চাপিয়েছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্বপ্না। তাঁর দাবি, ‘‘রবিন যে কাটারি এনেছে, ও যে এমন কাণ্ড ঘটাবে, ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি। ওর শাস্তি হোক।’’
হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ধৃত যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জখমের স্ত্রীর বক্তব্য যাচাই করা দেখা হবে।’’